এম, এ কুদ্দুস: তীব্র দাবদাহ, অনাবৃষ্টি ও প্রখর রোদের কারণে বিরুপ প্রভাব পড়েছে দিনাজপুরের লিচু খ্যাত বিরল উপজেলার লিচু বাগান গুলোতে। মৌসুমের শুরুতে এমন বৈরী আবহাওয়ার কারণে একদিকে যেমন গাছে গাছে লিচু ফেঁটে চৌচির হয়ে রস গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে অপুরুনীয় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে লিচু ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের মধ্যে। অপুরুনীয় ক্ষতির কারণে অনেক ছোট ছোট বাগান মালিক ও লিচু ব্যবসায়ী তাদের সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।বিভিন্ন বাগান ঘুওে লিচুর করুণ অবস্থা দেখে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মৌসুমী লিচু ব্যবসায়ীরাও লিচু না কিনে ফেরত যাচ্ছে। অনেকে লোকসান থেকে কিছুটা বাঁচতে ঐ অবস্থায় লিচু পেড়ে বাজার বা আড়ৎ-এ নিয়ে গেলে ক্রেতার অভাবে ন্যায্য মুল্যে বিক্রি করতে পারছে না।
এ মৌসুমের প্রথমে মাদ্রাজী জাতের লিচু প্রতি হাজার যেখানে বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার টাকায়, সেখানে রোদে পুড়ে ওই লিচু এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি হাজার মাত্র ৮ থেকে ৯ শ’ টাকায়। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমান বাজারে বোম্বে জাতের লিচু প্রতিহাজার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১২ থেকে ১৩ শ” টাকায়, চায়না থ্রী, চায়না টু জাতের লিচু ২ হাজার ৮শ” থেকে ৪ হাজার টাকা এবং কাঁঠালী, বেদেনা জাতের লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতি হাজার ২ হাজার ৫ শ’ থেকে ৪ হাজার টাকায়। অথচ এবারই বোম্বে জাতের লিচু প্রতি হাজার বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়, চায়না থ্রী, চায়না টু ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় এবং কাঁঠালী, বেদেনা ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায়। তীব্র দাবদাহ, প্রখর রোদ এবং প্রচন্ড ঝাঁজালো গরমের কারণে লিচুর বাগান ও বাজারে এ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর এ মৌসুমে প্রতিটি বাগানে বাগানে মানুষের হাক ডাক ও আনন্দ উল্লাস লক্ষ করা যায়। লিচু বাগানে চোখ পড়লেই মনে হত যেন সূর্যের লাল আভা উকি দিয়ে খিল খিলিয়ে হাসছে। এবারের চিত্র যেন পুরোটাই ভিন্ন। অতিরিক্তি তাপ মাত্রার কারণে সেই হাস্যজ্জোল বাগানের লিচু গুলির রং জ্বলে গিয়ে মোরে গেছে। মানুষের মনেও নেই কোন ফূর্তি আর অন্যান্য মৌসুমের মত আনন্দ উল্লাস।
বিভিন্ন এরাকা ঘুরে কথায় হয় অনেক লিচু ব্যবসায়ী ও বাগান মারিকের সাথে। অনেকে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। বিরল রবিপুর এলাকার লিচু ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম বলেন, তিনি রবিপুর ও মাধববাটি এলাকায় ৪ বাগান কিনেছেন। বাগানে বোম্বাই লিচু রয়েছে। টানা ৪ দিনের প্রচন্ড দাবদাহে তার লিচু বাগানের সিংহভাগ লিচু রোদে পুড়ে গেছে। এখন ফেটে গিয়ে ঝড়ে পড়ছে। গাছের লিচু কোন পাইকাড় বা আড়ৎদার কিনতে চাচ্ছেনা। তিনি লিচু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাকে কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হবে। এমনই কথা জানান, বিরলের লিচু ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম, অহিদুর রহমান, আব্দুস সালাম, দঃ রঘুনাথপুর গ্রামের বাগান মালিক নুর আলম ও বালান্দোর গ্রামের আবুল কাশেম। তারা সকলে ক্ষতি থেকে বাঁচতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এব্যপারে বিরল উপজেলা অফিসার মোস্তফা হাসান ইমামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এ উপজেলায় ২ হাজার ৫শ’ ৫৮ হেক্টর জমিতে লিচু গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫ হেক্টর জমিতে বেদেনা এবং ৩শ’ ২৩ হেক্টর জমিতে রয়েছে চায়না থ্রী জাতের লিচু গাছ। বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচুর ছাল পুড়ে গিয়ে লিচু থেকে রস গড়িয়ে পড়ছে। আবহাওয়া অনুকুলে ছাড়া এমন অবস্থায় লিচু গুলিকে কোন অবস্থায় টিকানো সম্ভব নয়। পরিপক্ক হলে দ্রুত এ সমস্ত লিচু বাজার জাত করা উচিত। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কি পরিমান ক্ষতি হতে পারে এবিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, ক্ষতির পরিমান অবশ্যই অনেক।
এমন অবস্থা দেখে অনেকে বাগান ছেড়ে চলে গেছেন। তাপ মাত্রা অতিরিক্ত হবার কারণে সে সমস্ত লিচু ফেঁটে রস গড়িয়ে পড়ছে। সে সমস্ত লিচু দ্রুত অপসারণ করা না হলে সেখান থেকে আরোও বড় ধরণের এবং দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি হতে পারে। কারণ লিচুর গড়িয়ে পড়া রস থেকে ক্ষতিকারক বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক ও পোকার জন্ম হয়ে গাছের ক্ষতি করবে। আর সেটা হলে খুবই বহবহ ক্ষতি হতে পারে।
এ উপজেলার লিচু ও আম রফতানী হচ্ছে কিনা এব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এবারই প্রথম প্রাইম এশিয়া নামের একটি কোম্পানী আমাদের এ উপজেলা থেকে প্রাথমিক পর্যায় বেদেনা ও চায়না ত্রী জাতের লিচু ৩শ’ কেজি ও বারী ফোর, কাটিমন ও ব্যানানা ম্যাংগো জাতের ১ হাজার কেজি আম সংগ্রহ করে ফ্রান্সে সুপার সোপে রফতানী করতে চেয়েছেন। তাদের একটি প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যে এ উপজেলার রবিপুর, মধাব বাটী, পুরিয়া, জোড় কালী, পাকুড়া এলাকায় মোট ৬টি বাগান পরিদর্শন করেছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে রফতানীর পরিমান আরোও বাঁড়তে পারে। সম্পাদনা: সাদেক আলী
আপনার মতামত লিখুন :