শিরোনাম
◈ পিনাকীকে হত্যার পরিকল্পনা, শহীদ হলে ২৪ ঘণ্টার ভিতর যা করতে বললেন! (ভিডিও) ◈ বিপিএলজয়ী ফরচুন বরিশালের শিরোপা উদযাপন পন্ড, আহত অর্ধশত (ভিডিও) ◈ বাংলাদেশ-ভারত কেউই কাউকে ছাড়া চলতে পারবে না: ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা ◈ সৌদি আরব এবার হজযাত্রীদের যে নিষেধাজ্ঞা দিলো ◈ নির্বাচনের পূর্ণপ্রস্তুতি মে-জুনের মধ্যেই: বিএনপিকে ইসি (ভিডিও) ◈ সরকারি কর্মকতা-কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার বিষয়ে যা জানালেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ◈ ম্যাটস শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ২০ জন (ভিডিও) ◈ অপারেশন ডেভিল হান্ট: সারা দেশে গ্রেপ্তার ১ হাজার ৩০৮ ◈ প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন বিএনপির প্রতিনিধি দল ◈ অনার্স কোর্স হবে ৩ বছরের

প্রকাশিত : ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৩:২৫ দুপুর
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হাহাকার বেড়েই চলছে কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’-এ, বন্ধের পথে অনেক হোটেল-রেঁস্তোরা

মানবজমিনের প্রতিবেদন।। মধ্য কলকাতার মারকুইজ স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, কিড স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড, নিউ মার্কেট ও আশেপাশের এক বর্গ কিলোমিটার অঞ্চলের পরিচিতি ‘মিনি বাংলাদেশ’ হিসেবে। প্রায় সারা বছরেই বাংলাদেশিদের আনাগোনায় সরগরম থাকতো গোটা এলাকা। বাংলাদেশি খাবার থেকে শুরু করে নানা ধরনের ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশিদের জন্যই গড়ে উঠেছিল। এই অঞ্চলের হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে এক সময় ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা ছিল। শীতকালে ও ঈদের সময় বাংলাদেশিদের ভিড়ে হাঁটাচলাও কঠিন হয়ে পড়তো। বিভিন্ন দোকান ও মলগুলোতে উপচে পড়তো ভিড়।

কোথায় সেই ভিড়? গোটা এলাকা থেকে বাংলাদেশিরা যেন উবে গিয়েছেন। চারিদিক এখন শুনশান। স্থানীয় মানুষ ও মেডিকেল ভিসায় আসা নামমাত্র কিছু বাংলাদেশির আনাগোনা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের ধাক্কায় কলকাতার মিনি বাংলাদেশে এখন শুধুই হাহাকার। চারিদিকে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে, বলছিলেন এক ব্যবসায়ী।

জুলাই থেকেই বাংলাদেশিদের আসা কমছিল। তবে গত ছয় মাসে তা কমতে কমতে এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, হোটেল মালিকরাসহ সব ব্যবসায়ীরাই মাছি তাড়াচ্ছেন। অনেক হোটেল বন্ধ হয়ে গিয়েছে, বন্ধ হয়েছে অনেক রেস্তোরাঁ, ট্রাভেল এজেন্সির অফিস ও মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রও।       

বিশিষ্ট হোটেল ব্যবসায়ী ও মার্কুইজ স্ট্রিট-ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি'র সহ সম্পাদক মনতোষ সরকার এই প্রতিবেদককে জানান, এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য সবই বাংলাদেশিদের উপর নির্ভর করে ব্যাপক আকার নিয়েছিল। গত ছয়-সাত মাসে বাংলাদেশিদের আসা কমতে কমতে প্রায় শূণ্যে নেমে আসায় এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা  সবাই অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত। হোটেলগুলোতে আবাসিক নেই বললেই চলে। বিশাল খরচের বোঝা সকলের কাঁধে। একই কথা জানান, সম্রাট হোটেলের ম্যানেজার প্রেম ঘোষ। তিনি বলেন, একসময় আমরা বাংলাদেশি আবাসিকদের জায়গা দিতে পারতাম না। এখন দু’চার জন ছাড়া কোনও আবাসিক নেই।

এক রেঁস্তোরার মালিক জানালেন, আর বলবেন না। রেস্তোরাঁ খুলে রাখাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। আগে যেখানে বাংলাদেশি পর্যটকদের বসার জায়গার জন্য অপেক্ষা করতে হতো এখন সেখানে চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া কোনো কাজ নেই। তিনিই জানালেন, ফুটপাতের খাবারের দোকানগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। ক্রেতার অভাবে অনেকে দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন। নিউমার্কেটের সামনে দেখা সিরাজগঞ্জের মহম্মদ সিরাজের সঙ্গে। পিতাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। তিনি কথায় কথায় বলেন, চারিদিক এমন শুনশান চেহারা আগে কখনো দেখিনি। ফুটপাতের সস্তার খাবারের দোকানগুলোর সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। কাপড়ের দোকান, পোষাকের দোকানগুলোতে তেমন কোনও ক্রেতা নেই। তিনি জানান, যে হোটেলে তিনি রয়েছেন সেখানে বাংলাদেশি পর্যটক মাত্র দুই জন। তার কথায়, এমন দৃশ্য কোনোদিন দেখব বলে ভাবিনি।

নিউমার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলছিলেন, বাংলাদেশিদের উপরই আমরা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলাম। ফলে তাদের অনুপস্থিতিতে সব কাপড়ের দোকানে কর্মী কমিয়ে দিতে হয়েছে। অনেক আর্থিক ঋণের বোঝা চেপে রয়েছে। কী হবে তা নিয়ে তিনি ও তার মতো সব ব্যবসায়ীরাই চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ঈদ আসছে। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি যা চলছে তাতে কোনও আশা দেখতে পাচ্ছি না। ফলে ঈদের জন্য আগে থেকে যে সব অর্ডার দিয়ে রেখেছিলাস সেগুলো বাতিল করতে হচ্ছে।

পার্ক স্ট্রিটের বিলাসবহুল শাড়ি ও শেরওয়ানির দোকানগুলোরও এখন করুণ অবস্থা্। স্থানীয়রা ছাড়া আর কোনও পর্যটকের দেখা মিলছে না। বাংলাদেশিরাই ছিলেন এসব দোকানের বড় বড় ক্রেতা, জানান এক দোকানের কর্মচারী। 

মিনি বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট পরিবহন ব্যবসায়ী শ্যামলী যাত্রি পরিবহনের মালিক অবনী কুমার ঘোষ বলেন, এক কথায় ভয়াবহ।পরিস্থিতি যেভাবে চলছে তাতে খুব শিগগিরই কোনও আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না। তিনি বলেন, সৌহার্দে্র বন্ধন হিসেবে দুই বাংলার মধ্যে যে যাতায়াতের সেতু বন্ধন গড়ে উঠেছিল তা এক প্রকার ভেঙে পড়েছে। দুই বাংলার মধ্যে যাতায়াতের জন্য অসংখ্য পরিবহনের বাস চলতো সেগুলো সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

তিনি জানান, এখন তাদের সৌহার্দ বাস প্রতিদিনের বদলে চলে সপ্তাহে একটি বা দুটি। সেগুলোতেও আট দশ জনের বেশি যাত্রী থাকে না। ফলে ঘোর সঙ্কটে রয়েছেন তিনিও। আর বাংলাদেশিদের উপর নির্ভর করে যে অসংখ্য পরিবহন সংস্থা গড়ে উঠেছিল সেগুলোর অনেকেই পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হয়েছে।         

বণিকসভার এক কর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে পর্যটক আসা ভিসা ও অন্যান্য কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। হাসপাতালের ব্যবসা মার খাচ্ছে। নিউ মার্কেট থেকে ই এম বাইপাসে তৈরি বহু হোটেল বাংলাদেশি রোগী ও তাদের পরিবারের উপরে নির্ভরশীল। সেখানে কলকাতা ও রাজ্যের ছেলেমেয়েরা কাজ করেন। বাংলাদেশিরা না আসায়  হোটেলের ব্যবসাও মার খেয়েছে। ফলে অনেকেই রুটিরুজি হারিয়েছেন। বিভিন্ন দোকানের কর্মচারীদেরও ছাঁটাই করা হচ্ছে।

শুধু নিউমার্কেট অঞ্চল নয়, গড়িয়াহাট, হাতিবাগানের মতো এলাকাগুলোর ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশিদের উপর নির্ভর করতেন। তারা এখন হা হুতাশ করছেন। একই চিত্র বড় বাজারের বড় বড় শাড়ির আড়ৎগুলোতেও। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণ শাড়ি ও পোষাক কিনে বাংলাদেশে পাঠাতেন সে সব এখন এক প্রকার বন্ধ।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়