প্রথমবারের মতো ইসরায়েল কাতারের রাজধানী দোহায় বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যেখানে হামাস কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে ছয়জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন কাতারের নিরাপত্তা কর্মকর্তাও রয়েছেন। এই ঘটনায় ছোট জ্বালানি তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ পারস্য উপসাগরীয় দেশটি ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।
ইসরায়েলের এই হামলা জিসিসি সদস্যরাষ্ট্রে হামলার দায় স্বীকারের এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কাতার যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের আঞ্চলিক সদরদপ্তর এবং সেখানে আট হাজারের বেশি মার্কিন সেনার আবাসস্থল।
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল-থানি জানিয়েছেন, ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের আগে থেকে সতর্ক করেনি, বরং হামলার ১০ মিনিট পরেই তারা সতর্কবার্তা পায়। এই হামলা কাতারকে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কাতার সামরিক প্রতিশোধের পথে না হেঁটে কূটনীতি ও আইন-এর আশ্রয় নেবে। তারা জাতিসংঘ, আরব লীগ ও ওআইসি-এর মতো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কাতারের নিরাপত্তাবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশটি সামরিক উত্তেজনা বাড়াতে আগ্রহী নয়। তবে তারা ইসরায়েলকে প্রতিরোধ করার কৌশল নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা শুরু করেছে। ইরানের হামলার অভিজ্ঞতার আলোকে কাতার তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে এবং জিসিসি দেশগুলোর মধ্যে সম্মিলিত নিরাপত্তা বলয় তৈরির উদ্যোগ নিতে পারে।
ইসরায়েলের এই হামলা উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে এক যৌথ ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। হামলার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের নেতারা দোহা সফর করে কাতারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, একটি প্রতিবেশী রাজতন্ত্রের ওপর হামলা সবার নিরাপত্তার জন্য হুমকি। অতীতে কাতারের সঙ্গে এই দেশগুলোর বিবাদ থাকলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা মতপার্থক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
কাতারে মার্কিন সেনার উপস্থিতি সত্ত্বেও ইসরায়েলের হামলা ঠেকাতে না পারায়, কাতারসহ উপসাগরীয় দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তাদের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক নির্ভরশীলতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখনও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, তবে এই ঘটনা তাদের কৌশলগত অংশীদারত্বে বৈচিত্র্য আনার প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালো করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই হামলা জিসিসি দেশগুলোর মধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চুক্তি, যেমন আব্রাহাম চুক্তি, পুনর্মূল্যায়নের চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কাতারের ওপর হামলাকে একটি "চরম সীমারেখা" হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা উপসাগরীয় দেশগুলোর ওপর সামষ্টিক হামলা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে, এই ঘটনা উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব এবং দেশগুলোর নিজস্ব নিরাপত্তা কৌশলের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।