সুস্থ শরীর মানেই শুধু রোগমুক্ত দেহ নয়, বরং উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত ত্বকও সুস্থতার অন্যতম পরিচায়ক। কিন্তু অনেকেই লক্ষ্য করেন, হঠাৎ করে মুখ বা শরীরের ত্বক ফ্যাকাসে, নির্জীব কিংবা কালচে হয়ে উঠছে। অনেক সময় এটি শুধুমাত্র রোদে পুড়ে যাওয়ার ফলাফল নয়, বরং এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি।
চর্ম বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্বকে মেলানিন উৎপাদনের ভারসাম্য নষ্ট হলে ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারিয়ে কালচে ভাব দেখা দিতে পারে। এই মেলানিন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কিছু ভিটামিন সরাসরি ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে ভিটামিন সি, বি১২, এ, ডি ও বি-কমপ্লেক্স–এর ঘাটতি ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশন, দাগ, ছোপ ও রং পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হতে পারে।
ঘাটতির লক্ষণ:
ত্বক বিবর্ণ ও ম্লান হয়ে যাওয়া
চোখের নিচে কালো দাগ
সহজে ক্ষত হওয়া ও শুকাতে দেরি হওয়া
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার:
আমলা, পেয়ারা, লেবু, কমলালেবু, স্ট্রবেরি, ব্রকোলি, কাঁচা মরিচ, ধনে পাতা ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র: Healthline - Vitamin C and Skin Health
ভূমিকা:
ভিটামিন বি১২ রক্তে লোহিত কণিকা তৈরি এবং স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতায় ভূমিকা রাখে। এর অভাবে ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশন, বিশেষ করে মুখ, গলা, হাত-পায়ের ত্বকে গাঢ় দাগ বা কালো ছোপ পড়তে পারে।
ঘাটতির লক্ষণ:
হাত-পা কালো হয়ে যাওয়া
ত্বকে হলদেটে ভাব
দুর্বলতা ও মাথা ঘোরা
ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাবার:
ডিম, দুধ, দই, মাছ, মুরগির মাংস, গরুর কলিজা, সামুদ্রিক খাবার।
(বি.দ্র.: নিরামিষভোজীদের ক্ষেত্রে বি১২ ঘাটতি বেশি দেখা যায়।)
তথ্যসূত্র: WebMD - Vitamin B12 Deficiency and Skin
ভূমিকা:
ভিটামিন এ ত্বকের কোষ পুনর্গঠন ও ময়শ্চার রক্ষা করতে সাহায্য করে। এর ঘাটতিতে ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ ও নির্জীব হয়ে যেতে পারে।
ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার:
গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, কলিজা, ডিমের কুসুম, দুধ ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র: Mayo Clinic - Vitamin A
ভূমিকা:
ভিটামিন ডি সূর্যালোকের মাধ্যমে তৈরি হয় এবং এটি ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখে। ঘাটতির কারণে ত্বকে রুক্ষতা ও সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।
ভিটামিন ডি পেতে পারেন:
রোদে হাঁটুন (সকাল ৮টা–১০টার মধ্যে)
চর্বিযুক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, ফোর্টিফায়েড দুধ ও সিরিয়াল
তথ্যসূত্র: Cleveland Clinic - Vitamin D Deficiency and Skin
ভূমিকা:
বি-কমপ্লেক্স গ্রুপের ভিটামিন যেমন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, বি৭, বি৯ এবং বি১২ ত্বকের কোষ গঠনে ও স্নায়ু সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঘাটতির ফলে ত্বক মলিন, রুক্ষ ও দাগযুক্ত হয়ে যেতে পারে।
বি-কমপ্লেক্স খাবার:
শাকসবজি, দুধ, ডিম, বাদাম, ছোলা, মুসুর ডাল, মাছ, কলিজা, পুরো শস্য।
ত্বকের রং বা উজ্জ্বলতায় হঠাৎ পরিবর্তন এলে তা অবহেলা করা উচিত নয়। বারবার হাইপারপিগমেন্টেশন বা কালচে দাগ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। রক্ত পরীক্ষা করে ভিটামিনের মাত্রা নির্ণয় করা যেতে পারে এবং প্রয়োজনে খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন অথবা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
ত্বক শুধু বাইরের সৌন্দর্য নয়, এটি আপনার ভেতরের স্বাস্থ্যও প্রকাশ করে। সঠিক পুষ্টি, যথেষ্ট বিশ্রাম, মানসিক চাপমুক্ত জীবন এবং ভিটামিনে ভরপুর সুষম খাদ্যই পারে আপনাকে সত্যিকারের উজ্জ্বল করে তুলতে।
✦ বিশেষ দ্রষ্টব্য:
উপরোক্ত তথ্যগুলো বিশ্বস্ত মেডিকেল ওয়েবসাইট এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। ত্বকের সমস্যার ক্ষেত্রে নিজে ওষুধ না খেয়ে, আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বাঞ্ছনীয়। তথ্যসূত্র: Healthline, WebMD, Mayo Clinic