ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন।। সাতটি প্রতিনিধিদলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাংসদরা আছেন। তিনটি কমিটির নেতৃত্বে আছেন বিরোধী নেতারা। কংগ্রেসের শশী থারুর, ডিএমকে-র কানিমোরি এবং এনসিপি-র সুপ্রিয়া সুলে। তবে শশাী থারুরের নাম কংগ্রেস দেয়নি। তারা আনন্দ শর্মাসহ চারজনের নাম দিয়েছিল। কিন্তু সরকার শশী থারুরকে বেছে নেয়, যা নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপির একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগও করেছে।
ইউসুফ পাঠানকেও তৃণমূলের সঙ্গে পরামর্শ না করে প্রতিনিধিদলে নেয়া হয়েছিল। পরে তৃণমূল প্রতিবাদ করে। তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সুপারিশ মেনে নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রতিনিধিদলে নেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিজেপি-র পশ্চিমবঙ্গের নেতা সন্ময় বন্দ্যোপাধ্য়ায় সোচ্চার হয়েছেন।
তবে সেই বিতর্ক এখন অতীত। মঙ্গলবার পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিস্রি প্রতিনিধিদলের সদস্যদের বিভিন্ন দেশে গিয়ে দেশের হয়ে কথা বলার বিষয়ে মত বিনিময় করেছেন৷
কোন ৩৩টি দেশ বাছা হলো?
যে ৩৩টি দেশকে বেছে নেয়া হয়েছে, তার মধ্যে আছে সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, আলজেরিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইইউ, ইটালি, ডেনমার্ক, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লাইবেরিয়া, ডিআর কঙ্গো, সিয়েরা লিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, পানামা. গায়ানা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, স্পেন, গ্রিস, স্লোভেনিয়া, লাটভিয়া, রাশিয়া, মিশর, কাতার, ইথিওপিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
জেডি ইউ-এর সঞ্জয় কুমার ঝা-র নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান গেছেন। সেই প্রতিনিধিদলের সদস্য বিজেপি সাংসদ অপরাজিতা সারাঙ্গি জানিয়েছেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচ স্থায়ী ও ১০ অস্থায়ী সদস্য দেশ আছে। তারা প্রায় সকলেই তালিকায় আছে। এছাড়া যেসব দেশ এরপর নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হবে, তারা আছে। এছাড়া কিছু দেশ আছে, যারা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত খোলাখুলি জানায়, সেইসব দেশকেও তালিকায় রাখা হয়েছে।
পাকিস্তান এখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য। আগামী ১৭ মাস তারা সদস্য থাকবে। ভারত মনে করছে, তারা এই সময়ে ভারতবিরোধী ভূমিকা নিয়ে চলতে পারে এবং বিশ্বের অন্য দেশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে। সারাঙ্গি বলেছেন, ''আমাদের সরকার আমাদের ন্যারেটিভটা আমলা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জানাবার জন্য বিভিন্ন দলের সাংসদদের বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছে। আমাদের অবস্থান, আমাদের চিন্তা, পাকিস্তান যেভাবে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করছে, সেই বিষয়টা বিশ্বকে জানাবার দরকার আছে। এটা আমাদের দায়িত্ব।''
তিনি বলেন, ভারত বিশ্বকে আরেকটি বার্তা দেবে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পুরো দেশ এক হয়ে লড়াই করছে। পাকিস্তান অপারেশন সিন্দুর শুরুর আগে বা পরে কী করেছে, সেটাও বিশ্বকে জানানো দরকার বলে মনে করে ভারত সরকার।
সঞ্জয় ঝা বলেছেন, ''আমাদের প্রতিনিধিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে বোঝাবেন, পাকিস্তান শুধু সন্ত্রাসবাদের উপর বেঁচে থাকে।''
সংসদীয়মন্ত্রী কিরণ রিজিজু বলেছেন, ''একটাই মিশন, একটাই বার্তা, একটাই ভারত। সাতটি প্রতিনিধিদল একটাই কথা বলবে, তা হলো, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত কতটা এক হয়ে কাজ করছে।''
শশী থারুর যা বলেছেন
কংগ্রেস নেতা শশী থারুর একটি প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দেবেন। তিনি বলেছেন, ১৭ সদস্যের ফরাসি সেনেটের প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার ভারতে এসেছে। তারা বলেছেন, ভারতকে তারা পুরোপুরি সমর্থন করেন। বৃহস্পতিবার ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্কে প্রতিনিধিদল নিয়ে যাবেন বিজেপি সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ।
থারুর জানিয়েছেন, রবিশংকর ফরাসি প্রতিনিধিদলকে বলেছেন, ভারত কীভাবে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করছে। ভারতীয় প্রতিনিধিদল তাদের দেশে যাবে জানার পরেও ফরাসি প্রতিনিধিদল ভারতে এসেছে। কারণ, তারা বলেছে, তারা ভারতে এসে দিল্লিকে সমর্থন জানাতে চায়।
সাংসদ নন, প্রতিনিধিদলে এমন কিছু ব্যক্তিত্বকেও নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে আছেন গুলাম নবি আজাদ, এম জে আকবর, আনন্দ শর্মা, মুরলীধরণ, সলমন খুরশিদরা।
আগেও হয়েছে
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''নরসিমহা রাও যখন প্রধানমন্ত্রী তখন তিনি জেনেভায় জাতিসংঘের বৈঠকে বিরোধী নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বাজপেয়ী বহুবার ঘটনাটা সংসদে ও সংসদের বাইরে বলেছেন। তিনি বলতেন, যখন দেশের জন্য কাজ করতে হয়, তখন সকলে মিলে এক হয়ে কাজ করতে হয়।''
শরদ বলেন, ''এবারও পহেলগামে হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম থেকেই বিরোধীরা সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেছে, সরকার এর বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা তারা সমর্থন করবেন। অপারেশন সিন্দুরের পর সরকারও দেখাতে চাইছে, পুরো দেশ এক হয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করছে। সব রাজনৈতিক দল এই লড়াইয়ে সরকারের পাশে আছে। সন্ত্রাসের যে বীভৎস রূপ পহেলগামে দেখা গেছে, তা পুরো দেশকে ধাক্কা দিয়েছে, আবেগতাড়িত করেছে। অপারেশন সিন্দুরের পর এই এক হওয়া চেহারাটা সামনে রেখে সরকারও গোটা বিশ্বকে একটা সদর্থক বার্তা দিতে চাইছে।''