নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে পাচারকৃত টাকার পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। এর ভিত্তিতে আমরা আন্দাজ করছি ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। যারা টাকা পাচার করেছে তাদের সম্পদ জব্দ করা হচ্ছে, যাতে এসব সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে আবার নতুন করে যেন পাচার না করে। মঙ্গলবার (২৭ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে আমাদের প্রধান কাজ হলো, সর্বোচ্চ পরিমাণ সম্পদ জব্দ করা। যারা পাচার করেছে তাদের জেলে পোরা কঠিন কাজ, এমন কোথাও হয়নি। আমাদের লক্ষ্য হলো, ব্যাংক থেকে টাকা চলে গেলে সেই টাকা উদ্ধার করা। এখানে বিভিন্ন আইনের জটিলতা আছে। আমি যদি ক্রিমিনাল আইনে মামলা করি, তাহলে সিভিল মামলা করতে পারব না। এখন ভাবতে হবে আমি কোন মামলা করব।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, এক্ষেত্রে বিদেশের আইনে কোনো ব্যত্যয় তারা মানবে না। আমরা কীভাবে মামলা করছি, যদি বিদেশে প্রশ্ন তোলে তাহলে আমাদের সব আটকে যাবে। কাজেই আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এভিডেন্স প্রস্তুত রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, এই টাকা উদ্ধার করার কাজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নয়। কিন্তু আমরা কাজটি নিয়েছি, যাতে গতিশীল থাকে। অন্য কোনো দপ্তর এটা করলে গতিশীল হতো না। তারপরও কোর্টে কেস ফাইল আমরা করব না, কেস ফাইল করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), কেস ফাইল করবে সিআইডি। তারা এভিডেন্স সংগ্রহ করছে, আমরাও যতদূর সম্ভব করছি। আমাদের অনেক এভিডেন্স সংগ্রহ করা হয়নি, ১১টি তদন্ত টিম কাজ করছে। কিন্তু যারা যুক্ত আছে, যারা একাজ করছে, এখনো তারা পুরোপুরি নিবেদিত হয়ে শুরু করতে পারেনি।
তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকগুলো একীভূত করা হবে। তবে সংখ্যাগুলো এখনই বলা যাচ্ছে না। প্রথমে অল্পসংখ্যক ব্যাংক একীভূত করা হবে। তারপর আরও কিছু ব্যাংক। নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে আগে সরকারিকরণ করা হবে। ব্যাংক অধিগ্রহণ করলে কোনো আমানতকারীর চিন্তা থাকবে না, সরকারই আমানতকারীর সব দায় নেবে। আমানতকারী যে ব্যাংকে আছে, সেখানেই থাকুন।
গভর্নর বলেন, সরকারি করলে সরকারকে অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হবে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। তারপর দেশি হোক বিদেশি হোক বিনিয়োগকারীকে আহ্বান করা হবে। সেটিও সময়সাপেক্ষ। পাচার হওয়া টাকা উদ্ধার প্রক্রিয়া বাংলাদেশের কাছে একেবারে নতুন। বিএফআইইউ বলুন, দুদক বা সিআইডি বলুন, কোনো সংস্থাই এ ধরনের কাজের জন্য প্রস্তুত ছিল না।
আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সহযোগিতামূলক কাজ বাংলাদেশে খুবই চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান যুক্ত হলে তা দ্রুত হবে, একাধিক প্রতিষ্ঠান হলে আমলাতান্ত্রিক বেড়াজাল বেঁধে ফেলবে। যে কারণে আমরা আইনগত পরিবর্তন করতে যাচ্ছি। পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারে বিদেশিদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি। কিন্তু দেশের কাজটি যদি এগিয়ে নিতে পারতাম, তাহলে দ্রুত হতো।
কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়নি উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, কোনো ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হলে প্রতিষ্ঠানটি সমস্যায় পড়বে, এটা আমরা চাই না। বিভিন্ন ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ফ্রিজ করে না। কোর্টের অর্ডারে জব্দ করা হয় বা কোনো এজেন্সির নির্দেশে করা হয়।