শিরোনাম
◈ মুস্তাফিজ ও হৃদয়ের প্রশংসায় পা‌কিস্তা‌নের  মিসবাহ, শো‌য়েব মালিক ও গুল ◈ পাকিস্তানের কাছে হেরে ফাইনা‌লে খেলা হ‌লো না বাংলাদেশের  ◈ ইং‌লিশ লি‌গের হাই‌ভো‌ল্টেজ ম‌্যা‌চে ড্র মে‌নেই মাঠ ছাড়‌লো ম‌্যানসিটি ও আর্সেনাল ◈ বেনাপোল বন্দরে ভোগ্য পণ্যের বানিজ্য ঘাটতি ৭৩ হাজার মেট্রিক টন ◈ ভার‌তের বিরু‌দ্ধে অর্ধশতরান করে পা‌কিস্তা‌নি ক্রিকেটার ফারহা‌নের ‘একে৪৭’ চালানোর কায়দায় উচ্ছ্বাস ◈ এবার বাংলাদেশের বন্দরে নজর যুক্তরাষ্ট্রের: ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন (ভিডিও) ◈ চার্লি কার্কের হত্যাকারীকে ক্ষমার ঘোষণা দিলেন স্ত্রী এরিকা কার্ক ◈ টেকনাফের গহীন পাহাড়ে মানবপাচার চক্রের ঘাঁটিতে অভিযান, ৮৪ জন উদ্ধার ◈ ফিলিস্তিনকে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া আর কানাডার স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ কী? ◈ লাগাম টানা হলো পুলিশের গ্রেপ্তারি ক্ষমতায়, ১২৭ বছরের পুরোনো ফৌজদারি কার্যবিধিতে বড় পরিবর্তন (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৯:২৭ সকাল
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যে দেশে একটিও মশা নেই

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই মশা মানুষকে কামড়ায়। আর বাংলাদেশের মানুষের জন্য এই অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। এখানে ঘরে কিংবা বাইরে, সবখানেই মশার উৎপাত। কিন্তু পৃথিবীতে কি এমন কোনো দেশ আছে, যেখানে মশা নেই?

উত্তর হলো, হ্যাঁ, আছে। সেই দেশটি হলো আইসল্যান্ড। আশেপাশের দেশ নরওয়ে, স্কটল্যান্ড ও গ্রিনল্যান্ডে একাধিক প্রজাতির মশা থাকলেও আইসল্যান্ড এখনো মশামুক্ত। 

এখানে একটি তথ্য উল্লেখ করা দরকার, অ্যান্টার্কটিকাতেও মশা নেই, তবে সেটা কোনো দেশ নয়, একটি মহাদেশ।

আইসল্যান্ডে মশা নেই কেন?

বিজ্ঞানীদের কাছে কয়েকটি ধারণা আছে। একটি হলো, মশারা এখনো আইসল্যান্ডে পৌঁছাতে পারেনি। কারণ দেশটি শত শত মাইল সমুদ্র দিয়ে চারদিকে ঘেরা। এটি মশাদের উড়ে আসার পথে প্রাকৃতিক বাধা হিসেবে কাজ করে।

কিন্তু মশারা উড়োজাহাজে করে পৌঁছাতে পারার কথা। কারণ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আইসল্যান্ডের উড়োজাহাজ চলাচল আছে। আইসল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লিমনোলজির (হ্রদ ও স্বাদুপানির বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন) এমেরিটাস অধ্যাপক গিসলি মার গিসলাসন ২০১৭ সালে রেইকিয়াভিক গ্রেপভাইন নামের ইংরেজি পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি একবার গ্রিনল্যান্ড থেকে আসা একটি ফ্লাইটে মশা ধরে ফেলেছিলেন।

তিনি বলেন, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারে মশারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে, এমনকি প্রচণ্ড ঠাণ্ডায়ও।

তাহলে প্রশ্ন আসে, যদি মশারা আইসল্যান্ডে পৌঁছেই থাকে, তবে তারা কেন সেখানে স্থায়ীভাবে বংশবিস্তার করতে পারছে না?

গিসলাসন ব্যাখ্যা করেন, এর মূল কারণ উপযুক্ত প্রজননস্থলের অভাব। যদিও আইসল্যান্ডে বিমানবন্দরের আশেপাশে অনেক পুকুর ও জলাভূমি আছে, যা মশাদের ডিম দেওয়ার জন্য উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু সেখানকার কঠিন আবহাওয়া মশার জীবনচক্রের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়।

মশার জীবনচক্র

মশার জীবনচক্রে চারটি ধাপ আছে:

১. ডিম

২. লার্ভা

৩. পিউপা (শুঁয়োপোকার কোষের মতো অবস্থা)

৪. পূর্ণবয়স্ক মশা

প্রাপ্তবয়স্ক মশা পানিতে ডিম দেয়। ডিম থেকে লার্ভা হয়, লার্ভা থেকে পিউপা, আর পিউপা থেকে পূর্ণবয়স্ক মশা বের হয়। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পোকাবিজ্ঞানী ও সহকারী অধ্যাপক রবার্ট জোন্স লাইভ সায়েন্সকে জানান, মশার লার্ভা বেড়ে উঠতে জমাট না বাঁধা তরল পানির প্রয়োজন হয়। খুব ঠাণ্ডা অঞ্চলে কিছু প্রজাতির মশা 'ডিম' অবস্থায় নিদ্রায় (ডরমানসি) চলে যায়। যেমন কানাডার আর্কটিকে। এভাবে তারা মাসের পর মাস জমাট বাঁধা পানির মধ্যেও বেঁচে থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, তুলনামূলক উষ্ণ জায়গায় মশারা শীতকাল পার করতে পারে জমাট না বাঁধা পানিতে ডিম বা লার্ভা হয়ে। অথবা পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় গর্ত বা অন্য সুরক্ষিত স্থানে লুকিয়ে থেকে। যেমন মধ্য ইউরোপের কিছু অংশে। কিন্তু আইসল্যান্ডের আবহাওয়া মাঝামাঝি ধরনের। এখানে দীর্ঘ শীতকাল এবং শরৎও বসন্তে পানি বারবার জমাট বাঁধা-গলা-আবার জমাট বাঁধার চক্র চলে।

জোন্স বলেন, এই চক্র মশার ডিম ও লার্ভার বৃদ্ধি ব্যাহত করে। ফলে তারা পূর্ণবয়স্ক হওয়ার আগেই মরে যায়। ফলে এখানে মশার স্থায়ী আবাস গড়ে উঠতে পারে না। আইসল্যান্ডের ভূ-তাপীয় উষ্ণপুকুরগুলোতে শীতে বরফ জমে না। কিন্তু এগুলোর পানি এত গরম যে মশার লার্ভা টিকতে পারে না। তাছাড়া পানির রাসায়নিক গঠনও মশাদের জন্য অনুকূল নয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আইসল্যান্ড হয়তো আর বেশি দিন মশামুক্ত থাকবে না। জোন্স বলেন, বসন্ত ও শরৎ উষ্ণ হয়ে উঠলে পানি হয়তো দীর্ঘ সময় জমাট বেঁধে থাকবে না। এটি মশাদের বংশবিস্তার করার সুযোগ করে দিতে পারে।

নিউ মেক্সিকো স্টেট ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ইম্মো হ্যানসেনও একই মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমরা এখন দেখছি, উষ্ণমণ্ডলীয় মশারা যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরের দিকে তাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। এর মূল কারণ হলো, ওই অঞ্চলের শীতকাল ধীরে ধীরে উষ্ণ হয়ে উঠছে।

যদি আইসল্যান্ডের মতো জায়গায় মশার বংশ বিস্তার হয়। তবে অবাক করার মতো কিছু হবে না। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপপুঞ্জ হাওয়াইও একসময় মশামুক্ত ছিল। কিন্তু ১৮২৬ সালে ইউরোপীয় ও আমেরিকান জাহাজের মাধ্যমে সেখানে মশা প্রথম পৌঁছায়। এরপর অনুকূল আবহাওয়ায় মশারা দ্রুত পুরো দ্বীপপুঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনে ফলে এমনকি হাওয়াইয়ের উচ্চভূমির বনাঞ্চলেও মশা পৌঁছে গেছে। যেখানে আগে তাদের টিকে থাকা সম্ভব ছিল না।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

জোন্স বলেন, যদি আইসল্যান্ডে মশা পৌঁছে যায়, তবে রোগবাহী মশাদের (যেমন এডিস গণভুক্ত মশা, যারা ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ছড়ায়) টিকে থাকার সম্ভাবনা কম। কারণ এই মশাদের টিকে থাকার জন্য উষ্ণমণ্ডলীয় বা উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় আবহাওয়া প্রয়োজন।

জোন্স বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ ইউরোপে ঝুঁকি থাকলেও, গবেষণা অনুযায়ী ২০৮০ সাল পর্যন্ত উত্তর ইউরোপে ডেঙ্গু ছড়ানোর মতো পরিবেশ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

শেষ কথা, এখন পর্যন্ত একমাত্র দেশ যেখানে একটিও মশা নেই, সেটি হলো আইসল্যান্ড। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে হয়তো সেখানেও মশা দেখা দিতে পারে। সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার বাংলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়