প্রায় ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারির অভিযোগে অভিযুক্ত ভারতীয় পলাতক ব্যবসায়ী নীরব মোদির ছোট ভাই নেহাল দীপক মোদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই গ্রেপ্তারের ফলে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (পিএনবি) কেলেঙ্কারি মামলার তদন্তে নতুন গতি আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শনিবার (৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারতীয় কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) অনুরোধে ইন্টারপোলের জারি করা রেড কর্নার নোটিশের ভিত্তিতে গত ৪ জুলাই নেহাল মোদিকে গ্রেপ্তার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (পিএনবি) দুর্নীতির তদন্তে নতুন গতি আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নেহাল মোদির প্রত্যর্পণ ও গ্রেপ্তার নিয়ে ভারতকে দীর্ঘ এক আইনি ও কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তিনি রেড কর্নার নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলেও সেটি খারিজ হয়ে যাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত তাকে আটক করা সম্ভব হয়।
৪ জুলাই বেলজিয়ামের নাগরিক নেহাল মোদিকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ ইন্টারপোলের জারি করা রেড কর্নার নোটিশের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করে। এই নোটিশটি ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) অনুরোধে জারি করা হয়েছিল। দীর্ঘ আইনি ও কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শেষে এ গ্রেপ্তার কার্যকর হলো। এর আগে নেহাল মোদি রেড কর্নার নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করা হয়।
নেহাল মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে (পিএনবি) জড়িত ছিলেন। এই ব্যাংকিং জালিয়াতি প্রথম ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ফাঁস হয়, যার প্রধান অভিযুক্ত তাঁর বড় ভাই নীরব মোদি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর তদন্তে বাধা দেওয়া, সাক্ষীদের ভয় দেখানো এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ ধ্বংস করতে নীরবকে সহায়তা করেছিলেন নেহাল।
এ ছাড়া নেহাল মোদির বিরুদ্ধে তাঁর ভাইয়ের লুট করা অর্থ থেকে হাজার হাজার কোটি রুপি পাচারের অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে জানা গেছে, নেহাল এই অর্থ ভুয়া কোম্পানি এবং বিদেশে করা লেনদেনের মাধ্যমে পাচার করেছিলেন।
নেহাল মোদির প্রত্যর্পণ মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ে নেহাল মোদির পক্ষে জামিনের আবেদন করা হতে পারে, তবে মার্কিন প্রসিকিউশন ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে, তারা এই জামিনের বিরোধিতা করবে।
পিএনবি কেলেঙ্কারির কারণে ভারতীয় ব্যাংকিং খাতে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি রুপির (প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বেশি ক্ষতি হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। এর মধ্যে নীরব মোদির বিরুদ্ধে ৬ হাজার ৪৯৮ কোটি রুপি আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে এবং তাঁর মামা মেহুল চোকসি ৭ হাজার ৮০ কোটি রুপি সরিয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে।
২০১৮ সালের শুরুতে প্রথম পিএনবি কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে। অভিযোগ উঠেছিল, ব্যাংকের কিছু কর্মীর সহায়তায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নীরব মোদি ও তাঁর মামা মেহুল চোকসি। মুম্বাই কোর্টে অবস্থিত পিএনবির ব্র্যাডি হাউস শাখায় প্রথম এ বিষয়টি সামনে আসে। তবে পিএনবি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বিষয়টি জানানোর আগেই, নীরব মোদি ও মেহুল চোকসি ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ভারত থেকে পালিয়ে যান।
নীরব মোদি ২০১৯ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাজ্যে গ্রেপ্তার হন। তবে তিনি ভারতে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আপিল করে বর্তমানে লন্ডনের একটি কারাগারে বন্দী রয়েছেন। মেহুল চোকসি বর্তমানে অ্যান্টিগার একটি কারাগারে আছেন।