কুমিল্লার মুরাদনগরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া উপজেলার শিক্ষার্থীদের একাংশ। তবে অনুমতি ছাড়া মিছিল করার অভিযোগে পুলিশ বাঁধা দিলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে মুরাদনগর উপজেলার সদরে আল্লাহু চত্বরে বিক্ষোভ মিছিলটি করা হয়।
এ সময় মিছিল নিয়ে বের হলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন তারা। মুরাদনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমানের নেতৃত্ব পুলিশ সদস্যরা বাধা প্রদান করেন। ওসি জাহিদুর রহমানকে বিক্ষোভ মিছিলের ব্যানারটি কেড়ে নিতে দেখা গেছে।
এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের দাবিতে একটি মিছিল করছেন শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন বয়সের মানুষ। এ সময় উপজেলা সদরের আল্লাহু চত্বরের পাশে বোগদাদ রেস্টুরেন্টের সামনে এলে পুলিশ সদস্যরা তাতে বাধা প্রদান করেন। এ সময় ওসি জাহিদুর রহমানকে বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে ব্যানার কেড়ে নিতে দেখা যায়। পরে বিক্ষোভকারীরা ওসির গায়ে হাত তুলতে তেড়ে আসেন। ভিডিওতে ওসিকে বারবার বলতে শোনা যায়, ‘কোনো মিছিল করা যাবে না’।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন বলেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ দাবি করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এতে পুলিশ বাঁধা দিলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তবে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই নোমান আহমেদ কলেজের কিছু শিক্ষার্থী এসে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। এতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী মিছিলের নেতৃত্ব দেয়। খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে তাদের অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয় এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে। আমরা কৌশলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুরাদনগর উপজেলার আহ্বায়ক উবায়দুল হক বলেন, এই বিক্ষোভের বিষয়ে আমাদের তথা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা জানতে পেরেছি আওয়ামী লীগের লোকজন কৌশলে কিছু শিক্ষার্থীকে প্ররোচিত করে মিছিলটি করিয়েছে আমাদের সংগঠনের নাম ব্যবহার করে। আমরা জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন নাহিদুল ইসলাম, মো. রাফি, মীর আসিফ আবদুল্লাহ, আহসান আহমেদসহ স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি। তাঁরা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে মাইকে উল্লেখ করা হয়।
বক্তারা বলেন, ‘তাঁরা আন্দোলন করেছিলেন বাক্স্বাধীনতার জন্য; কিন্তু মুরাদনগরে তাঁরা তা দেখতে পাচ্ছেন না। আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে ঢাকায় আন্দোলন হলেও প্রশাসন বাধা দেয় না। তাহলে মুরাদনগরে বাধা কেন? মুরাদনগর আসিফ মাহমুদের নিজের উপজেলা বলে? জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশ স্বৈরাচারমুক্ত হলেও আসিফ মাহমুদের মতো কিছু উপদেষ্টা চেয়ারে বসে দুর্নীতি করে বেড়াচ্ছেন।’ তাঁরা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের দাবি জানান।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলার আহ্বায়ক উবায়দুল হক সিদ্দিকী বলেন, বিক্ষোভ মিছিল করা কেউই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লোকজন নন। আওয়ামী লীগের লোকদের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা এই কর্মসূচি করেছেন। যে নাহিদুল বক্তব্য দিয়েছেন, তিনি আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জেলা কমিটিতে ছিলেন। তবে ছাত্রদলের রাজনীতি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাঁকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের অনুসারীরা এ কর্মসূচি করেছেন।