 
    
বর্তমান সময়ে মানুষের অন্যতম বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ওজন বেড়ে যাওয়া। অনেকেই ওজন কমানোর আশায় মুখরোচক খাবার বর্জন করছেন, কেউ আবার প্রধান খাদ্য ভাতই খাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাত একেবারে বাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই; বরং সঠিকভাবে রান্না ও পরিমিতভাবে খেলে ভাত থেকেও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেক দেশে ভাতই প্রধান খাবার। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট ও গ্লাইসেমিক ইনডেক্স, যা ওজন ও রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। তবুও ভাতে ভিটামিন বি, ফলিক অ্যাসিড ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানও থাকে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
পুষ্টিবিদ লিনা আকতার বলেন, ভাত ওজন বাড়ায়—এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ওজন বাড়া বা কমার বিষয়টি নির্ভর করে ভাত কীভাবে রান্না হচ্ছে, কীসের সঙ্গে খাওয়া হচ্ছে এবং কতটুকু পরিমাণে খাওয়া হচ্ছে—তার ওপর।
লিনা আকতার বলেন, চাল রান্নার আগে অন্তত আধঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে সেই পানি ফেলে দিয়ে নতুন পানি দিয়ে ভাত রান্না করা উচিত। এতে চালের কিছু অংশের স্টার্চ বেরিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, অনেকে প্রেশার কুকারে ভাত রান্না করে মাড় না ফেলেই খান, যা ওজন কমাতে সহায়ক নয়। বরং মাড় ফেলে দিলে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমে যায়, ফলে ভাত আরও স্বাস্থ্যকর হয়।
কীভাবে খাবেন
শুধু ভাতের সঙ্গে মাছ, মাংস বা শাকসবজি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। তবে ভাতের সঙ্গে ডাল, শাকসবজি, সালাদ ও প্রোটিনজাত খাবার একসঙ্গে খেলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে শরীরে খাবার ধীরে ধীরে শোষিত হয় এবং দীর্ঘক্ষণ শক্তি ধরে রাখে।
খাওয়ার সময় ও পরিমাণ
দিনের বেলায় ভাত খাওয়াই উত্তম, কারণ তখন শরীরের নড়াচড়া বেশি হয়, ক্যালরি বার্ন হয়। কিন্তু রাতে কম পরিমাণে ভাত খেতে হবে, কারণ রাতে কার্যক্রম কম থাকায় ক্যালরি জমে যেতে পারে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে দিনে প্রায় ৩০ গ্রাম চালের ভাত (এক কাপ রান্না করা ভাত) খাওয়াই যথেষ্ট, যা থেকে প্রায় ১৫০–১৭০ কিলোক্যালরি পাওয়া যায়।
কোন চাল বেশি স্বাস্থ্যকর
পুষ্টিবিদ লিনা আকতার জানান, কালো চালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি, আর বাদামি চাল ফাইবারে ভরপুর—যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
তাই ভাত খাওয়া বন্ধ নয় বরং সচেতনভাবে পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে ভাত খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শরীরও সুস্থ থাকবে এমনটাই মত এই পুষ্টিবিদের।
সূত্র: পুষ্টিবিদ লিনা আকতার, রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, দিনাজপুর
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
