মনিরুল ইসলাম : বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতৃত্বের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ছে। যে কোন নেতা তার ইচ্ছে মতো সমিতির কার্যকরী নির্বাহী কমিটির অনুমতিহীন ভাবে যা তা করছেন। সেটা যদি কল্যাণমূলক কর্মকান্ডই হউক বা অন্য কিছু। সমিতির সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকসহ নির্বাহী কমিটি সিদ্ধান্ত ছাড়া। একচ্ছত্র ক্ষমতা কি প্রদর্শন করার বিধান হয়েছে সমিতির গঠনতন্ত্রে। এসব প্রশ্ন এফডিসিতে ঘুরপাক খাচ্ছে বলে অনেকে জানিয়েছেন। সৃষ্টি হচ্ছে চাপা ক্ষোভ।যে কোন সময় এ নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়তে পারে সমিতির নেতৃবৃন্দ আশংকা সমিতির সদস্যদের।
এমনই সব প্রশ্ন আজ জোরালো হয়ে উঠেছে সমিতির কোন কোন নেতার কর্মযজ্ঞে। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভই বিরাজ করছে নির্বাহী কমিটিসহ সাধারণ ও প্রবীণ শিল্পীদের মধ্যে বলে জানা গেছে।
২১ সদস্য বিশিষ্ট চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি। বর্তমান সভাপতি শক্তিমান খল অভিনেতা মিশা সওদাগর। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজল ৫ আগষ্টের ছাত্র - জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সমিতির কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তাই আসছেন না এফডিসিতে। আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক নায়ক আলেকজান্ডার বো দেশের বাইরে। ইতোমধ্যে নায়িকা মুক্তি সমিতিতে কো-অপ্ট হয়েছেন। কো-অপ্ট হবার পর থেকে জোরালোভাবে সমিতির কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখছেন। যে কোন বিষয়ে শোআপ করেন না। সবার সাথে মিলেমিশে সাংগঠনিক কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান সমিতির লোকজন।
২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ১৮ জন নির্বাচিত নেতারা দেশেই রয়েছেন। তারা যে কোন সিদ্ধান্তের প্রয়োজনে একমত হলে যে কোন কর্মকাণ্ড পরিচালনা হবে এটাই সমিতির গঠনতন্ত্রের বিধান বলে জানা গেছে।
ইদানিং দেখা যাচ্ছে কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে তাদের ভূমিকা রাখছেন। যা নির্বাহী কমিটির অনেকের মনপুত হচ্ছে না । সমিতির সকল নির্বাচিত সদস্যকে অবগত না করে তাদের কাজ তারা করে যাচ্ছেন। তাই মনপুত না হওয়া সদস্যরা প্রকাশ্যে বির্তক এড়াতে কিছু বলতে চাচ্ছেন না। এভাবেই চলছে বর্তমান চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি।
সম্প্রতি অভিনেত্রী তানিন সুবহার অকাল মৃত্যু, ইউটিউবে বির্তকিত এক অভিনেতা মুন্না খানের কাছ থেকে প্রয়াত ষ্ট্যান্টম্যান মনিরের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ নিয়ে এই আলোচনার সূত্রপাত বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, মেগাষ্টার শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’ সিনেমার শুটিং সেটে অসুস্থ হয়ে স্টান্টম্যান মনির হোসেনের মৃত্যু হয় গত ৩ মে রাত ৮টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে।
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর বিশ্বাস জানান, মনিরকে রাত ৮টার কিছুক্ষণ আগে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে, তিনি আগেই মারা গেছেন। এরপর তার মরদেহ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পরে পরিবার মরদেহ নিয়ে গেছে।
সহকারী ফাইট ডিরেক্টর ও স্টানম্যান নেপালীর সঙ্গে কাজ করতেন মনির। মনির ঢাকার নারায়ণগঞ্জে থাকতেন। বেশ কয়েক বছর ধরেই স্টানম্যান হিসেবে চলচ্চিত্রাঙ্গণে তিনি কাজ করছিলেন।
রাজশাহী নগরীর হাই-টেক পার্কে সেট বানিয়ে ‘তাণ্ডব’ সিনেমার শুটিং চলছিল। সেখানেই মনির অসুস্থবোধ করেন। ষ্ট্যান্টম্যান মনির মারা যাবার পর তাকে আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করে ' তান্ডব' টিম বলে জানা যায়।
এদিকে, গতকাল বর্ষা চৌধুরীকে নিয়ে ইউটিউব মিডিয়ায় আলোচিত - সমালোচিত মুন্না খান শিল্পী সমিতিতে বসে মনিরের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ৫০ হাজার টাকা শিল্পী সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্য সনি রহমানের হাতে তুলে দেন। এ সময় সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির বাংলাদেশে থাকা ১৮ সদস্যে কোন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো আরমানও ছিলেন অনুপস্থিত।
টাকা গ্রহণের বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পাবার পর মিশ্র প্রতিত্রুিয়া দেখা দেয়। মুন্না খান শিল্পী সমিতির কোন সদস্য নন।
এর আগে তানিন সুবহার মৃত্যু নিয়ে হাসপাতাল থেকে বারবার ভিডিও বার্তা প্রচার, তানিন সুবহার স্বামী, সুবহার শিশু কন্যা নিয়ে আবেগময় ভিডিও, দত্তক,শাশুড়ী নিয়ে সাফাই এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠে। শিশু কন্যা জান্নাত নিয়ে ভিডিও প্রকাশে আপত্তি তুলেন বিনোদন সাংবাদিকদের কেউ কেউ। তাদের যুক্তি ছিলো আমরা নিউজে শিশু কন্যার ছবি ব্যবহার করি না। আপনি কি ভাবে তাকে নিয়ে ভিডিও আপ দিচ্ছেন। এছাড়া ভিউ বানিজ্যের প্রসঙ্গ উঠে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক সমিতির সম্পাদকীয় পদের নেতা বলেন, এটা পরিস্কার কোন এ সব ভিডিও আপ দেওয়া হচ্ছে। পিছনে অবশ্যই ভিউ বানিজ্য।
তাকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয় একজন নেতা হয়ে কি সনি রহমান এসব পারেন। জবাবে বলেন, এটা নৈতিক প্রশ্ন। ইউটিউবার হলে অন্য কথা।সমিতির নির্বাহী সদস্য হয়ে এ থেকে বিরত কথাই উত্তম। যেমন তিনি সমিতির প্রতিষ্ঠাতাদের নিয়ে ভিডিও করেছেন। এটা ভালো। সবায় জানলেন। সমিতির বিষয়।
এদিকে, মুন্না খানের আর্থিক সহযোগিতার বিষয়টি নিয়ে জানতে সমিতির সহসভাপতি নায়ক ডি এ তায়েবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি কিছুই জানেন না। তাকে জানানো হয়নি। সামাজিক মাধ্যমে জানতে পেরেছেন।
সমিতিকে না জানিয়ে কি অনুদান গ্রহণ করা যায়। বললেন, না। সবাইকে জানিয়েই করার বিধান।
একই ভাবে নায়িকা মুক্তি ও সিনিয়র অভিনেতা সুব্রতের সাথে যোগাযোগ করা হয়। মুক্তি জানান, তাকে সনি রহমান ফোন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন আজ আসা সম্ভব নয়। তাই তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
সুব্রত বলেন, আমি জানি না। আমাকে বলা হয়নি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ,এসব ভালো চোখে দেখছি না। আমরা ১৮ জন আছি। ৩ জন দেশের বাইরে। শুটিং বা পারিবারিক কারণে আমরা সকলে সমিতিতে উপস্থিত না থাকতে পারলেও ফোনে তো অবহিত করা দরকার। কেউ তা না করলে তো আর বলার থাকে না।
এদিকে, এসব বিষয়গুলো নিয়ে সনি রহমানের সাথে মেসেন্জারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গাড়ি ড্রাইভ করছেন। তবে গাড়ি চালানো অবস্থায় টেক্সের জবাব দেন। তবে কথা বলেননি।
