সালেহ্ বিপ্লব: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান থেকে পণ্য চুরির ঘটনা অনেক বছর ধরেই ঘটছে। একটা সময় পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ব্যবসার পণ্য চুরি হলেও বেশ কিছু বছর ধরে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস পণ্য চোর-ডাকাতদের কবলে পড়ছে। চালকদের যোগসাজশে চোর চক্রটি রপ্তানি পণ্য বের করে নিয়ে তার বদলে ঝুট বা মাটি ভরে দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে এই জোচ্চুরি আরো বেড়েছে। এতে করে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, আর রপ্তানিকারকের আর্থিক ক্ষতি তো হচ্ছেই।
সারাদেশের মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করতে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৬৫ কিলোমিটার এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসাতে ১৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই মহাসড়কে ১ হাজার ৪৬০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজ আগামী মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করার দাবি
জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, প্রায় দেড় যুগ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২ হাজারেরও বেশি কাভার্ড ভ্যান থেকে শত শত কোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য তৈরি পোশাক পণ্য চুরি করেছে একটি চক্র। ২০২২ সালেই ২০-২২টি চুরির ঘটনা ঘটেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি সাম্প্রতিক একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে ব্রাজিল থেকে ক্রেতা ভিডিওর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারককে জানায় যে, বেশিরভাগ কার্টনের ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ পোশাক তারা বুঝে পাননি। এমনকি কিছু কার্টন খালি ছিলো। ওই শিপমেন্টে ২৬ হাজারের বেশি পোশাক ছিলো। প্রায় ৮ হাজারের মতো পোশাক চুরি হয়। ইতোমধ্যে র্যাব এই চুরির সঙ্গে জড়িত চক্রের হোতাসহ ৪জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
ফারুক হাসান জানান, কার্টনে পোশাকের পরিবর্তে ঝুট বা মাটি রাখা হয়েছে, যাতে ওজন ঠিক থাকে। এতে করে ক্রেতাÑবিক্রেতার আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে, দেশ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে।
মহাসড়কে পোশাক চুরি বন্ধের লক্ষ্যে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে চোরচক্রের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দাদেরও কাজে লাগানোর প্রস্তাব করেন তিনি।
ফারুক হাসান আরো বলেন, কতিপয় নামসর্বস্ব কোম্পানি এসব চুরির মালামাল ক্রয় করে স্টকলট হিসেবে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। স্টকলট রপ্তানির ক্ষেত্রে মালের উৎস নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিজিএমইএ বা বিকেএমইএ থেকে সনদপত্র গ্রহণের মাধ্যমে রপ্তানির অনুমোদন দেয়া যেতে পারে।
বিজিএমইএ সভাপতি কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সী মালিক সমিতি, কাভার্ড ভ্যান চালক এবং হেলপারদের ডাটাবেইস প্রস্তত করার দাবি জানান। এই ডাটাবেইস সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে শেয়ার করার ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দেনে তিনি।
এমএএস