মস্তিষ্কের এক-চতুর্থাংশ দখল করে থাকা অ্যাস্ট্রোসাইট নামের নীরব কোষগুলো আসলে আমাদের আচরণ, স্মৃতি ও মানসিক স্বাস্থ্যের নিভৃত নিয়ন্ত্রক।
দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, মস্তিষ্কের সব ধরনের কার্যক্রমের নায়ক এবং নিয়ন্ত্রক শুধু নিউরন। বাকিগুলো নাকি সহায়ক কোষ। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে, মস্তিষ্কের এক-চতুর্থাংশ দখল করে থাকা অ্যাস্ট্রোসাইট নামের নীরব কোষগুলো আসলে আমাদের আচরণ, স্মৃতি ও মানসিক স্বাস্থ্যের নিভৃত নিয়ন্ত্রক।
বিখ্যাত সাময়িকী নেচার-এ বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা যায়, আগে যেসব অ্যাস্ট্রোসাইটকে ‘সমর্থনকারী কোষ’ বলা হতো, সেগুলোই এখন মস্তিষ্কবিষয়ক বিজ্ঞানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। গবেষকেরা বলছেন, নিউরন তথ্য প্রেরণ করলেও অ্যাস্ট্রোসাইট সেই তথ্যের গতি, শক্তি ও প্রভাব সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
উনিশ শতক থেকেই বিজ্ঞানীরা জানতেন মস্তিষ্কে দুই ধরনের প্রধান কোষ আছে-নিউরন ও গ্লিয়া। কিন্তু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে গত শতাব্দীজুড়ে গবেষণা কেন্দ্রীভূত ছিল শুধু নিউরন নিয়েই। গ্লিয়া-বিশেষ করে অ্যাস্ট্রোসাইট-অধিকাংশ সময় উপেক্ষিতই থেকেছে।
নতুন ক্যালসিয়াম ইমেজিং প্রযুক্তি দেখায়, অ্যাস্ট্রোসাইটও নিজেদের মধ্যে এবং নিউরনের সঙ্গে ক্যালসিয়াম সংকেতের মাধ্যমে ধীরগতির যোগাযোগ করে। এই সংকেতগুলো নিউরনের পরিবেশ বদলে দেয়, নিয়ন্ত্রণ করে আয়ন, নিউরোট্রান্সমিটার ও বিপাকীয় উপাদানের ঘনত্ব। ফলে নিউরন কখন সক্রিয় হবে-তাও অনেকাংশে অ্যাস্ট্রোসাইটের সিদ্ধান্ত। উন্নত মাইক্রোস্কোপি দেখিয়েছে, প্রতিটি অ্যাস্ট্রোসাইট হাজারো শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দুই মিলিয়ন পর্যন্ত সিন্যাপসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।
যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজের বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক গবেষণায় আবিষ্কার করেছেন, মস্তিষ্কের ‘মাস্টার ক্লক’ বা সুপ্রাকিয়াজম্যাটিক নিউক্লিয়াস (এসএনসি) অ্যাস্ট্রোসাইটের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ২৪ ঘণ্টার ছন্দ ধরে রাখতে পারে না। অ্যাস্ট্রোসাইট দিনের বেলায় গাবা/জিএবিএ শোষণ বাড়ায় এবং রাতে কমায়-এই ওঠানামাই ঘড়ির ছন্দ স্থির রাখে।
এ ছাড়া ইসরায়েল ও জাপানের গবেষকেরা দেখিয়েছেন, পুরস্কারের স্থান স্মরণ এবং ভীতির স্মৃতি ধরে রাখা-উভয় ক্ষেত্রেই অ্যাস্ট্রোসাইট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিউরনের দ্রুত সংকেত মিলিসেকেন্ডে শেষ হলেও অ্যাস্ট্রোসাইটের ধীর সংকেত ঘণ্টা বা দিনজুড়ে সক্রিয় থাকতে পারে। ফলে শেখা ও স্মৃতির ফাঁকটি পূরণে এগুলো আদর্শ।
নিউরনভিত্তিক যত রোগ-আলঝেইমার, পারকিনসন থেকে শুরু করে মানসিক অবসাদ-সব ক্ষেত্রেই এখন প্রশ্ন উঠছে: অ্যাস্ট্রোসাইট কি এদের চালক বা সহচর? বিজ্ঞানীদের মতে, মস্তিষ্ক বোঝার দরজা নতুন করে খুলছে। এবার মনোযোগ বেড়েছ সেই নীরব কোষগুলোর ওপর, যাদের গুরুত্ব এতদিন আমরা দেখতে পাইনি।