শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৫ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:০৫ বিকাল
আপডেট : ০৫ আগস্ট, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হোমনা-মুরাদনগর সড়ক যেন দুর্ঘটনার ফাঁদ, ভোগান্তিতে লাখো মানুষ

মোর্শেদুল ইসলাম শাজু, হোমনা: কুমিল্লার হোমনা ও মুরাদনগর উপজেলার সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সড়কটি এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে হোমনা উপজেলা সদর থেকে রঘুনাথপুর পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে খানাখন্দ ও গর্তের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

এই ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ঢাকা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে হোমনা, তিতাস, মুরাদনগর, দেবিদ্বার ও বাঞ্ছারামপুরের কয়েক লাখ মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সংস্কারের অভাবে এর অবস্থা এতটাই নাজুক যে, পথচারী, শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সড়কের এই বেহাল দশার কারণে পণ্যবাহী ট্রাক, বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি, অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ
হোমনা থেকে কাশিপুর পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ, দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা রয়েছে। ঘাড়মোড়া উচ্চ বিদ্যালয়, কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং রঘুনাথপুর দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। এক স্কুলছাত্রী আফরোজা জানায়, “প্রতিদিন স্কুলে যেতে ভয় লাগে। কখন রিকশা গর্তে উল্টে যায়, বলা যায় না।”

ঘাড়মোড়া বাজারটি দেশের অন্যতম বৃহৎ গরুর হাট। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা গরু ব্যবসায়ীরা এই বেহাল সড়কের কারণে চরম বিপাকে পড়েন। গরু ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, “রাস্তায় ট্রাক আটকে যায়, গরু ওঠানো-নামানো কঠিন হয়ে পড়ে।”

শ্রীপুর বাজারের ফল ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, “শুষ্ক মৌসুমে ধুলোবালি এবং বর্ষার সময় কাদাপানিতে দোকানের জিনিসপত্র নষ্ট হয়। দুর্ঘটনা তো লেগেই আছে।”

চালক ও স্থানীয়দের হতাশা
দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় সিএনজি ও রিকশাচালকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সিএনজিচালক মো. সবুজ মিয়া বলেন, “গত আট বছরে রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। যাত্রী নিয়ে বহুবার সিএনজি উল্টে দুর্ঘটনা ঘটেছে, গাড়ি ভেঙেছে এবং যাত্রীরা আহত হয়েছেন।”

রিকশাচালক আলাউদ্দিন জানান, “ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে যাত্রীরা রিকশায় উঠতে চান না। রিকশা চালিয়ে আয়-রোজগার করা কঠিন হয়ে পড়েছে।”

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল হক সরকার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “এই রাস্তায় রিকশায় উঠলে মনে হয় কোমরের হাড়গোড় নড়ে যাচ্ছে। আমরা কি এই অসহনীয় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাব না?”

কর্তৃপক্ষের আশ্বাস
ঘাড়মোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান মোল্লা জানান, ২০১৬ সালে একবার রাস্তাটি সংস্কার করা হয়েছিল। এরপর থেকে এর আর কোনো মেরামত করা হয়নি। তিনি বলেন, “আমি ইউএনও’র সঙ্গে কথা বলেছি, তিনিও সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।”

হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষমোলিকা চাকমা বলেন, “জেলা সমন্বয় সভায় এই সড়ক নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। ছোটোখাটো মেরামত হলেও জরুরি ভিত্তিতে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন।”

কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের গৌরীপুর সড়ক উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁঞা জানান, এই রাস্তার টেন্ডার হয়েছে এবং কার্যাদেশ প্রক্রিয়াধীন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যাদেশ শুরু হলে আগস্ট মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়