স্বাস্থ্য ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানসিক স্বাস্থ্য একটি অবহেলিত এবং প্রায়শই ভুল বোঝা বিষয়। শরীরের যেকোনো অসুস্থতার চিকিৎসা গ্রহণকে স্বাভাবিকভাবে নেওয়া হলেও মানসিক অসুস্থতা নিয়ে কথা বলাটা এখনো অনেকের জন্য লজ্জার ও ভয়ভীতির বিষয়। এই সংকটের পেছনে রয়েছে একাধিক গভীর কারণ, যা শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার অংশ।
১. সামাজিক কুসংস্কার
দেশে মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে ‘পাগল’ তকমা জড়িয়ে আছে। কোনো ব্যক্তি যদি উদ্বেগ, বিষণ্নতা বা মানসিক চাপের কথা প্রকাশ করেন, তাহলে তাকে দুর্বল বা অস্বাভাবিক মনে করা হয়। এই ভয় থেকেই অনেকে তাদের সমস্যার কথা গোপন রাখেন এবং চিকিৎসা গ্রহণে পিছিয়ে থাকেন।
২. সচেতনতার অভাব
গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা পরিবারে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা খুবই সীমিত। অধিকাংশ মানুষ জানেন না যে উদ্বেগ, বিষণ্নতা, ট্রমা ইত্যাদি মানসিক সমস্যা চিকিৎসাযোগ্য এবং স্বাভাবিক বিষয়।
৩. অপর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা ও বিশেষজ্ঞের অভাব
বাংলাদেশে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, কাউন্সেলর ইত্যাদির সংখ্যা অত্যন্ত কম। সরকারি হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট সেবা বা ওয়ার্ড রয়েছে মাত্র কয়েকটিতে। গ্রামীণ এলাকায় এই সেবা প্রায় অনুপস্থিত।
৪. অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে অনেক সময় ব্যয়বহুল থেরাপি, নিয়মিত পরামর্শ এবং ওষুধের প্রয়োজন হয়। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের পক্ষে এসব ব্যয় বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। সরকারি সহায়তার অভাব এ সমস্যাকে আরও গভীর করে তোলে।
৫. চিকিৎসা নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা
অনেক সময় মানসিক অসুস্থতা অলৌকিক কারণে ঘটে বলে বিশ্বাস করা হয়। যেমন: জ্বিনের আসর, পাপের ফল, কুলক্ষণ ইত্যাদি। ফলে ভুক্তভোগীরা চিকিৎসকের বদলে ঝাড়ফুঁক, তাবিজ-কবচের আশ্রয় নেন।
মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলা কি মানসিক রোগ?মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলা কি মানসিক রোগ?
৬. শিক্ষার সীমাবদ্ধতা ও ভুল ধারণা
অনেক পরিবারেই মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। শিশুর আচরণগত সমস্যা, কিশোর-কিশোরীদের মানসিক চাপ, কর্মজীবীদের অবসাদ—এসব অনেক সময় অবহেলা বা শাসনের মাধ্যমে মোকাবিলা করা হয়, চিকিৎসার মাধ্যমে নয়।
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার এখনই সময়। প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষা কার্যক্রমে মানসিক স্বাস্থ্য অন্তর্ভুক্ত করা, সরকারি বিনিয়োগ ও নীতিমালার উন্নয়ন এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা। মানসিক স্বাস্থ্য শুধু একটি চিকিৎসার বিষয় নয়, এটি একটি মৌলিক মানবিক অধিকার।
ইনডিপেনডেন্ট নিউজ থেকে নেয়া