শিরোনাম
◈ পা‌কিস্তা‌নের বিরু‌দ্ধে জ‌য়ের হ‌্যা‌ট‌ট্রিক, এশিয়া কা‌পে ভারত অপরা‌জিত চ‌্যা‌ম্পিয়ন ◈ ৪৭তম বিসিএস প্রিলির ফল প্রকাশ, পাস ১০৬৪৪ জন ◈ দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, ঐক্যের প্রতীক: প্রধান উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ ঘন ঘন ভূমিকম্প কিসের ইঙ্গিত! ◈ কাপ্তাইয়ে যাত্রীবাহী বাস থেকে ৫০০ দা-চাপাতি উদ্ধার, ইউপিডিএফের সহিংসতার পরিকল্পনা ভেস্তে দিলো বিজিবি ◈ অমর একুশে বইমেলা স্থগিত ◈ প্রাথমিকে ছুটি কমছে, বছরে খোলা থাকবে আরও বেশি দিন ◈ একীভূত হতে যাওয়া ৫ ব্যাংকের প্রশাসকের নাম চূড়ান্ত ◈ হংকং‌য়ের বিরু‌দ্ধে বাংলা‌দে‌শের ২৮ জ‌নের প্রাথমিক ফুটবল দল ঘোষণা  ◈ খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষে নিহত ৩; কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেয়া হবে না: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:২৬ রাত
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

ঘন ঘন ভূমিকম্প কিসের ইঙ্গিত!

মহসিন কবির: ঘন ঘন ভূমিকম্প বড় ধরনের বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করে, কারণ এটি প্লেটগুলোর মধ্যে জমা হওয়া বিপুল পরিমাণ শক্তিকে নির্দেশ করে, যা পরবর্তীতে একটি বড় ভূমিকম্পের মাধ্যমে নির্গত হতে পারে। বাংলাদেশ ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং মিয়ানমার টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় এবং এই প্লেটগুলোর পারস্পরিক গতির কারণে ঘন ঘন ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

গতকাল শনিবার ২টা ২৭ মিনিটে যশোরের মনিরামপুর এলাকায় হঠাৎই মৃদু কম্পনে কেঁপে ওঠে ভূমি। রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৫। জানা যায়, এটি ছিল ঢাকা আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ১৫৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কম্পনের মাত্রা খুব একটা বেশি না হলেও, মানুষের মনে জেগে উঠেছে নতুন করে উদ্বেগ ও প্রশ্ন—এই ভূকম্পনগুলো কি বড় কিছু ঘটার ইঙ্গিত দিচ্ছে?

এটি চলতি মাসে তৃতীয়বারের মতো দেশের ভেতর ভূমিকম্পের ঘটনা। এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর ভারতের আসামে ৫ দশমিক ৮ মাত্রার এবং ২১ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জের ছাতকে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অভ্যন্তরে ভূমিকম্পের এমন পুনরাবৃত্তি বড় কোনো ভূমিকম্পের পূর্বাভাসও হতে পারে। তবে একই সঙ্গে তারা এটাও মনে করেন, কখন কোন মাত্রার ভূমিকম্প হবে, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ১২৭টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৮টির উৎপত্তিস্থল দেশের ভেতরেই ছিল। এর মধ্যে সিলেট বিভাগেই আটটি ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়, যা সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া দিনাজপুর, রংপুর, পাবনা, কুমিল্লা, শরীয়তপুর, টাঙ্গাইল, রাঙামাটি ও চুয়াডাঙ্গাতেও ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। শরীয়তপুর জেলার জাজিরায় হওয়া ভূমিকম্প ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী—রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১।

বাংলাদেশের মাটির নিচে সক্রিয় টেকটোনিক ফল্ট ও প্লেটের উপস্থিতি বিশেষজ্ঞদের চিন্তিত করছে। ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ছোট ছোট কম্পন বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারে, আবার কিছু এনার্জি রিলিজ করেও ঝুঁকি কমাতে পারে। তবে ভূমিকম্প ঘন ঘন ঘটলে বোঝা যায়, প্লেটগুলো তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে, যেটি বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ায়।’

তিনি আরও বলেন, দেশের ভেতরে ৭ দশমিক ৫ থেকে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনার কথা শোনা যায়; কিন্তু তা নিশ্চিতভাবে বলার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ, যা বর্তমানে আমাদের দেশে সীমিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসাইন ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এমন যে, ভূমিকম্প এড়ানোর উপায় নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা তিনটি বড় প্লেটের সংযোগস্থলের কাছাকাছি অবস্থিত—ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মিজ প্লেট। সেই সঙ্গে দেশের মাটি নরম প্রকৃতির হওয়ায় কম্পনের প্রভাব বেশি পড়ে।’ তার মতে, ‘ছোট ভূমিকম্পগুলো স্বাভাবিক ঘটনা হলেও সচেতনতা ও প্রস্তুতি ছাড়া বড় বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নয়।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবীর বলেছেন, দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চল তুলনামূলকভাবে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ। কারণ অঞ্চলটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ভূত্বকের নিচে চাপ জমতে জমতে যখন একসময় প্লেট সরে যায়, তখনই ভূমিকম্প হয়।

তবে তিনি এটাও স্পষ্ট করে বলেন, দেশে ছোট ছোট ভূমিকম্প হচ্ছে মানেই তাৎক্ষণিক বড় কিছু হবে, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং এটা ভূতাত্ত্বিকভাবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তিনি মনে করেন, বড় ঝুঁকি থেকে বাঁচতে প্রয়োজন সচেতনতা ও সঠিক প্রস্তুতি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্প মোকাবিলায় প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত নগরায়ণ, বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ এবং উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে প্রশিক্ষিত দল ও সরঞ্জামের প্রস্তুতি। রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ভবনগুলো বড় ভূমিকম্পে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

পুরান ঢাকা নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ড. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে পুরান ঢাকার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে।’ নতুন ঢাকার পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হলেও সাবধানতা ছাড়া কোনো ভবনই পুরোপুরি নিরাপদ নয়।

একটি বিষয় বিশেষজ্ঞরা এক বাক্যে স্বীকার করছেন—বাংলাদেশে ভূমিকম্প হবে; কিন্তু বড় ক্ষতির আশঙ্কা তখনই বাড়বে, যখন সচেতনতা ও প্রস্তুতির অভাব থাকবে। আজ ছোট কম্পন, আগামীকাল তার চেয়েও বড় কিছু। প্রস্তুতি না থাকলে বিপর্যয় সময় নেয় না আসতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়