এএফএম মমতাজুর রহমান, আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি : জ্যৈষ্ঠের টানা বৃষ্টি আর পরন্ত রোদ না থাকায় বগুড়ার আদমদীঘিতে পচে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের কাটা ধান।
কয়েক দিনের বৃষ্টির কারনে মাঠের কেটে রাখা পাকা ধান মাঠেই পচতে বসেছে। এমনকি কেটে আনা ধান মাড়াই করতে না পারাই সেগুলোতে চারা গজাতে শুরু করেছে। আবার কোথাও কোথাও ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ধানের বড় একটা অংশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে অতিবৃষ্টির কারনে অনেক এলাকায় বোরো ধান কাটতে পারছেন না কৃষকরা। ধানের জমি তলিয়ে যাওয়ায় অনেকে ধান কাটতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো কোনো জমিতে ধান কাটলেও আবহাওয়া খারাপ থাকায় তা শুকানো যাচ্ছে না। দিনমজুররা পারিশ্রমিক বেশি হাকছেন। আবার অনেকে ধান কাটতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এজন্য খেতেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন এই উপজেলার কৃষকরা।
এই উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় এবার আবাদ হয়েছে জিরাশাইল, সরু জাতের জিরাশাইল, সুবর্ণলতা, কলমিলতা ও কাটারিসহ দেশি জাতের ধানের চাষ।
সরেজমিনে অনেক এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কাটা ধান জমির অ্যাইলে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছেন। আবার কেই রাস্তার পাশে তুলেছেন তাদের স্বপ্নের ফসল। ধান শুকনো রাখতে তালপাতা, বস্তার তৈরি চটি বা তারপুলিন ব্যবহার করেছেন অনেকে। আবার অনেক কৃষক ধান মাড়াই করেছেন কিন্তু শুকাতে পারছেন না।
ফরিদুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, ধান শুকাতে না পারলে বিক্রি বা সিদ্ধ কোনটাই সম্ভব হবে না। কাঁচা ধানে দু-তিনদিনের মধ্যে চারা গজাচ্ছে। আর এসব ধানের চালের ভাত খাওয়া যাবেনা। দুর্গন্ধ ছড়াবে। ভূক্তভোগী আরেক কৃষক ইদ্রিস আলম জানান, মূলত ওইসব জমিতে আমন ধান কাটার পর সরিষা ও আলুর আবাদ করা হয়েছিল। এ কারণে কিছুটা দেরি হয়েছিল বোরো ধান রোপণ করতে। আবার অনেকে কাটারি ধান রোপণ করেছিল। এই জাতের ধান পাকতে ও কাটতে বেশি সময়ের প্রয়োজন পরে। ফলে অনেক কৃষকই ধান কাটতে ও ঘরে তুলতে পারেনি। আর এদিকে জ্যৈষ্ঠের প্রথম থেকেই টানা বৃষ্টিতে ধান কাটায় বাগড়া পরে। পাকা ধান ঘরে তুলতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পরেছেন কৃষকরা।
আদমদীঘি উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে মোট ১২ হাজার ৪’শ ৫০ হেক্টর জমিতে ইরি- বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। আদমদীঘি উপজেলা কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারী জানান, এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম বেশি পাওয়ায় সন্তোষ্ট এ অঞ্চলের কৃষকরা। অনেক কৃষকই জমিতে দেরিতে ধান রোপণ করেছেন। এজন্য অনেক জমির ধান এখনো ঘরে উঠেনি। তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন ধরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। আবহাওয়া ভালো না হলে চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন চাষিরা। এ বছর অতি বৃষ্টির কারণে দেরিতে রোপণ করা ধান কৃষকরা কাটতে পারছেন না। কৃষকদের ধান পাকলে দ্রুত কাটার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।