এন এ মুরাদ, মুরাদনগর : মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে নেই একজনও কর্মী। সৃষ্ট ছয়টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে, যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাঁদের দাবি—অবিলম্বে জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হোক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রটি তালাবদ্ধ। নেই কোনো চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী। রোগীরা এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কেন্দ্রের সামনেই মানুষ মলমূত্র ত্যাগ করছে, প্রস্রাব ও আবর্জনার তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কায় ভুগছেন।
ভূতাইল গ্রামের বাসিন্দা সুজন মুন্সি (২৮) বলেন, “প্রতিদিন শত শত রোগী এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যায়, যাদের বেশিরভাগই দরিদ্র। ডাক্তার নেই, বাউন্ডারি নেই, দুটি ভবনই পরিত্যক্ত। চারপাশে ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে, এখন এটি মূলত মানুষের প্রস্রাবের জায়গা হয়ে গেছে। তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এই হাসপাতালটি চালু করা জরুরি।”
স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম (৬০) বলেন, “যেকোনো রোগের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এই স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রই আমাদের একমাত্র ভরসা। শ্রীকাইল থেকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার, আর জেলা শহর ৫০ কিলোমিটার দূরে। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে উপজেলা বা জেলায় নেওয়ার আগেই অনেক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।”
সোনাকান্দা বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মফিজুল ইসলাম জানান, “শ্রীকাইল ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। স্বাধীনতার আগেই এখানে দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু হয়েছিল। সময়ের সাথে এর নাম পরিবর্তন হয়ে ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় এটি প্রায়ই বন্ধ থাকে, ফলে হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”
স্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনটি ভবনই এখন পরিত্যক্ত। একটি ঝরাজীর্ণ কক্ষে সপ্তাহে দুই দিন রোগী দেখেন অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মাজহারুল ইসলাম, যার মূল কর্মস্থল রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র। তিনি বলেন, “প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত রোগী দেখি। গড়ে প্রতিদিন ১০০ জনের মতো রোগী আসেন। কিন্তু জনবল না থাকায় অনেকে ফিরে যান। নতুন করে সৃষ্ট পদে জনবল নিয়োগ এবং অবকাঠামো উন্নয়ন হলে কেন্দ্রটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।”
মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম মানিক বলেন, “জনবল না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। নিয়োগ হলেই সমস্যার সমাধান হবে।”