সম্পূর্ণ অদৃশ্য এবং উচ্চ ধ্বংস ক্ষমতাসম্পন্ন এক নতুন মারণাস্ত্র তৈরি করছে চীন, যা প্রতিরক্ষা গবেষকদের মতে পারমাণবিক বিস্ফোরণের সমতুল্য। হাই-পাওয়ার মাইক্রোওয়েভ (এইচপিএম) নামক এই অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে বেইজিং-এর ব্যাপক নির্মাণকাজের খবর প্রকাশ্যে আসতেই আমেরিকা ও ভারতের মতো দেশগুলোতে গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এই অস্ত্রের ধ্বংসক্ষমতা পারমাণবিক বিস্ফোরণের সমতুল্য। এটি High-Powered Microwave (HPM) প্রযুক্তিতে তৈরি—a weapon capable of releasing electromagnetic pulses (EMP) with devastating effects.
চীনের প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো—বিশেষ করে University of Defense Technology এবং North-West Institute of Nuclear Technology—এ অস্ত্র নির্মাণে জোরকদমে কাজ করছে। জানা গেছে, এতে ব্যবহৃত হচ্ছে phased-array transmission system, যা থেকে নির্গত তরঙ্গ শত্রুর দূরপাল্লার অস্ত্র ও ইলেকট্রনিক সিস্টেম অকার্যকর করে দিতে সক্ষম।
এইচপিএম অস্ত্রের কার্যকারিতা ও বৈশিষ্ট্য
গোয়েন্দা সূত্রের খবর অনুযায়ী, চীনের প্রতিরক্ষা গবেষকরা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোওয়েভ (এইচপিএম) হাতিয়ার তৈরিতে মনোযোগ দিয়েছে। তাদের দাবি, এই অত্যাধুনিক অস্ত্রটি থেকে নির্গত তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের শক্তি পারমাণবিক বিস্ফোরণের সমতুল্য হতে পারে। 'দ্য ইউরেশিয়ান টাইমস্'-এর প্রতিবেদন অনুসারে, চীনা প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দল বর্তমানে এই নতুন হাতিয়ারটি নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। সবুজ সংকেত পেলেই ড্রাগনের লালফৌজ এই মারণাস্ত্রের ব্যবহার শুরু করবে।
সূত্রের খবর, এই অস্ত্রের সাহায্যে শত্রুপক্ষের দূরপাল্লার হাতিয়ারগুলিকে অতি সহজেই নিষ্ক্রিয় করা যাবে। 'ইউরেশিয়ান টাইমস্' জানিয়েছে, এইচপিএম অস্ত্রের সাহায্যে একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালাতে পারবে চীনের পিপল'স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গেছে, এতে ফেজড অ্যারে ট্রান্সমিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা শত্রুপক্ষের ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্রগুলির বৈদ্যুতিক উপাদানগুলোকে নষ্ট করতে সক্ষম।
অদৃশ্য ক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত দিক
বিশ্লেষকদের দাবি, এইচপিএম অস্ত্রের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর অদৃশ্য হয়ে থাকার ক্ষমতা। উচ্চ শক্তির লেন্সেও অনেক সময় মাইক্রোওয়েভ ধরা পড়ে না। ফলে শত্রুর নজর এড়িয়ে অতি সহজেই হামলা চালাতে পারবে চীন। একসময় এই ধরনের হাতিয়ার তৈরি অসম্ভব বলে মনে করা হলেও, চীনের ইউনিভার্সিটি অফ ডিফেন্স টেকনোলজি এবং নর্থ-ওয়েস্ট ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার টেকনোলজির গবেষকরা নিরন্তর গবেষণার মাধ্যমে এটিকে সম্ভব করে তুলেছেন।
চীনা অস্ত্রটি থেকে যে তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ বেরিয়ে আসবে তার শক্তি এক গিগাওয়াটের বেশি হতে পারে। অস্ত্রটির নকশায় ঘূর্ণায়মান তরঙ্গগুলির জন্য অ্যারে-অ্যান্টেনা রয়েছে এবং মোট আটটি চ্যানেল দিয়ে ওই তরঙ্গ বেরিয়ে এসে নিখুঁত নিশানায় হামলা চালাবে। জানা গেছে, হাতিয়ারটির পাওয়ার ডিভাইডারের আকার একটি পেডেস্টাল ফ্যানের মতো।
পারমাণবিক বিস্ফোরণের সঙ্গে তুলনা ও নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জ
চীনা বিশ্লেষকদের দাবি, এইচপিএম অস্ত্রটি যে তড়িৎ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করবে, প্রতি মিটারে তার শক্তি ৮০ হাজার ভোল্টের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পারমাণবিক বিস্ফোরণেও একই ধরনের তড়িৎ-চৌম্বকীয় পাল্স তৈরি হয়। আর তাই ভয়ঙ্কর এই মারণাস্ত্রটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যথেষ্ট কঠিন বলে আগাম সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্রের খবর, বর্তমানে হাতিয়ারটির অপারেটিং দক্ষতা প্রায় ৯৭ শতাংশে পৌঁছেছে, তবে এর চূড়ান্ত পরীক্ষা এখনও বাকি। এটি পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেলে বিভিন্ন রণতরীতে মোতায়েন করতে পারে পিএলএ নৌসেনা।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বৈদ্যুতিন যুদ্ধের জল্পনা
চীনের মতোই এইচপিএম প্রযুক্তির অস্ত্র তৈরিতে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে আমেরিকা। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় এই ধরনের হাতিয়ার মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে ওয়াশিংটনের। ওই অঞ্চলে চীনের ক্রমাগত 'দাদাগিরি' কমাতে যুক্তরাষ্ট্র লেজার অস্ত্রে সজ্জিত আর্লে বার্ক শ্রেণির গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার 'ইউএসএস প্রেবল'কে জাপানের ইয়োকোসুকা নৌ-ছাউনিতে পাঠিয়েছে।
সম্প্রতি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উপগ্রহ সিগন্যাল আটকানোর জন্য জ্যামার বসানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে আমেরিকা। এই ইস্যুতে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বৈদ্যুতিন যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে বিশ্বজুড়ে জল্পনা তুঙ্গে। গত ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়, যখন আমেরিকার 'স্পেস র্যাপিড ক্যাপাবিলিটিস' অফিসের অধিকর্তা কেলি হ্যামেট জানান, 'রিমোট মডুলার টার্মিনাল (আরএমটি)' নামের জ্যামার সিস্টেমটি তৈরি করা হয়েছে, যা মূলত 'কিল চেন' (শত্রুদের আক্রমণের ছক চিহ্নিত করার সামরিক পদ্ধতি) ব্যাহত করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সূত্র: (এবিপি)