শিরোনাম
◈ 'মাকে লোকে ভয় দেখিয়েছিল, মেয়ে এই কাজ করলে বিয়ে হবে না' ◈ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিয়ে বিশেষ বার্তা ◈ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নির্বাচনে সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই ◈ সাবেক সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান গ্রেফতার ◈ ডলার সংকট–রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিদেশি-প্রবাসীদের শেয়ারবাজার বিমুখতা ◈ ভারতীয় ক্রিকেট বো‌র্ডের ক‌্যাশবা‌ক্সে ৫ বছরে ১৫ হাজার কো‌টি টাকা  জমা  ◈ আ'তঙ্কে কাঁপছে ভারত, সেনাপ্রধানের সরল স্বীকারোক্তি! (ভিডিও) ◈ এবার জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট ◈ ভারত আমাদের প্রয়োজন নেই, বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চাই: ন্যাটোর অস্ট্রিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান গুনথার ◈ ওবায়দুল কাদের কোনঠাসা, শেখ হা‌সিনার কা‌ছে গুরুত্ব পা‌চ্ছেন যে তিন নেতা‌!

প্রকাশিত : ২২ মে, ২০২৫, ০১:৪৩ রাত
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জলবায়ূ পরিবর্তন : দুর্যোগের আরেক নাম লবণাক্ততা

সাতক্ষীরায় কলস নিয়ে পানির অপেক্ষায় নারীরা

এম মাছুম বিল্লাহ : বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধির প্রবণতা বেড়েই চলেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ঘটছে। নদীগুলোতে উজান থেকে বয়ে আসা পলি জমা ও অপরিকল্পিত বাঁধে নদীতে স্রোত কমে যাওয়ায় মিষ্টি পানির গতিধারা লবণাক্ত পানিকে অপসারণ করতে পারছে না। লবণাক্ত পানির প্রভাবে উপকূলীয় জনপদের গাছপালা মরে যাচ্ছে। শস্যশ্যামল প্রকৃতি বালুময় বিরান ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। শুধু তা-ই না, লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নির্মিত বাঁধের পরিণতিতে নতুন করে শুরু হয়েছে নদীভরাট এবং জলাবদ্ধতার সমস্যা। 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঠেকাতে ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন কৌশল প্রণীত হলেও লবণাক্ততার মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় দরকার বিশেষ পরিকল্পনা। কারণ এটি নিয়মিত দুর্যোগের মধ্যে পড়ে, বছর ধরে জনজীবনে প্রতিকূল প্রভাব সৃষ্টি করে থাকে। উপকূলীয় অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবনের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে এনে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে নতুন মাত্রা দিতে বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর মাটি মূলত লবণাক্ত। দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল বলতে মূলত সমগ্র খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং যশোর জেলার দক্ষিণাংশ বুঝায়। এ দেশের অসংখ্য নদীবাহিত পলিমাটি সমুদ্রে অবক্ষেপিত হয়ে এ অঞ্চলের ভূ-ভাগ গঠিত। এ অঞ্চলের ভূমির গবাংলাদেশের সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলের ভূ-ভাগ সমুদ্র সমতল থেকে ১.৫ থেকে ১১.৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত
ত হওয়ায় সমুদ্রের লবণ পানি জোয়ারের সময় খুব সহজে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মাটিকে লবণাক্ত করে তুলছে।

আবার জলোচ্ছ্বাসের সময় উপকূলীয় অঞ্চল লবণাক্ত পানিতে প্রায় নিয়মিতভাবে প্লাবিত হয়ে থাকে। প্রাকৃতিকভাবে উজান থেকে বয়ে আসা নদীর মিষ্টি পানির স্রোতধারা ভাটার সময় লবণ পানির তীব্রতাকে সহনীয় রাখতে ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি নদীর ক্ষীণ স্রোতধারার সাথে আরও কিছু মনুষ্যসৃষ্ট কারণে শুরু হয়েছে লবণাক্ততা বৃদ্ধির প্রবণতা। সামুদ্রিক লবণাক্ততা, জলস্ফীতি ও বন্যার কবল থেকে উপকূলবর্তী অঞ্চলের বসতবাড়ি ও শস্যক্ষেত্র রক্ষা করতে ৬০ এর দশকে উপকূলীয় বাঁধ নির্মিত হয়।

 এ ছাড়া অধিক ফলনশীল দানা শস্য উৎপাদনের জন্য পোল্ডার নির্মিত হয়েছিল। কিš‧ বাগদা চিংড়ির ব্যাপক চাহিদার ফলে কিছু মানুষ পোল্ডার কেটে লোনাপানি ঢুকিয়ে বাগদা চিংড়ি চাষ করতে থাকে। সারা বছর জমি পানিতে তলিয়ে থাকায় বাড়তে থাকে লবণাক্ততা। উজানের নদীগুলোতে পলি জমার কারণেও স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটার অভাবে বছরের পর বছর ধরে সৃষ্টি হয়েছে মাটির লবণাক্ততা।

লবণাক্ততার প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলের জনজীবনে এসেছে নতুন নতুন সংকট। সমুদ্র তীরবর্তী গ্রামগুলোতে শুরু হয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। পানীয় জলের অভাবে জীবনযাপন হয়ে পড়ছে কঠিন। শুস্খ মৌসুমে মানুষকে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। লবণাক্ত মাটিতে গবাদি পশুর জন্য উপযুক্ত চারণভূমি গড়ে উঠছে না, ফলে গৃহপালিত পশুপালন রীতিমতো অসাধ্য হয়ে পড়ে খাদ্যের অভাবে। গরু-ছাগল পালনের সুবিধা না থাকায় দুধের চাহিদাও পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না উপকূলীয় অঞ্চলের মাটি এঁটেল ক্সবশিষ্ট্য সম্পন্ন।

তবে লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে মাটি ঝরঝরে রূপ নিচ্ছে- যাতে করে ধান বা অন্য কোনো গাছ কিংবা ফসলের শেকড় আটকে রাখার গুণও হ্রাস পাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, লবণের কারণে ফসলের উৎপাদন কমে যায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ। মাটি লবণাক্ত হওয়ার কারণে মৃত্তিকা দ্রবণের ঘনত্ব বেশি, অল্প ঘনত্বের গাছের রস চলে যায় মাটিতে। ফলে পানিশুণ্য হয়ে গাছ নেতিয়ে পড়ে। এভাবে এ অঞ্চলের স্বাভাবিক কৃষি চাষ ব্যাহত হয়ে পতিত জমির পরিমাণ বাড়ছে। অনেকেই বিকল্প জীবিকার সন্ধানে লবণ পানিতে বাঁধ দিয়ে ঝুঁকছেন চিংড়ি চাষের দিকে।

দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততাজনিত দুর্যোগ মোকাবিলা করার বিষয়টি অধিক গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার স্বার্থে ক্সজব প্রযুক্তি ব্যবহার করে লবণ সহনশীল কৃষি ব্যবস্থার প্রসার ঘটাতে হবে। শুকনা মৌসুমে পানীয় জলের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে প্রতিটি বাড়িতে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম থাকতে হবে।

তবে এ পানি যাতে জীবাণুমুক্ত পরিবেশে সংরক্ষণ করা যায় তার জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম থাকা দরকার। ঠন ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের পিছনে নদীবাহিত পলি এবং সমুদ্রের জোয়ার কাজ করে। নদীর স্রোত যেমন পলি বহন করে সমুদ্রের পানিতে মিলিয়ে দিচ্ছে আবার বিস্তৃত জোয়ার সারা বছর নদীনালার স্বাভাবিক স্রোতধারায় বিলীন হয়ে ভূমির ঈষৎ লবণাক্ত প্রাকৃতিক ক্সবশিষ্ট্য বজায় রেখেছে। কিš‧ দিনে দিনে এ লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে জীব-বৈচিত্র্যের জন্য যেমন হুমকি তেমনি জনজীবনেও সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ প্রভাব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়