কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা খালের সেতুর ওপর দাঁড়ালে দূরে দেখা যায় সোনাদিয়া দ্বীপের সারি সারি ঝাউগাছ। ঘটিভাঙ্গা খাল থেকে একটা সরু খাল সোজা চলে গেছে সোনাদিয়ার ভেতরে। ব্রিজ পার হতেই খালের মুখে বেশ শক্তপোক্ত মাটির একটা বাঁধ চোখে পড়ল। বাঁধের ভেতরে লবণ চাষ হচ্ছে। লবণমাঠের এক পাশে ১০–১২ জন শ্রমিককে লবণের একটা মাঝারি স্তূপ তৈরি করতে দেখা গেল। সূত্র: প্রথম আলো
লবণমাঠ বাঁয়ে রেখে ডানে কিছু দূর হেঁটে গেলে চোখে পড়ে মাঝারি গোছের একটা বাইনগাছ। তার চারপাশে হাজার হাজার দ্বিখণ্ডিত গাছ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। যত দূর চোখ যায়, শুধু এ রকম দ্বিখণ্ডিত গাছের গোড়ালি দেখা যায়। যেন ভয়ংকর কোনো সাইক্লোন বয়ে গেছে প্যারাবনের ওপর দিয়ে। শয়ে শয়ে, হাজারে হাজারে এত গাছ কারা কেটে নিয়েছে—জানতে ফিরে আসি লবণচাষিদের কাছে।
সাংবাদিক আঁচ করতে পেরে তাঁদের স্বাভাবিক কথোপকথন থেমে গেল। লবণের ঠিকঠাক দাম মিলছে কি না বাজারে—এমন প্রশ্ন করলে একজন এগিয়ে এসে কথা বলতে শুরু করলেন। তাঁর নাম মো. সোহেল, ঘটিভাঙ্গার স্থানীয় বাসিন্দা।
কথার ফাঁকে সোহেলের কাছে জানতে চাইলাম শত শত গাছ কীভাবে নিধন হলো। সোহেল বললেন, যেখানে লবণের মাঠ দেখা যাচ্ছে, সেটা একসময় প্যারাবন ছিল (ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট)। এ প্যারাবন বিস্তৃত ছিল দূরে দৃশ্যমান ঝাউগাছ পর্যন্ত। গত কয়েক বছরে সব সাবাড় করে এখানে চিংড়িঘের ও লবণের চাষ হচ্ছে। যে খালটির মুখে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, সেটা দিয়ে জেলেরা মাছ ধরতে নৌকা নিয়ে সোনাদিয়া দ্বীপে চলে যেত পারতেন। এখন খালের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে।
ঘুরে দেখা গেল, সরু খালটিকে কয়েক খণ্ডে আলাদা করে ফেলা হয়েছে চিংড়িঘের করার জন্য। এটা যে খাল, তা বোঝার কোনো উপায় রাখা হয়নি। পুরো খালটি কয়েক খণ্ড দিঘিতে পরিণত করা হয়েছে। চারপাশে যত দূর চোখ যায় শুকিয়ে যাওয়া গাছের কাণ্ড, শিকড় আর ডালপালা দেখা যায় শুধু।
কারা এসব করছে—জানতে চাইলে, তাদের নাম প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে বললেন সোহেল।
দখলে জড়িত প্রভাবশালীরা
মহেশখালী উপজেলার বন বিভাগের গোরকঘাটা রেঞ্জ অফিসে মামলার রেজিস্টারে প্যারাবন দখলের প্রথম মামলা রেকর্ড করা হয় ১৯৮৯ সালে। সেখানে মামলার আসামি ছিলেন মকছুদ মিয়া। তিনি কক্সবাজার জেলার পোকখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাঁর সম্পর্কে এর চেয়ে বেশি কিছু জানা যায়নি।
দ্বিতীয় মামলার রেকর্ড দেখা যাচ্ছে ২০০৩ সালে। সেখানেও আসামি মকছুদ মিয়া। একই সময়ে প্যারাবন ধ্বংসের আরেক মামলায় মোশতাক আহমদকে অন্যতম হোতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৩ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের করা মামলায়ও নাম আসে মোশতাক আহমদ ও তাঁর ছেলে মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাজেদুল করিমের।
তবে মামলা না হলেও প্যারাবন দখলে বিএনপি নেতা আলমগীর ফরিদের নাম শোনা যায়। ২০০৩ সালে কুতুবজোম ইউনিয়নে তাঁর নেতৃত্বে প্যারাবন দখল করে চিংড়িঘের করা হয় বলে জানান স্থানীয় লোকজন। এ সময় সোনাদিয়ায় তাঁর পরিবারের চার সদস্য মিলে প্যারাবন দখল করে চিংড়িঘের গড়ে তুললে ২০০৭ সালের দিকে যৌথ বাহিনী তা গুঁড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া নাম আছে স্থানীয় প্রভাবশালী মো. শিকদার, আইনজীবী শাহাবুদ্দিন ও মো. এরশাদের। আওয়ামী লীগের আমলে দখলদারদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিকের বিরুদ্ধে। বন বিভাগের মামলায় আসামি করা হয়েছে তাঁর ফুপাতো ভাই শমসের উল্লাহকেও।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, প্যারাবন নিধনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান বা মামলা করতে গেলে আশেক উল্লাহ রফিকের ফোন আসত। তিনি বলতেন, ‘এরা চিংড়িঘের ও লবণের মাঠ করতে না পারলে ডাকাতি শুরু করবে। এদের কিছু করে জীবিকা নির্বাহ করতে দেন।’ আশেক উল্লাহ রফিকের বক্তব্য জানতে তাঁর নম্বরে কল করে তা বন্ধ পাওয়া যায়। জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি এলাকায় নেই।
মহেশখালী-কুতুবদিয়া থেকে নির্বাচিত বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ ফরিদ বলেন, আওয়ামী লীগের শেষ সময়ে এসে প্যারাবন দখল বেশি হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দখলের ঘটনা বেড়েছে। তিনি বলেন, অনেক আগে তাঁরও চিংড়িঘের ছিল। এক–এগারোর সময় মামলাও করেছিল যৌথ বাহিনী। সেসব মামলা থেকে সম্প্রতি অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলায় মহেশখালী উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মহসিন আনোয়ারকে আসামি করা হয়। গত ১৮ মে করা মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে কুতুবজোম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরীকে। মামলায় আরও আছেন মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামাল ও তাঁর ছোট ভাই শেখ আলমগীর। কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা ওয়ার্ড বিএনপি ও আওয়ামী লীগের আরও ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
জানতে চাইলে কুতুবজোম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ কামাল বলেন, তিনি এ বিষয়ে আগে যা বলেছেন, এখনো সেটাই তাঁর বক্তব্য। গত ১৮ মে তিনি বলেছিলেন, সোনাদিয়ায় তাঁর কোনো চিংড়িঘের নেই। তিনি নিজেই প্যারাবন নিধনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাঁর দাবি, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় তিনি চিংড়িঘের উচ্ছেদের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
কুতুবজোম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী বলেন, তিনি প্রতিহিংসার শিকার। তাঁর বাবার একটি চিংড়িঘের আছে, তাঁর নেই।
২০১০ থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত বন বিভাগের মামলার সংখ্যা ১৯৬। মোট আসামি প্রায় ১ হাজার। বন বিভাগের তালিকায় প্যারাবন দখলকারীর সংখ্যা প্রায় ৯৩০।
গোরকঘাট রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আইয়ুব আলী বলেন, তাঁর দুই রেঞ্জ—গোরকঘাটা ও চরণদ্বীপ মিলে মোট ৪৬ হাজার ২১০ একর প্যারাবন আছে। এর মধ্যে দখল হয়ে গেছে ১২ হাজার ৫৬৩ একর। সোনাদিয়া দ্বীপ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) হস্তান্তরের পর সেখানে প্যারাবন নিধন বেড়েছে, বিশেষ করে ২০২১ সালের পর থেকে।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার বেজাকে দেওয়া সোনাদিয়ার জমির বন্দোবস্ত বাতিল করেছে। এখন সেটা বন বিভাগের কাছে ফিরে আসার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।
জানতে চাইলে মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা সম্প্রতি একটা জরিপ করে ৪৫ কিলোমিটার বাঁধ শনাক্ত করেছি। সেগুলো অপসারণে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার একটা বাজেট চেয়েছি সরকারের কাছে। এর মধ্যে নৌবাহিনী নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে সোনাদিয়া দ্বীপে।’
হেদায়েত উল্লাহ বলেন, প্যারাবন রক্ষা করতে হলে সোনাদিয়ায় স্থায়ীভাবে আনসার ক্যাম্প বা বনবিট স্থাপন করতে হবে। দুর্গমতার সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা এসব অপদখল করে যাচ্ছে।
প্যারাবন দখলে লাখ থেকে কোটি টাকা বিনিয়োগ
খালে বাঁধ দিয়ে প্যারাবনের ভেতর পানি প্রবেশের সব পথ বন্ধ করে তারপর কাটা হয় গাছ। এরপর গাছের সব গোড়ালি তুলে ফেলে একপাশে স্তূপ করে রাখা হয়। যখন সব শুকিয়ে যায় তখন আগুন ধরিয়ে দিয়ে পুরো জায়গা কৃষিজমির মতো পরিষ্কার করে ফেলা হয়। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এক থেকে দুই মাস সময় লাগে। এ কাজে শ্রমিক ও ড্রেজারের জন্য যে বিনিয়োগ দরকার, তার পরিমাণ কমপক্ষে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা বলে মহেশখালীর পরিবেশকর্মীরা জানিয়েছেন।
মহেশখালীর পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ ফর ইকোলজি কনজারভেশনের প্রধান নির্বাহী এস এম রুবেল বলেন, প্যারাবন দখলের যে চক্র, সেখানে কয়েকটা স্তর আছে। প্রথম সারিতে রয়েছে বিনিয়োগকারী। তাদের দেখা যায় না। ৫০ থেকে ১০০ একর বন দখলে বিনিয়োগ করা হয় ৫০ লাখ টাকার মতো। এর বেশি হলে সেটা কোটি টাকা পর্যন্ত যায়। অধিকাংশ মামলায় আসামি করা হয় শ্রমিকদের। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে যদি শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যেত, তাহলে প্যারাবনের এমন ক্ষতি হতো না।
রুবেল বলেন, ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে মহেশখালীর অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারান। উপকূলের মানুষকে রক্ষা করতে এ প্যারাবন তৈরি করা হয়। কিন্তু সেটা এখন প্রভাবশালীদের লোভের শিকার হয়ে ধ্বংস হতে চলেছে। এখানে প্রশাসন, বন বিভাগ, পুলিশ—সবারই কমবেশি দায় আছে।
মহেশখালীর শিক্ষক ও কবি সিরাজুল হক বলেন, ‘আমরা এখনো ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের কথা ভুলতে পারি না। সেই ঘূর্ণিঝড়ে লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। এখানে প্যারাবন সৃজনের ফলে একটা প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ তৈরি হয়েছিল। ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা কমিয়ে দিত এই বন। প্যারাবন উজাড় করে ফেলায় বেড়িবাঁধগুলোও দুর্বল হয়ে ভেঙে যাচ্ছে। এদিকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি। সামনে যদি বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে, আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।’
লবণ ও চিংড়িতে লাভের চিত্র
লবণ ও চিংড়িঘের নির্মাণ করতেই মূলত সোনাদিয়ায় হাজার হাজার একর প্যারাবন নিধন করে চলেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বর্ষাকালে চিংড়ি চাষ ও শুষ্ক মৌসুমে লবণ চাষ—এই দুই উৎস থেকে আয়ের লোভ বেপরোয়া করে তুলেছে তাদের।
প্যারাবন নিধন করে গড়ে তোলা এসব চিংড়িঘের ও লবণচাষিদের কেউ লাভের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে লবণের ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা রাখেন মহেশখালীর এমন একজন ব্যক্তি বলেন, প্রতি একরে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ মণ লবণ উৎপাদন হয়। সরাসরি মাঠ থেকে প্রতি মণ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। কেউ কেউ সরাসরি লবণের মিলে নিয়ে গিয়ে লবণ বিক্রি করেন। সে ক্ষেত্রে লবণের পরিমাণ ও দাম—দুটিই বেড়ে যায়। গড়ে প্রতিবছর এক একরে আট লাখ টাকা আয় হয়। সে হিসাবে কেউ যদি ২০ একর প্যারাবন দখল করে, তাহলে শুধু লবণ থেকে তার আয় হবে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার মতো। এরপর আছে বর্ষায় চিংড়ি চাষ, যেখানে লাভ হয় লবণের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।
বর্ষাকালে বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয় প্রায় ১০০ থেকে ১ হাজার একর জায়গাজুড়ে। সোনাদিয়ায় এ রকম চিংড়ির প্রজেক্ট (প্রকল্প) আছে প্রায় ৫০টি। সোনাদিয়ার আশপাশের ঘটিভাঙ্গা ও বড় মহেশখালী মৌজায় আছে আরও ১৫টির মতো চিংড়ি প্রজেক্ট। ঘটিভাঙ্গার পশ্চিমে এখনো প্যারাবন কাটা চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
চিংড়ির প্রজেক্টগুলো একেকটি গড়ে উঠেছে ৫০০ একর জায়গাজুড়ে। একেকটি প্রজেক্টে বছরে ২ কোটি থেকে আড়াই কোটি টাকার মতো আয় হয়। তবে কেউ চিংড়ির উৎপাদন সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেননি।
মামলা চলে বছরের পর বছর
প্যারাবন নিধনের ঘটনায় উপকূলীয় বন বিভাগ ১৯৬টি মামলা করলেও কোন মামলা কোন অবস্থায় আছে, সে সম্পর্কে ধারণা নেই উপকূলীয় বন বিভাগ মহেশখালী রেঞ্জ অফিসের। রেঞ্জ কর্মকর্তা আইয়ুব আলী বলেন, ‘মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে সঠিক কোনো ধারণা নেই। মামলা ১০–১৫ বছর ধরে চলে। শাস্তি হয়েছে এমন কোনো ঘটনা আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখিনি।’
মহেশখালী রেঞ্জের বন মামলা পরিচালনাকারী মো. কাশেম বলেন, ‘কয়টা রায় পেয়েছি, বলাটা কঠিন। রায় পাওয়াটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। দীর্ঘ সময় চলে যায়। আছে নানা রকম চ্যালেঞ্জও।’
মো. কাশেম জানান, একটি মামলা হওয়ার পর আসামি যত দিন আদালতে আত্মসমর্পণ না করেন, তত দিন মামলা আটকে থাকে। আত্মসমর্পণ করলে পরোয়ানা জারি হয়। আত্মসমর্পণ না করলে আদালত হুলিয়া জারি করেন। সেটা সংবাদপত্রে প্রকাশ করতে হয়। আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ শুরু হয়। এসব প্রক্রিয়ায় অনেক বছর লেগে যায়। অধিকাংশ সময় যিনি মামলা করেন, তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে যান বছর দুয়েক পর। সাক্ষীরাও নানা জায়গায় বদলি হয়ে যান। সব মিলিয়ে একটা জটিল প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে এসব মামলা চলে।
হারিয়ে গেছে পরিযায়ী পাখি
সোনাদিয়া দ্বীপে বন নিধনের পর থেকে পরিযায়ী পাখিদের দেখা মিলছে না। পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা ‘ওয়াটার্সকিপার্স বাংলাদেশ’–এর সাম্প্রতিক এক জরিপে বলা হয়েছে, সোনাদিয়া দ্বীপে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিরল স্পুন-বিলড স্যান্ডপাইপারের (চামচ-ঠুঁটি) দেখা মিলত। ২০১৫ সালের পর থেকে এ পাখি সোনাদিয়া থেকে হারিয়ে গেছে।
দ্বীপের এই প্যারাবনে ২৫০ প্রজাতির মাছ, ১৫০ প্রজাতির শামুক–ঝিনুক, ৫০ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪০ প্রজাতির চিংড়ি, ১৭০ প্রজাতির পাখি, ৫০ প্রজাতির বালিয়াড়ি উদ্ভিদ ও ১৫ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ, ৩ প্রজাতির ডলফিন, সামুদ্রিক কাছিম, মেছো বাঘ, শিয়াল, সাপ, গুইসাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর বসবাস রয়েছে। এখন অর্ধেকের বেশি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
এ জরিপের গবেষক ইকবাল ফারুক বলেন, পরিযায়ী পাখির অনুকূল পরিবেশ রক্ষা করতে হলে প্যারাবনের দখল বন্ধ করে বন ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যদিকে উন্নয়নের নামে এ দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা যাবে না৷