মনিরুল ইসলাম ঃ সালমান শাহ্কে স্বপ্নের রাজকুমার' সিনেমা বানাতে চেয়েছিলেন গুনী চিত্রনাট্য ও পরিচালক ছটকু আহমেদ। কিন্তুু এতে বাদ সাধেন সালমান শাহ'র নাম নীলা চৌধুরী। টেলিফোন করে সালমানকে নিয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মানে বাধা প্রদান করেন। আর এই কারণেই ছটকু আহমেদ আর সালমান শাহকে নিয়ে ছবি করছেন বলে জানান।
বুধবার বিকালে এফডিসিতে তিনি ছবি না বানানোর কথাটা জানান।
তিনি বলেন, সালমান শাহ্ ছিলো সত্যিই স্বপ্নের রাজকুমার। প্রয়াত পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, ইমনকে চলচ্চিত্রে এনে নাম দিয়েছিলো সালমান শাহ্। বলা যায় চলচ্চিত্রের সালমানকে জন্ম দিয়েছিলো চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। আর সেই সোহানই সালমানের অকাল মৃত্যু পর সালমানের জীবনের ছায়া অবলম্বনে নির্মাণ করতে চেয়েছিলো সিনেমেটিক গল্প- স্বপ্নের রাজকুমার।
তিনি ছবি বানানোর পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে বলেন, সোহান আমাকে নিয়ে গিয়েছিলো সালমানের স্ত্রী মিসেস সামিরার হকের বাসায়। সামিরা আমাদের বলেছিলো সালমান এর সাথে তার প্রেম থেকে জীবনের শেষ দিনগুলোর কথা। কখনো সালমানের দুষ্টুমির কথা বলতে গিয়ে হেসেছে, কখনো অভিমানের কথা বলতে গিয়ে ঝড় ঝড় করে কেঁদেছে। আমরা স্তব্ধ হয়ে বসে অবাক বিম্ময়ে এক অপুপম প্রেম কাহিনী শুনেছি।
তারপর সোহানের সহযোগী পরিচালক জামাল, ক্যামেরাম্যান শহীদুল্লাহ দুলাল ও সোহানসহ আমি বসে দীর্ঘদিন অনেক আলাপ আলোচনা করে স্ক্রীপ্ট এর কাজ শেষ করেছি।
তিনি বলেন, অনেক যত্ন করে লিখেছি একটি অসাধারণ প্রেমের গল্প -স্বপ্নের রাজকুমার খুবই দুঃখজনক যে সোহান ছবিটি নির্মাণ শুরু করার আগেই অকাল মৃত্যু বরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।
এতো সুন্দর একটা রোমান্টিক গল্পের এইভাবে অকাল মৃত্যু হোক এটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই সবার সাথে আলাপ করে ঠিক করেছি সালমান ও সোহানের স্মৃতির উদ্দ্যেশে স্বপ্নের রাজকুমারকে স্বপ্নের মতো করে সাজিয়ে দর্শকদের জন্যে সিনেমার পর্দায় তুলে ধরবো। পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পী ও সাংবাদিক সমন্বয়ে একটি টিম করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নতুন নায়ক নায়িকা বাছাই করে আমরা নতুন মুখ দিয়ে এই চলচ্চিত্রটি শুরু করবো।
কিন্তু- হঠাৎ বজ্রাঘাতের মতো সালমান শাহর মা মিসেস নীলা চৌধুরী লন্ডন থেকে টেলিফোন করে সালমানকে নিয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মানে বাধা প্রদান করেন এবং তিনি জানান এই প্রসঙ্গে তিনি অনেক আগেই উকিল নোটিশ দিয়ে রেখেছেন। এই বাধার কি অন্তর্নিহিত কারণ তিনিই জানেন আমি জানিনা।
ছটকু আহমেদ বলেন, তবে আমি দেখেছি বিশ্বের অনেক বিখ্যাত মনিষীদের জীবনি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। কেউ প্রশংসিত হয়, কেউ নিন্দিত হয়। এবং সেই সব ছবি দেখে তার দর্শকরা অনুপ্রাণীত হয়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম প্রতিভাবান, জনপ্রিয়, সফল এবং তারুণ্যের নায়ক ছিলো সালমান শাহ্। ক্ষণজন্মা এই অভিনেতা মাত্র সাড়ে চার বছর এর অভিনয় জীবনে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন যার বেশির ভাগই দর্শক জনপ্রিয়তায় এখনো শীর্ষে। যার ফলশ্রতিতে মৃত্যুর ২৮ বছর পরও দর্শক ভক্তরা তাকে স্বরণ করে। টিভি চ্যানেল তাকে নিয়ে অনুষ্ঠান করে। দৈনিক পত্রিকা তাকে নিয়ে নিউজ করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়।
বিশিষ্ট চিত্রনাট্যকার, গল্পকার ও পরিচালক ছটকু আহমেদ বলেন, আমাদের উদ্দ্যেশ্য ছিলো অসম্ভব প্রতিভাবান ইমন কিভাবে তার দারুণ মেধার গুণে, অভিনয়ের অনুপম দক্ষতায়, তার নিজস্ব স্টাইলে, তার মৌলিকতায় চলচ্চিত্রের সালমান শাহ হয়ে কোটি কোটি দর্শক মনে স্থান করে নিয়েছে তা তুলে ধরার। কিন্তু-নীলা চৌধুরীর আপত্তিতে আমি তা স্থগিত করলাম। এই উনাশি ছুই ছুই বছরে কোন রকম কন্ট্রাডিকশান কাজে আমি যেতে চাই না। আমাদের মহৎ উদ্দ্যেশকে সহযোগীতা না করে কেউ বাজে মানসিকতা দিয়ে বিচার করুক আমি চাই না। সুতারাং অতীব পরিতাপের সাথে আমি জানাচ্ছি যে সালমানের স্বরণে নির্মিতব্য স্বপ্নের রাজকুমার ছবিটি আমি আর করছি না।
আপনার মতামত লিখুন :