শিরোনাম
◈ দোয়ারায় বিএসএফের গুলিতে ১জন নিহত ◈ সংস্কার ও বিচার চলমান প্রক্রিয়া, গণতন্ত্রের বিকল্প নেই: রাজশাহীতে ড. মঈন খান" ◈ কালীগঞ্জে বিদেশী পিস্তল সহ একাধিক মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী ঘ্যানা গ্রেফতার ◈ আজও বিদ্যুৎবিহীন জীবন: নিম্নমানের সোলারে বিপাকে কুড়িগ্রামের দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ ◈ জুলাই-আগস্ট হত্যায় রাজসাক্ষী হলে মামুনকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমার ইঙ্গিত ◈ যেখানেই মব জাস্টিস সেখানেই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে: রিজওয়ানা হাসান ◈ চাঁদাবাজির তথ্য মেলেনি, ভাঙারি দোকান দখল নিয়ে দ্বন্দ্বেই মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড: বলছে ডিএমপি ◈ মার্কিন শুল্ক হুমকির মুখে বাংলাদেশে কিছু পোশাক অর্ডার স্থগিত করেছে ওয়ালমার্ট ◈ চট্টগ্রামে স্ত্রীকে ১১ টুকরা করা স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেফতার ◈ টি-‌টো‌য়ে‌ন্টি বিশ্বকা‌পে কীভা‌বে আস‌লো ফুটব‌লের দেশ ইতালি 

প্রকাশিত : ১১ জুলাই, ২০২৫, ০১:১৯ রাত
আপডেট : ১২ জুলাই, ২০২৫, ০৬:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

১০০ বছর বয়সেও কর্মচঞ্চল মাহাথির: দীর্ঘায়ুর ৬টি অভ্যাস জানালেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী

জনজীবনের চাপ, রাজনীতি ও উদ্দেশ্যময় পথচলার মাঝে কেউ যখন শতবর্ষে পৌঁছান, সেটি নিঃসন্দেহে অনন্য ঘটনা। ২০২৫ সালের ১০ জুলাই ১০০ বছরে পা রেখেছেন মালয়েশিয়ার দীর্ঘতম সময়ের প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ। বয়সের এই মাইলফলক পার করলেও তাঁর কণ্ঠে রয়েছে আগের সেই স্পষ্টতা, চিন্তায় প্রখরতা, আর চারপাশের জগৎকে বোঝার তীব্র আগ্রহ। এই বয়সেও তিনি জানিয়ে দিলেন, কীভাবে শৃঙ্খলা, কৌতূহল ও সচেতন জীবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে এই সুস্থ দীর্ঘায়ু।

এখানে নেই কোনো জাদুকরী ওষুধ বা পুরোনো প্রবাদবাক্য। বরং উঠে এসেছে নিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, মানসিক সক্রিয়তা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের গল্প। এটি কেবল একজন শতবর্ষী মানুষের কাহিনি নয়, বরং কিভাবে শরীর ও মনকে ক্ষয়মুক্ত রেখে শতায়ু হওয়া যায়, তারই বাস্তব উদাহরণ।

অতিরিক্ত নয়, নিয়মিত শারীরিক সক্রিয়তা

দ্য স্ট্রেইটস টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাহাথির বলেন, “সক্রিয় থাকতে হবে। বসে থেকে কিছু না করাটা শরীরের জন্য খারাপ।”

তিনি কোনো উচ্চমাত্রার ব্যায়াম করেন না। বরং কেবল অক্রিয়তা এড়িয়ে চলেন। হাঁটা, সভা-সেমিনারে অংশ নেওয়া কিংবা দৈনন্দিন কাজে চলাফেরা এইসবই শরীর সচল রাখে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেশি ক্ষয় ও হৃদ্‌যন্ত্রের কর্মক্ষমতা কমে যায়। নিয়মিত হালকা শারীরিক নড়াচড়া যেমন হাঁটা বা হালকা গৃহস্থালি কাজ শরীরকে সজীব রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায়ও দেখা গেছে, বয়স্কদের জন্য হালকা নড়াচড়া কঠিন ব্যায়ামের চেয়ে বেশি উপযোগী এবং এটি পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি, স্মৃতিভ্রংশ ও দুর্বলতা কমাতে সহায়ক।

মস্তিষ্ককেও ব্যায়াম দরকার শরীরের মতোই

মাহাথির বলেন, “মস্তিষ্ক ব্যবহার না করলে এটি দুর্বল হতে শুরু করে, ভুলতে থাকে।আমি পড়ি, লিখি, মানুষের সঙ্গে কথা বলি, বক্তৃতা দিই।”

তিনি কেবল সময় কাটানোর জন্য এসব করেন না। বরং এটি তাঁর মস্তিষ্কের জন্য নিয়মিত পুষ্টির মতো। নিবন্ধ লেখা, সংলাপে অংশ নেওয়া কিংবা সংবাদপত্র পড়ার মধ্য দিয়ে তিনি নিজের চিন্তাশক্তিকে সক্রিয় রাখেন।

গবেষণা বলছে, যারা নিয়মিত পড়া, লেখা বা আলোচনায় জড়িত থাকেন, তাদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কম। এটি বুদ্ধিমত্তার নয়, বরং সক্রিয় চিন্তার অভ্যাসের ফল। মস্তিষ্ককে ব্যবহার করলে সেটিও যেমন পেশির মতো আরও শক্তিশালী হয়, মাহাথির তার জীবন্ত প্রমাণ।

অবসরের বদলে উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবন

সরকারি দায়িত্ব ছাড়ার পরও তিনি জীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেননি। লেখালেখি, পরামর্শ দেওয়া, আলোচনায় অংশ নেওয়া সবই চালিয়ে গেছেন আগের মতো।

তাঁর কাছে অবসর মানে নিষ্ক্রিয়তা নয়, বরং দিক পরিবর্তন। দায়িত্ববোধ ও জীবনের উদ্দেশ্যই তাঁর চালিকাশক্তি।

বয়সকালে যারা সমাজসেবা, পরামর্শ দেওয়া বা সৃজনশীল কাজে যুক্ত থাকেন, তাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং মৃত্যুহারও তুলনামূলকভাবে কম থাকে। প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার একটি অর্থবহ কারণ থাকাটাই দীর্ঘজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি।

মানসিক দৃঢ়তা ও আত্মনিয়ন্ত্রণে দক্ষতা

রাজনৈতিক জীবন ছিল তাঁর জন্য সহজ পথ নয়। সমালোচনা, আন্তর্জাতিক চাপ, ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সংকট সবই মোকাবিলা করতে হয়েছে। তবুও তাঁর মধ্যে কখনো মানসিক ভেঙে পড়ার লক্ষণ দেখা যায়নি।

যদিও তিনি ধ্যান বা মানসিক সচেতনতার কথা বলেন না, তবুও চাপের মধ্যেও স্থির থেকে সমস্যা সামলানোর ক্ষমতা হয়তো তাঁর শরীরকে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ থেকে রক্ষা করেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপের কারণে টেলোমিয়ার (ডিএনএর প্রটেকটিভ ক্যাপ) ছোট হয়ে গিয়ে বয়সজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ে। মাহাথিরের মতো নিয়ন্ত্রিত মানসিকতার মানুষরা সেই ক্ষতির হাত থেকে অনেকটা রক্ষা পান।

ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে দূরত্ব

তিনি সবসময়ই পরিষ্কার জীবনযাপন, মিতাহার এবং ধূমপান বা মদ্যপানের বিরোধিতা করে এসেছেন। কোনো ফ্যাড ডায়েট বা চটকদার পুষ্টি পরিকল্পনায় বিশ্বাস না করে, বরং সাদামাটা ও পরিমিত খাবারেই অভ্যস্ত।

এটি নিষেধ নয়, বরং সংযমের অভ্যাস।

অনেক দীর্ঘজীবী মানুষই কম খেতে পছন্দ করেন, বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলেন এবং ঐতিহ্যবাহী সম্পূর্ণ খাদ্যেই আস্থাশীল। বিশেষ করে ষাটের পর ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ করলে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো মেটাবলিক রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। মাহাথিরের অভ্যাস এ দিকেই ইঙ্গিত করে।

জীবনভর কৌতূহল ও শেখার আগ্রহ

১০০ বছর বয়সেও ড. মাহাথির এখনও নতুন বিষয়ে জানতে চান, তরুণদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন এবং নিজের চিন্তায় পরিবর্তন আনেন।

এই মানসিক নমনীয়তা বিরল, তবে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বয়স কখনোই তাঁর শেখার আগ্রহে বাধা হয়নি।

জীবনের শেষ পর্যায়েও শেখার প্রতি কৌতূহল ও উন্মুক্ততা নিউরোপ্লাস্টিসিটির (মস্তিষ্কের নতুন সংযোগ তৈরির ক্ষমতা) শক্তিশালী পূর্বাভাস। মাহাথিরের জীবন তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়।

ড. মাহাথির মোহাম্মদের দীর্ঘজীবন কেবল বয়সের গল্প নয়। এটি আত্মনিয়ন্ত্রণ, জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা, নিয়মানুবর্তিতা এবং জীবনের প্রতিটি স্তরে উদ্দেশ্য খোঁজার গল্প। তাঁর ছয়টি অভ্যাস আমাদের শেখায়, দীর্ঘায়ু শুধু সময়ের পরিমাণ নয়, বরং সেই সময় কেমনভাবে কাটানো হচ্ছে সেই গুণগত দিকও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়