শিরোনাম
◈ ইতালি উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকা ডুবে ২০ জনের মৃত্যু, বহু নিখোঁজ ◈ নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে, এনসিপি’র হয়ে করবো কি-না সিদ্ধান্ত নেইনি: আসিফ মাহমুদ ◈ গুলশানে চাদাবাজিতে গ্রেফতারের আগে অপুর রেখে যাওয়া ভিডিও বার্তা ◈ পুলিশ ও উপদেষ্টার ভাইয়ের মামলা থেকে জামিনে মুক্তি পেলেন মুরাদনগর বিএনপির ১৩ নেতাকর্মী ◈ ‌নেপা‌লের বিরু‌দ্ধে দু‌টি প্রী‌তি ম‌্যাচে হামজা চৌধুরী‌কে নিয়ে বাংলাদেশের প্রাথমিক দল  ◈ সাদা পাথর লুটপাট বন্ধে প্রশাসনের পাঁচ দফা উদ্যোগ ◈ ‘বাকিতে খাবার না দেওয়ায়’ হোটেল মালিককে গুলি ◈ সেনাপ্রধানের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার, আইএসপিআরের সতর্কবার্তা ◈ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ৩ গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব ◈ প্লট–ফ্ল্যাট বরাদ্দে সচিব, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিসহ যাঁদের কোটা বাতিল

প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:২১ দুপুর
আপডেট : ১৪ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মুখ খুলে ঘুমানো: সাধারণ অভ্যাস নাকি গুরুতর রোগের লক্ষণ?

ঘুমের মধ্যে মুখ খুলে শ্বাস নেওয়া শিশুদের মধ্যে বেশ সাধারণ একটি বিষয়। অনেক প্রাপ্তবয়স্কেরও এই অভ্যাসটি রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর কারণগুলো সাধারণ, যেমন – সর্দি-কাশির কারণে নাক বন্ধ থাকা, অ্যালার্জি বা টনসিলের সমস্যা। তবে এই অভ্যাসটি যদি নিয়মিত এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, যার নাম স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea)

সাধারণ কারণ

গুরুতর কোনো রোগ ছাড়াও কিছু সাধারণ কারণে মানুষ মুখ খুলে ঘুমাতে পারে। যেমন:

গুরুতর কারণ: অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (Obstructive Sleep Apnea - OSA)

যখন মুখ খুলে ঘুমানো একটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন চিকিৎসকেরা এটিকে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (OSA)-এর একটি অন্যতম প্রধান লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করেন।

স্লিপ অ্যাপনিয়া কী?
এটি একটি ঘুম-সম্পর্কিত মারাত্মক ব্যাধি, যেখানে ঘুমের মধ্যে একজন ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস বারবার আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায় এবং আবার শুরু হয়। এই শ্বাস বন্ধের সময়কাল কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট বা তার বেশিও হতে পারে।

কেন এমন হয়?
ঘুমের সময় গলার পেছনের নরম টিস্যু বা মাংসপেশি শিথিল হয়ে শ্বাসনালীকে বন্ধ করে দেয়। মস্তিষ্ক যখন বুঝতে পারে শরীর অক্সিজেন পাচ্ছে না, তখন এটি ব্যক্তিকে জাগিয়ে তোলে যাতে শ্বাসনালী আবার খুলে যায়। এই প্রক্রিয়াটি রাতে বারবার ঘটতে পারে, যার ফলে গভীর ঘুম ব্যাহত হয়।

স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রধান লক্ষণসমূহ

আপনার বা আপনার সঙ্গীর মধ্যে নিচের লক্ষণগুলো থাকলে সতর্ক হওয়া জরুরি:

  • প্রচণ্ড জোরে নাক ডাকা: প্রায়ই এটিকে স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রথম সতর্কবার্তা হিসেবে ধরা হয়।

  • শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া: ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া বা হাঁসফাঁস করা, যা পাশে থাকা ব্যক্তি লক্ষ্য করতে পারেন।

  • হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া: শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতি বা বিষম খাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে ঘুম ভেঙে যাওয়া।

  • বুক ধড়ফড় করা: মাঝরাতে ঘুম ভাঙার পর বুকে ধড়ফড়ানি বা দ্রুত হৃদস্পন্দন অনুভব করা।

  • দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুম: রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরেও দিনের বেলায় অতিরিক্ত ক্লান্তি বা ঘুম ঘুম ভাব।

  • সকালে মাথা ব্যথা: ঘুম থেকে ওঠার পর প্রায়ই মাথা ব্যথা হওয়া।

  • মনোযোগের অভাব ও বিরক্তি: দিনের বেলা কাজে মনোযোগ দিতে না পারা এবং মেজাজ খিটখিটে থাকা।

কারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন?

আপনার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থা এবং অভ্যাস স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়:

  • স্থূলত্ব বা অতিরিক্ত ওজন (Obesity): এটি স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রধান কারণ। গলার চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি জমলে তা শ্বাসনালীর উপর চাপ সৃষ্টি করে।

  • উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension): স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণে রক্তচাপ আরও বাড়তে পারে এবং এটি হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি তৈরি করে।

  • ডায়াবেটিস (বিশেষত টাইপ-২): ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রবণতা অনেক বেশি।

  • থাইরয়েডের সমস্যা: হাইপোথাইরয়েডিজম (Hypothyroidism) স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

  • ধূমপান ও মদ্যপান: ধূমপান শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং অ্যালকোহল গলার পেশিকে শিথিল করে দেয়, যা অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

  • পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারে কারও স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।

  • বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঝুঁকি বাড়ে।

মুখ খুলে ঘুমানোর অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি

স্লিপ অ্যাপনিয়া ছাড়াও, শুধুমাত্র মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাসের কারণেও কিছু সমস্যা হতে পারে:

  • মুখের স্বাস্থ্য: মুখের লালা শুকিয়ে যায়, যা দাঁতের ক্ষয় (Cavities) এবং মাড়ির রোগ (Gum Disease) হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া মুখে দুর্গন্ধ (Halitosis) হতে পারে।

  • অক্সিজেনের অভাব: মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে ফুসফুসে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না, যা শরীরকে ক্লান্ত করে দেয়।

  • রক্তচাপ বৃদ্ধি: দীর্ঘস্থায়ীভাবে কম অক্সিজেন সরবরাহ রক্তচাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

যদি আপনার সঙ্গী প্রায়ই বলেন যে আপনি ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ করে দেন বা আপনার মধ্যে উপরের একাধিক লক্ষণ প্রকাশ পায়, তবে দেরি না করে একজন ঘুম বিশেষজ্ঞ (Sleep Specialist) বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

চিকিৎসা ও প্রতিকার

চিকিৎসক আপনার ঘুমের ধরণ পর্যালোচনার জন্য একটি স্লিপ স্টাডি (Polysomnography) করার পরামর্শ দিতে পারেন। কারণ নির্ণয়ের পর চিকিৎসা শুরু হয়।

  1. জীবনযাত্রার পরিবর্তন: ওজন কমানো, ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ঘুমের অবস্থান পরিবর্তন (যেমন- চিৎ হয়ে না ঘুমিয়ে পাশ ফিরে ঘুমানো) অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর।

  2. সিপ্যাপ (CPAP) মেশিন: এটি অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা। এই যন্ত্রটি ঘুমের সময় শ্বাসনালীতে মৃদু বায়ুচাপ তৈরি করে এটিকে খোলা রাখতে সাহায্য করে।

  3. ওরাল অ্যাপ্লায়েন্স (Oral Appliance): দাঁতের ডাক্তারের তৈরি বিশেষ যন্ত্র যা ঘুমের সময় চোয়ালকে সঠিক অবস্থানে রেখে শ্বাসনালী খোলা রাখতে সাহায্য করে।

  4. সার্জারি: যদি টনসিল, অ্যাডিনয়েড বা নাকের গঠনগত সমস্যার কারণে এটি হয়, তবে সার্জারির মাধ্যমে তার সমাধান করা সম্ভব।

সামান্য নাক বন্ধের কারণে মাঝেমধ্যে মুখ খুলে ঘুমানো স্বাভাবিক। কিন্তু এটি যদি একটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয় এবং এর সাথে নাক ডাকা, শ্বাস বন্ধ হওয়া বা দিনের বেলা অতিরিক্ত ক্লান্তির মতো লক্ষণ থাকে, তবে এটিকে অবহেলা করা উচিত নয়। এটি স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো একটি গুরুতর রোগের ইঙ্গিত হতে পারে, যা হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

সূত্র:

  • Mayo Clinic. (2023). "Sleep Apnea."

  • Johns Hopkins Medicine. "The Dangers of Uncontrolled Sleep Apnea."

  • National Heart, Lung, and Blood Institute (NHLBI). "What Is Sleep Apnea?"

  • Cleveland Clinic. (2022). "Mouth Breathing: What it is, Causes & Treatment."

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়