শিরোনাম
◈ পাক ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত না মেলানোর নীতি বহাল থাক‌বে, জানা‌লো ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ◈ নতুন বিপদের সতর্কতা: প্লেট লকড, জমছে শক্তি—বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প সময়ের ব্যাপার মাত্র ◈ ভূমিকম্পের পর সাগরের বুক চিড়ে যেভাবে জেগে উঠেছিল সেন্টমার্টিন দ্বীপ (ভিডিও) ◈ যেসব এলাকায় শনিবার ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না ◈ হাসিনার আপিল করার সুযোগ আছে: অ্যাটর্নি জেনারেল ◈ হবু স্বামীর মৃত্যুর দেড় বছর পর সন্তানের জন্ম, মাত্র ৯টি শুক্রাণু নিয়ে ইসরাইলি চিকিৎসকের অবিশ্বাস্য সফলতা! ◈ আ. লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা কাকে ভোট দিবেন, নানা অলোচনা ◈ উগান্ডাকে হারিয়ে নারী কাবা‌ডি বিশ্বকা‌পের সেমিফাইনালে ভারত ◈ পরিচয় জানা গেল পুরান ঢাকায় ভূমিকম্পে নিহত ৩ জনের  ◈ মৃত্যুদণ্ড, নিষেধাজ্ঞা ও পলাতক নেতৃত্ব, নেই অনুশোচনাও—কোন পথে ফিরবে আওয়ামী লীগ?

প্রকাশিত : ২২ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:১৮ দুপুর
আপডেট : ২২ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:১৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে কিডনি রোগে মৃত্যুহার বেড়ে নবম স্থান, জানুন প্রাথমিক লক্ষণগুলো

কিডনি রোগ বহুদিন ধরেই নীরবে বিস্তার লাভ করছিল, তবে সাম্প্রতিক বৈশ্বিক গবেষণা প্রথমবারের মতো এর ভয়াবহতা স্পষ্ট করে তুলেছে। ল্যানসেটে প্রকাশিত ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা সিকেডি এখন বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর নবম কারণ। ২০২৩ সালে প্রায় পনেরো লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে শুধু এই রোগেই। সংখ্যাটি শুধু চমকে দেওয়ার মতোই নয়, বরং বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য এক আতঙ্কজনক বার্তা।

গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ স্টাডি ২০২৩ অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ২০ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রায় ৭৮৮ মিলিয়ন মানুষ সিকেডিতে ভুগছেন। ১৯৯০ সালের তুলনায় এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। ধনী কিংবা দরিদ্র, সব দেশেই কিডনি রোগের বোঝা বাড়ছে, তবে উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।

কিডনি রোগ শুধু কিডনি বিকল করে না। গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদ্‌রোগজনিত মোট মৃত্যুর প্রায় ১১.৫ শতাংশের পেছনে আছে কিডনি কর্মহীনতা। অর্থাৎ সিকেডি এখন হৃদ্‌রোগের অন্যতম বড় ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

গবেষণা কী বলছে?

বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ডেটাবেস বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে সিকেডি মৃত্যুর শীর্ষ দশ কারণের তালিকায় উঠেছে। প্রায় ১.৪৮ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু এবং ৮০০ মিলিয়ন মানুষের কিডনি কার্যক্ষমতা হ্রাসের পেছনে দায়ী এই রোগ। ১৯৯০ সালে বিশ্বে প্রায় ৩৭৮ মিলিয়ন মানুষ সিকেডিতে আক্রান্ত ছিলেন। তিন দশকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণে।

গবেষণা বলছে, বিশ্বের অন্তত ১৪.২ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কোনো না কোনো পর্যায়ের কিডনি বিকলতা রয়েছে। উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে বয়স-ভিত্তিক রোগের হার সবচেয়ে বেশি, এরপরই দক্ষিণ এশিয়া। জনবহুল দেশ হওয়ায় চীন ও ভারতের আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি; চীনে ১৫২ মিলিয়ন এবং ভারতে অন্তত ১৩৮ মিলিয়ন মানুষ সিকেডিতে ভুগছেন।

কেন বাড়ছে কিডনি রোগ?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তিনটি প্রধান কারণে বিশ্বজুড়ে সিকেডির বোঝা বাড়ছে।

প্রথমত, মেটাবলিক রোগ বেড়ে গেছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও অতিরিক্ত ওজন দীর্ঘ সময় ধরে কিডনির ক্ষতি করে।
দ্বিতীয়ত, আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিডনি স্বাভাবিকভাবেই কিছু কার্যক্ষমতা হারায়। ফলে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা যত বাড়ছে, সিকেডি তত বাড়ছে।
তৃতীয়ত, স্বাস্থ্যসেবার অসম প্রাপ্যতা। অনেক দেশে এখনো কিডনি পরীক্ষার সুযোগ সীমিত, ফলে রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত হয় না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সময়মতো পরীক্ষা, সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে সিকেডির বড় একটি অংশ প্রতিরোধযোগ্য।

কেন সতর্ক হবেন?

কিডনি আমাদের শরীরের বর্জ্য ছাঁকন, তরল ভারসাম্য রাখা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ের কিডনি ব্যর্থতা প্রায়ই কোনো লক্ষণ দেখায় না। তাই অনেকেই বুঝতেই পারেন না যে কিডনির ক্ষতি শুরু হয়ে গেছে।

গবেষণা বলছে, কিডনি কর্মহীনতা শুধু কিডনি নয়, হৃদ্‌যন্ত্রকেও মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলে। বিষাক্ত বর্জ্য রক্তে জমা হতে থাকলে রক্তচাপ বাড়ে, শরীরে পানি জমে, এবং হৃদ্‌যন্ত্র অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়ে। ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

যে প্রাথমিক লক্ষণগুলো কখনোই উপেক্ষা করা যাবে না

•কিডনি রোগ শুরুর দিকে নীরব থাকে, তবে কিছু লক্ষণ সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখা দিতে পারে।
প্রস্রাবে পরিবর্তন, প্রস্রাবের পরিমাণ কমা বা বেড়ে যাওয়া, রাতে বারবার প্রস্রাবের চাপ তৈরি হওয়া। প্রস্রাব ফেনাযুক্ত বা রক্তমিশ্রিত দেখা গেলে তা বিশেষ সতর্কতার বিষয়।

•পা, পায়ের পাতা, হাত বা চোখের নিচে ফোলা ভাব দেখা দিলে তা শরীরে পানি জমার ইঙ্গিত হতে পারে।
•অস্বাভাবিক ক্লান্তি, মনোযোগ কমে যাওয়া, শরীরে চুলকানি, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, বমিভাব বা ক্ষুধামন্দা থাকলে কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
•শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা বুকে চাপ অনুভব করা রোগের আরও অগ্রসর অবস্থার সংকেত হতে পারে।

এই লক্ষণগুলোকে কখনোই বার্ধক্য বা ক্লান্তি ভেবে অবহেলা করা উচিত নয়। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে স্ক্রিনিং করানো জরুরি।

কী করতে পারেন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সচেতনতা বাড়ানো ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে আগামী বছরগুলোতে সিকেডির বোঝা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। নিয়মিত কিডনি ফাংশন পরীক্ষা, যেমন জিএফআর বা ইউরিন অ্যালবুমিন টেস্ট, রোগটি প্রথম পর্যায়েই শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে।

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন কিডনি রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।

একই সঙ্গে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, যাতে সবাই বুঝতে পারেন যে কিডনি রোগ শুধু কিডনির নয়, হৃদ্‌রোগের অন্যতম বড় কারণও হতে পারে।

বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়তে থাকা কিডনি রোগ এখন একটি নীরব মহামারি। প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করে সময়মতো চিকিৎসা নিলে রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই এখনই দরকার সচেতনতা, পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা।

সূত্র: জনকন্ঠ  

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়