তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন রৌফাবাদ এলাকায় স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ ১১ টুকরো করে গুম করার ঘটনায় ঘাতক স্বামী সুমনকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতারকৃত আসামী সুমন কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ এলাকার মো:সুন্দর আলী ছেলে। (১২ জুলাই) শনিবার বিকালে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানায় র্যাব-৯ সদস্যরা।
শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর থানাধীন ফুলবাড়িয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার সুমন কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানাধীন সুয়াগাজী এলাকার সুন্দর আলীর ছেলে।
এর আগে বুধবার (৯ জুলাই) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে পাহাড়িকা হাউজিংয়ের এফজেড টাওয়ারের ১০ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ফাতেমা বেগম পলি (৩২) খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ওই ফ্ল্যাটেই স্বামী সুমনের সঙ্গে থাকতেন। সুমন পেশায় গাড়িচালক। ফাতেমার বাড়ি কুমিল্লা সদর দক্ষিণে। তার বাবার নাম কামাল উদ্দিন। তাদের সিফাত নামে আট বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে।
গ্রেফতারের বিষয়টি শনিবার (১২ জুলাই) বেলা ১১টায় র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্প (বহদ্দারহাট) মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিং করে জানিয়েছেন র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল হাফিজুর রহমান।
এতে তিনি বলেন, গত ৯ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন রৌফাবাদ পাহাড়িকা হাউজিং সোসাইটির একটি ফ্ল্যাট বাসার ভেতরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে নিজ স্ত্রী ফাতেমা বেগম পলিকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর লাশ ১১ টুকরো করে ঘরের বিভিন্ন স্থানে ফেলে রেখে গুম করার চেষ্টা করে ঘাতক স্বামী। পরে সিকিউরিটি গার্ড মশিউর রহমান ফ্ল্যাট বাসা থেকে দুর্গন্ধ ও অস্বাভাবিক নড়াচড়া এবং পানির ফ্লাশের শব্দ শুনে ১০ম তলায় ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে ডাকাডাকি করলে প্রায় ৩০ মিনিটি পর সুমন বাসার দরজা খুলে এবং বাসায় অস্বাভাবিক নড়াচড়ার ও পানির শব্দের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে এলোমেলো কথাবার্তা বলে ও তাকে বাসায় প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করে। সিকিউরিটি গার্ড মশিউর রহমান জোরপূর্বক বাসায় ঢুকে রুমের বিভিন্ন স্থানে রক্তের দাগ, বাথরুমের ভেতরে রক্তমাখা কাপড় ও কমেডে মাংস দেখতে পান।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, বাসার বাইর থেকে তালাবদ্ধ করে স্থানীয়দের সহায়তার জন্য নিচে গেলে ঘাতক সুমন কৌশলে বাসার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে যায়। পরে সিকিউরিটি গার্ড মশিউর এবং স্থানীয় লোকজন বায়েজিদ থানা পুলিশকে খবর দিলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ভুক্তভোগীর ক্ষত-বিক্ষত শরীরের অংশ বিশেষ এবং রুমের খাটের নিচ থেকে পায়ের অংশ উদ্ধার করে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন রুবেল বাদী হয়ে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ঘাতক সুমনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলার দায়ের করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার সুমন র্যাবকে জানিয়েছে, গত ১০ বছর আগে পারিবারিকভাবে তারা বিয়ে করেন। বিয়ে পরবর্তী সময়ে আসামি সুমন কর্মসংস্থানের জন্য সৌদি আরব যায়। সেখানে ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশে ফিরে এসে নগরীতে পিকআপ গাড়ি চালাতে শুরু করে।
দেশে ফিরে আসার পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। গত ৯ জুলাই রাতে অজ্ঞাত ৬ থেকে ৭ জন যুবক তার বাসায় আসাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ঘাতক সুমন বাসায় থাকা দুটি ধারালো চাকু দিয়ে স্ত্রীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতর জখম করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ১১ টুকরো করে বাথরুমের কমেডে দিয়ে পানির ফ্লাশের সঙ্গে ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বলে স্বীকার করে।