আমিরাতে বোরকা বলতে বোঝায় এক ধরনের সাজানো, শক্ত কাপড়ের মুখোশ, যা সাধারণত নাক ও ভ্রু ঢেকে রাখে, কখনও কখনও মুখের অংশও ঢাকে।
উপসাগরীয় দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বোরকা বলতে বোঝায় এক ধরনের সাজানো, শক্ত কাপড়ের মুখোশ, যা সাধারণত নাক ও ভ্রু ঢেকে রাখে, কখনও কখনও মুখের অংশও ঢাকে। তবে চোখ খোলা থাকে। একসময় এটি ছিল নারীদের দৈনন্দিন পোশাকের অংশ—যা সৌন্দর্য, শালীনতা, সামাজিক মর্যাদা এবং মরুভূমির কঠোর আবহাওয়া থেকে সুরক্ষার প্রতীক। এখন এটি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে, বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে হয়ে গেছে স্মৃতি আর তরুণীদের কাছে সাংস্কৃতিক প্রতীক হয়ে দেখা গেছে।
ভিজ্যুয়াল শিল্পী কারিমা আল শোমেলি জানান, এই বোরকা ধর্মীয় নয়, বরং আমিরাতি ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অতীতে বিভিন্ন বয়স ও অবস্থান বোঝাতে এর আকার ও রঙ পরিবর্তিত হতো—যেমন কিশোরী মেয়েরা পরতেন গাঢ় লাল বা কালো বোরখা, নববধূরা পেতেন সোনালি আভাযুক্ত বোরখা, আর বয়স্ক নারীরা বেছে নিতেন ছোট চোখের ফাঁকওয়ালা ডিজাইন। মরুভূমির বিভিন্ন উপজাতিরা সাত বছরের শিশুদেরও সূর্যের তাপ থেকে রক্ষার জন্য বড় আকারের বোরখা পরাতো। খবর খালিজ টাইমসের।
৭০ বছরের জাফারানা আহমেদ খামিস বিয়ের পর থেকেই ৪৬ বছর ধরে বোরকা পরে আসছেন। তার ভাষায়, ‘অতীতে এর স্পষ্ট নিয়ম ছিল—অবিবাহিত মেয়েরা বড় আকারের, প্রায় পুরো মুখ ঢেকে রাখা বোরখা পরত, আর বিবাহিত নারীরা ছোট আকারের ও বড় চোখের ফাঁকওয়ালা ডিজাইন পরতে পারত।’
৬৫ বছরের আইশা আলি আল-ব্লোশি বলেন, এখন বোরকা এমব্রয়ডারি, নীল রঙ বা সোনালি প্রলেপে জাতীয় দিবস ও বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা যায়। কিন্তু এগুলো এখন মূলত সাজসজ্জার জন্য, দৈনন্দিন জীবনের অংশ নয়। তার মতে, ভবিষ্যতে এটি কেবল আনুষ্ঠানিক বা ফ্যাশন অ্যাক্সেসরিই হয়ে থাকবে।
৮০ বছরের মরিয়ম সেলেম মনে করেন, তার সময়ে বোরকা ছিল প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার প্রতীক। তিনি প্রথম এটি পরেন নিজের বিয়ের রাতে, কারণ তখন অবিবাহিত মেয়েরা মুখ ঢাকার পোশাক পরত না। বাজার থেকে নীল রঙের কাপড় কিনে নিজ হাতে বোরকা বানাতেন এবং বিক্রিও করতেন।
আজ যদিও তরুণ প্রজন্ম হিজাব, নিকাব বা গাশওয়া পছন্দ করছে, তবুও জাফারানা, ব্লোশি ও মরিয়মদের মতো নারীরা এখনও এই ঐতিহ্য লালন করছেন, যা আমিরাতি নারীর পরিচয় ও দৃঢ়তার গল্প বলে, যদিও তা আর আগের মতো দৈনন্দিন জীবনের অংশ নয়। উৎস: চ্যানেল24