শিরোনাম
◈ পাকিস্তানের কাছে হেরে ফাইনা‌লে খেলা হ‌লো না বাংলাদেশের  ◈ ইং‌লিশ লি‌গের হাই‌ভো‌ল্টেজ ম‌্যা‌চে ড্র মে‌নেই মাঠ ছাড়‌লো ম‌্যানসিটি ও আর্সেনাল ◈ বেনাপোল বন্দরে ভোগ্য পণ্যের বানিজ্য ঘাটতি ৭৩ হাজার মেট্রিক টন ◈ ভার‌তের বিরু‌দ্ধে অর্ধশতরান করে পা‌কিস্তা‌নি ক্রিকেটার ফারহা‌নের ‘একে৪৭’ চালানোর কায়দায় উচ্ছ্বাস ◈ এবার বাংলাদেশের বন্দরে নজর যুক্তরাষ্ট্রের: ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন (ভিডিও) ◈ চার্লি কার্কের হত্যাকারীকে ক্ষমার ঘোষণা দিলেন স্ত্রী এরিকা কার্ক ◈ টেকনাফের গহীন পাহাড়ে মানবপাচার চক্রের ঘাঁটিতে অভিযান, ৮৪ জন উদ্ধার ◈ ফিলিস্তিনকে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া আর কানাডার স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ কী? ◈ লাগাম টানা হলো পুলিশের গ্রেপ্তারি ক্ষমতায়, ১২৭ বছরের পুরোনো ফৌজদারি কার্যবিধিতে বড় পরিবর্তন (ভিডিও) ◈ রাজনৈতিক দলের ৬ নেতাসহ ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:০১ দুপুর
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চ'বাহার বন্দর নিষেধাজ্ঞায়: ভারত-আফগান বাণিজ্যে চাপ

পার্সটুডে-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের চ'বাহার বন্দরকে যে নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল ওই অব্যাহতি বাতিল করা হয়েছে।

এর ফলে চ'বাহার বন্দরও নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত হয়ে গেল। স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম প্রক্রিয়া সক্রিয় করার ফলে দেখা যাচ্ছে এটি কেবল ইরানের বাণিজ্যের ওপরই চাপ সৃষ্টি করছে না বরং আফগানিস্তান ও ভারতের অর্থনীতির উপরও চাপ সৃষ্টি করছে।

ভারত ও আফগানিস্তান দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের সিস্তান ও বালুচেস্তান প্রদেশে চ'বাহার বন্দরের উন্নয়নের জন্য একটি বিশেষ অ্যাকাউন্ট খুলেছে। ‌এই সমুদ্রপথ পণ্য পরিবহনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে কাজ করে এবং চীন, পাকিস্তানের সাথে এই অঞ্চলে বড় বিনিয়োগ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বন্দরটিকে এখন নতুন করে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। পার্সটুডে-র এই অর্থনৈতিক সংবাদ প্যাকেজে, আমরা ইরানের চ'বাহার বন্দরের ওপর নিষেধাজ্ঞার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাবগুলো পর্যালোচনা করার চেষ্টা করবো:

স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম সক্রিয়করণ এবং চ'বাহার বন্দরের ওপর নিষেধাজ্ঞা

চ'বাহার বন্দরকে নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুবিধা আসছে ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে বাতিল করা হবে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ঘোষণা করেছে ওই তারিখের পরে চ'বাহার বন্দরের কার্যক্রমে জড়িত যে কোনও ব্যক্তি বা সত্তা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। এই অব্যাহতি বাতিলকরণের ফলে, ভারত এবং আফগানিস্তানসহ ওই বন্দরের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র "রনধীর জয়সওয়াল" চ'বাহার বন্দরের ওপর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন: ভারতীয় বাণিজ্য এবং প্রকল্পগুলোর ওপর এই পদক্ষেপের পরিণতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

চ'বাহারের কৌশলগত গুরুত্ব

চ'বাহার বন্দর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা এবং মধ্য এশিয়ার নিকটতম সমুদ্রপথ এবং পূর্ব ইরানের উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে পরিচিত এই বন্দর। বন্দরটি "উত্তর-দক্ষিণ করিডোর"-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেয়।

২০১৬ সাল থেকে, ভারত ইরানের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির কাঠামোর মধ্যে চ'বাহার বন্দরের শহীদ বেহেশতি টার্মিনালের উন্নয়নে বিনিয়োগ করে আসছে। এই টার্মিনাল পরিচালনার জন্য গত বছর ১০ বছরের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ।

চুক্তিতে বন্দরের জেটি সুসজ্জিত করার জন্য ৩৭০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এবং রেল ও বন্দর প্রকল্পের জন্য ২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। আফগানিস্তান চ'বাহারের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির জন্য একটি বিশেষ অ্যাকাউন্টও খুলেছিল, যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানি রুটের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং চ'বাহার-জাহেদান রেলওয়ে ও জারাঞ্জ-দেল দেলঅরম সড়কের মতো রেল ও সড়ক প্রকল্পগুলো তাদের বাণিজ্যকে সহজতর করতে সহায়তা করেছিল। 

আঞ্চলিক প্রভাব এবং চীনা প্রতিযোগিতা

চ'বাহারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা ছাড় বাতিলের ফলে ভারত ও আফগানিস্তান জেবেল আলী বন্দর এবং মধ্য এশিয়ার মতো দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল রুট ব্যবহার করতে বাধ্য হবে। বিপরীতে, চীন পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দরে ৬২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, ওই বন্দরটি চ'বাহার থেকে অল্প দূরত্বে অবস্থিত। গোয়াদার বন্দর মধ্য এশিয়া ও আরব বিশ্বে ভারতের রুট হিসেবে প্রতিস্থাপিত হতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম এবং দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে প্রতিযোগিতার মধ্যে কেবল বাণিজ্য রুটই নয়  বরংজ্বালানি প্রকল্প এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও অন্তর্ভুক্ত। ভারত, রাশিয়ার সাথে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প এবং পরিষ্কার জ্বালানি উন্নয়নে সহযোগিতা করে, তার জ্বালানি পোর্টফোলিওতে পারমাণবিক শক্তির অংশ বৃদ্ধি করতে এবং ছোট ও বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাশিয়ান প্রযুক্তি থেকে উপকৃত হতে চায়।

চ'বাহার বন্দরের ওপর নিষেধাজ্ঞা; এশিয়ার জন্য একটি সতর্ক বার্তা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে চ'বাহার বন্দরকে দেওয়া অব্যাহতি বাতিল করার ঘটনা ইরানের পাশাপাশি ভারত ও আফগানিস্তানের অর্থনীতির জন্যও হুমকি সৃষ্টি করবে। এই পদক্ষেপ প্রমাণ করছে মার্কিন সর্বোচ্চ চাপ এ অঞ্চলের বাণিজ্য ও অবকাঠামোগত নীতিগুলোকে প্রভাবিত করেছে। ঘটনাটি এশীয় দেশগুলোর জন্য কৌশলগত বিনিয়োগ এবং নিরাপদ ট্রানজিট রুট বিকাশের গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি এই অঞ্চলে চীন-ভারত প্রতিযোগিতার পরিণতি তীব্র করে তোলে। এমন এক সময়ে ঘটনাটি ঘটানো হলো যখন এশিয়ায় বাণিজ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল, রাশিয়া-ভারত পারমাণবিক সহযোগিতা, গোয়াদরে চীনা বিনিয়োগ এবং ইরান-ভারত-আফগানিস্তান ট্রানজিট প্রকল্পগুলো চ'বাহার বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব দ্বিগুণ করেছে। এই রুটের বিরুদ্ধে যে-কোনো বিধিনিষেধ বা নিষেধাজ্ঞা কেবল আঞ্চলিক বাণিজ্যই নয়, এশিয়ার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জ্বালানি নিরাপত্তাকেও চ্যালেঞ্জ করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়