শাহীন খন্দকার: ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাক্তিগত চিকিৎসক ইমিরেটস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, শীতের আগমনের আগ পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব চলতেই থাকবে। মে থেকে অক্টোবর, বিশেষ করে বর্ষাকালে ডেঙ্গুজ¦রের প্রকোপ বিগত কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ সময়টিতে মাঝেমাঝে হালকা বৃষ্টির পানি জমে থাকা স্থানে এডিস মশা ডিম পারে এবং বংশবৃদ্ধি করছে। এই মশাগুলোই ঘরে যাচ্ছে। এ কারণেই এডিস মশাকে গৃহপালিত মশা বলা হয়।
অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু প্রধানত দুই ধরনের। এক. ক্লাসিক্যাল এবং দুই. ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সাথে সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
ডা. আবদুল্লাহ আরো বলেন, ডেঙ্গু হলে ১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত জ¦র হতে পারে। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি, মাংসপেশিসহ মাথাব্যথা ও চোখের পিছনে তীব্র ব্যথা হয়। তাই এই জ¦রের আরেক নাম ব্রেক বোন ফিভার।
শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যথার তীব্রতায় স্পর্শ করলেই তারা কেঁদে ওঠে, খিটখিটে মেজাজের হয়। জ্বর হওয়ার ৪-৫ দিন সারা শরীরে লালচে দানা দেখা যায়। যাকে স্কিন র্যাশ বলা হয়। যা অনেকটা এলার্জি বা ঘামাচির মত। এর সাথে বমিবমি ভাব ও এমনকি বমি হতে পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং রুচি কমে যায়। সাধারণত জ¦র ৪-৫ দিন থাকার পর তা এমনিতেই চলে যায়। কোনো কোনো রোগীর ২-৩ দিন পর আবার জ্বর আসে। একে বাইফেজিক ফিভার বলে। ডেঙ্গু শক সিড্রোম হচ্ছে ডেঙ্গু জ¦রের ভয়াবহ একটি দিক।
ডেঙ্গু জ¦রের ভয়াবহ রূপ হলো ডেঙ্গু শক নিড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সাথে সার্কুলেটরী ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণ হলো রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া, নাড়ীর স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়, শরীরের হাত পা ও অন্যান্য অংশ ঠাণ্ডা হয়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায়, হঠাৎ করে রোগী অজ্ঞান হতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ আরো বলেন, এডিস মশা সুন্দর সুন্দর ঘরবাড়ি বিল্ডিংয়েই বাস করে। এডিস মশা ঢাকাসহ অন্যান্য বড় বড় শহর-গ্রামেও ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধি করছে। যদি কারো ঘরে জমানো পানি থাকে যেমন- বাথরোমের কমটে, বালতিতে, ফুলের টবে ছাদবাগানের ড্রামে এসির নিচে পানি জমে থাকছে। এক কথায় যেখানেই জমানো পানি রয়েছে সেখানই এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো রয়েছে। এই মশাগুলো বাইরে থেকে বংশবৃদ্ধি করে ঘরে প্রবেশ করে এভাবেই ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এরকম চলতে থাকলে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এ জন্য বছরব্যাপী মশক নিধন কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে।
বর্তমানে ডেঙ্গুর ধরণ: অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণের ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। জ্বরের তীব্রতা, তীব্র শরীর ব্যথা এবং র্যাশ পরিলক্ষিত হচ্ছে না, ফলে রোগীরা সাধারণ জ্বর মনে করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ করছেন এবং যথাযথ চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করছেন। ফলে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনেক রোগীর অবস্থার হঠাৎ অবনতি হচ্ছে, কোনো কোনো রোগী হেমোরেজিক ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের মত মারাত্মক জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। শেষ মুর্হুতে সামাল দিতে ডাক্তারদেরও হিমসিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসা করতে। এতে ভোগান্তি বাড়ছে রোগীদের। সম্পানা : মাজহারুল ইসলাম