শিরোনাম
◈ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা কী, কেন এটি এত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু? ◈ নিউইয়র্কে ২০ তলা আবাসিক ভবন ধসে পড়‌লো ◈ নারী বিশ্বকাপ: বিকা‌লে বাংলা‌দেশ- পাকিস্তান মুখোমুখি  ◈ গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ডোনাল্ড ট্রা‌ম্পের প‌রিকল্পনায় উভয় সংকটে নেতানিয়াহু? ◈ আ‌মে‌রিকা সরকা‌রের ‌বেতনভুক্ত দেড় লা‌খের বে‌শি কর্মচারী চাকরী ছে‌ড়ে দি‌লেন ◈ চ‌্যা‌ম্পিয়ন্স লি‌গে আর্সেনালের ২ গো‌লে জয়, মোনাকোর কা‌ছে হোঁচট খে‌লো ম‌্যান‌চেস্টার সি‌টি ◈ তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই : হুমায়ুন কবীর ◈ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আবারও লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি জ্যাকবসন, তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের জল্পনা ◈ ক্রিকেট বো‌র্ডের নির্বাচন নিয়ে বিরাট কোহলিকে ফোন, অ‌ভি‌যোগ ক্রীড়া উপ‌দেষ্টার ◈ রা‌তে সি‌রি‌জের প্রথম ম‌্যা‌চে বাংলা‌দেশ-আফগা‌নিস্তান মু‌খোমু‌খি

প্রকাশিত : ০২ অক্টোবর, ২০২৫, ০৯:১৭ সকাল
আপডেট : ০২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৪৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডাক্তারদের হিজিবিজি হাতের লেখা নিয়ে ভারতের আদালতের কড়া নির্দেশ

যে যুগে বেশিরভাগ মানুষ কি-বোর্ড ব্যবহার করে, সেখানে হাতের লেখার গুরুত্ব আর কতটুকু? কিন্তু ভারতের আদালত বলছে, গুরুত্ব আছে। বিশেষ করে, লেখক যদি হন একজন ডাক্তার। ডাক্তারদের দুর্বোধ্য বা 'প্যাঁচানো' হাতের লেখা নিয়ে রসিকতার শেষ নেই। বলা হয়, তাদের লেখা নাকি শুধু ওষুধের দোকানের লোকেরাই বোঝেন।

এই ঠাট্টা ভারতে যেমন প্রচলিত, তেমনি বিশ্বের অন্য দেশেও।

তবে সম্প্রতি পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের এক আদেশে স্পষ্টাক্ষরে লেখার গুরুত্বের বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। আদালত বলেছে, "সহজে পাঠযোগ্য ব্যবস্থাপত্র একটি মৌলিক অধিকার", কারণ এটি জীবন-মৃত্যুর ব্যবধান গড়ে দিতে পারে।

আদালতের এই আদেশ এমন এক মামলায় এসেছে, যার সঙ্গে লেখালেখির কোনো সম্পর্কই ছিল না। মামলাটি ছিল ধর্ষণ, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে।

বিচারপতি জসগুরুপ্রীত সিং পুরি এক নারীর আনা অভিযোগে অভিযুক্ত এক ব্যক্তির জামিনের আবেদন শুনছিলেন।

ওই নারীর অভিযোগ ছিল, অভিযুক্ত ব্যক্তি সরকারি চাকরির লোভ দেখিয়ে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, ভুয়া সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এবং তাকে যৌন নির্যাতন করেছেন।

অন্যদিকে, অভিযুক্ত ব্যক্তি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের মধ্যে সম্মতিসূচক সম্পর্ক ছিল এবং টাকার বিবাদ থেকেই এই মামলা করা হয়েছে।

বিচারপতি পুরি বলেন, তিনি যখন ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদনটি দেখেন, তখন লেখাটি তার কাছে দুর্বোধ্য মনে হয়। প্রতিবেদনটি লিখেছিলেন একজন সরকারি ডাক্তার।

তিনি তার আদেশে লেখেন, "এই লেখা আদালতের বিবেককে নাড়া দিয়েছে, কারণ একটি শব্দ বা অক্ষরও পড়ার মতো ছিল না।"

বিবিসি রায়ের একটি কপি দেখেছে, যেখানে ওই প্রতিবেদন এবং দুই পৃষ্ঠার একটি ব্যবস্থাপত্রও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ডাক্তারের লেখা অস্পষ্ট বা হিজিবিজি ।

বিচারপতি পুরি আরও লেখেন, "প্রযুক্তি ও কম্পিউটার যখন এত সহজলভ্য, তখনো সরকারি চিকিৎসকেরা হাতে এমন ব্যবস্থাপত্র লিখছেন, যা ওষুধের দোকানের বিক্রেতা ছাড়া হয়তো আর কেউই পড়তে পারে না—এটা খুবই হতাশাজনক।"

আদালত সরকারকে মেডিকেল কলেজের পাঠ্যসূচিতে হাতের লেখার ক্লাস অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি, দুই বছরের মধ্যে ডিজিটাল ব্যবস্থাপত্র ব্যবস্থা চালু করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। যত দিন তা না হচ্ছে, তত দিন সব ডাক্তারকে বড় হাতের অক্ষরে (ক্যাপিটাল লেটার) স্পষ্টভাবে ব্যবস্থাপত্র লিখতে হবে বলে নির্দেশ দেন বিচারপতি পুরি।

ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) প্রেসিডেন্ট ড. দিলীপ ভানুশালী বিবিসিকে বলেন, তারা এই সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে ইচ্ছুক। এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা তিন লাখ ৩০ হাজারের বেশি।

তিনি বলেন, বড় শহরগুলোতে চিকিৎসকেরা এখন ডিজিটাল ব্যবস্থাপত্র ব্যবহার করছেন। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে বা ছোট শহরগুলোতে স্পষ্ট ব্যবস্থাপত্র পাওয়া খুবই কঠিন। তিনি আরও বলেন, "এটা সবারই জানা যে অনেক ডাক্তারের হাতের লেখা খারাপ। এর কারণ হলো, বেশিরভাগ চিকিৎসকই খুব ব্যস্ত থাকেন, বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর প্রচণ্ড চাপ থাকে।"

ড. দিলীপ যোগ করেন, "আমরা আমাদের সদস্যদের সরকারি নির্দেশনা মেনে বড় হাতের অক্ষরে ব্যবস্থাপত্র লিখতে সুপারিশ করেছি, যাতে রোগী ও বিক্রেতা উভয়েই তা পড়তে পারে। যে ডাক্তার দিনে সাতজন রোগী দেখেন, তার পক্ষে এটা করা সম্ভব। কিন্তু যিনি দিনে ৭০ জন রোগী দেখেন, তার জন্য এটা কঠিন।"

ডাক্তারদের দুর্বোধ্য হাতের লেখা নিয়ে ভারতের আদালতের অসন্তোষ এটাই প্রথম নয়। এর আগেও ওডিশা হাইকোর্ট ডাক্তারদের 'জিগজ্যাগ' বা 'আঁকাবাঁকা' লেখার সমালোচনা করেছিল। এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারকেরাও এমন "জঘন্য হাতের লেখার" কারণে প্রতিবেদন পড়া যাচ্ছে না বলে আক্ষেপ করেছিলেন।

তবে গবেষণায় এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি যে ডাক্তারদের হাতের লেখা অন্যদের চেয়ে খারাপ।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল বিষয়টি সৌন্দর্য বা সুবিধা নয়। একটি ব্যবস্থাপত্রে যদি অস্পষ্টতার সুযোগ থাকে বা ভুল ব্যাখ্যার অবকাশ তৈরি হয়, তবে তার ফল গুরুতর, এমনকি মর্মান্তিকও হতে পারে।

ইনস্টিটিউট অব মেডিসিনের (আইওএম) ১৯৯৯ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর চিকিৎসাজনিত ভুলের কারণে অন্তত ৪৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, যা প্রতিরোধ করা যেত। এর মধ্যে সাত হাজার মৃত্যুর কারণ ছিল দুর্বোধ্য হাতের লেখা।

অতি সম্প্রতি স্কটল্যান্ডে এক নারীকে চোখের শুষ্কতার সমস্যার জন্য ভুল করে পুরুষদের বিশেষ রোগের ক্রিম দেওয়ায় তার চোখে রাসায়নিক ক্ষত তৈরি হয়।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, "ওষুধের ভুল প্রয়োগের কারণে ভয়াবহ ক্ষতি ও মৃত্যু হচ্ছে" এবং "ইলেকট্রনিক ব্যবস্থাপত্র ব্যবস্থা চালু করা গেলে ভুলের হার ৫০ শতাংশ কমানো সম্ভব"।

ভারতে দুর্বোধ্য হাতের লেখার কারণে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়, তার নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। তবে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশে ব্যবস্থাপত্র ভুল পড়ার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও অতীতে ঘটেছে।

যেমন, এক নারীকে ব্যথানাশক ওষুধের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একই রকম নামের ডায়াবেটিসের ওষুধ ভুল করে খাওয়ার পর তার খিঁচুনি শুরু হয়।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা শহরের ফার্মেসি মালিক চিলুকুরি পরমাত্মা বিবিসিকে বলেন, ২০১৪ সালে জ্বরের জন্য ভুল ইনজেকশন দেওয়ায় নয়ডার এক তিন বছরের শিশুর মৃত্যুর খবর পড়ে তিনি হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেন।

হাতে লেখা ব্যবস্থাপত্র পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার দাবিতে তার এই আন্দোলন সফল হয়।

২০১৬ সালে মেডিকেল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া আদেশ দেয়, "প্রত্যেক চিকিৎসককে জেনেরিক নামে এবং স্পষ্টাক্ষরে, বিশেষত বড় হাতের অক্ষরে, ওষুধের নাম লিখতে হবে।"

২০২০ সালে ভারতের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার চৌবে সংসদকে জানান, এই আদেশ লঙ্ঘনের জন্য রাজ্যগুলোর মেডিকেল কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক দশক পরও চিলুকুরি এবং অন্য ফার্মাসিস্টরা বলছেন, তাদের দোকানে এখনো দুর্বোধ্য ব্যবস্থাপত্র আসছেই।

চিলুকুরি বিবিসিকে এমন বেশ কিছু ব্যবস্থাপত্রের ছবি পাঠিয়েছেন, যা গত কয়েক বছরে তার কাছে এসেছে এবং তিনি নিজেও সেগুলো পড়তে পারেননি।

কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত ফার্মেসি 'ধনন্তরী'-এর সিইও রবীন্দ্র খানদেলওয়াল বলেন, তাদের কাছে আসা কিছু ব্যবস্থাপত্র প্রায় পাঠ-অযোগ্য থাকে। পশ্চিমবঙ্গের শহর ও গ্রাম মিলিয়ে তাদের ২৮টি শাখা রয়েছে এবং প্রতিদিন চার হাজারের বেশি গ্রাহককে তারা সেবা দেন।

তিনি বলেন, "বছরের পর বছর ধরে আমরা শহরে হাতে লেখা ব্যবস্থাপত্রের বদলে ছাপানো ব্যবস্থাপত্র দেখছি। কিন্তু শহরতলি ও গ্রামীণ এলাকায় এখনো বেশিরভাগই হাতে লেখা।"

তার কর্মীরা অনেক অভিজ্ঞ এবং বেশিরভাগ ব্যবস্থাপত্রের পাঠোদ্ধার করতে পারেন। রবীন্দ্র বলেন, "তারপরও, মাঝে মাঝে আমাদের ডাক্তারদের ফোন করতে হয়। কারণ, গ্রাহককে সঠিক ওষুধ দেওয়াটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।" সূত্র: বিবিসি বাংলা নিউস 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়