শাহীন খন্দকার: দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দূর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে, নিত্যপণ্যের মূল্য কমবে না বলে জানিয়েছেন, ব্যাবসায়িসহ ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইজুর রহমান ফাদাহ বলেন, দেশে দফায় দফায় নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। বেড়েছে চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, তরি-তরকারি, ফল-মূল, চিনি, লবণ, গম, আটা, রুটি ও ওষুধপত্রসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম অস্বাভাকিভাবে বেড়েছে। একই সাথে বেড়েছে ঘরগৃস্থলীর বিভিন্ন সামগ্রীর দামও। নিম্ন আয়ের মানুষদের শেষ ভরসা ডিমের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে গেলেও শুক্রবার তা আগের দামেই ফিরে এসেছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর ঘোষণা আমদানির তার একদিন পরেই ডিমের হালি ৪০ টাকা হয়ে গেলো।
এদিকে সরকারি হিসাবেই বিআরবি-২৮ চাল প্রতিকেজি এখন ৫০ টাকা থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা এর আগে ছিল প্রতিকেজি ৪০ থেকে ৪৭ টাকা। বাজারে খোলা সয়াবিন তেল ১৯০, পামওয়েল ১৫০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ, , রসুন ও আদার াদম স্থিতিশীল রয়েছে। কমেছে কাচাঁমরিচে দাম।
শুক্রবার ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা কেজি, দেশি ৪৪০-৫০০, পাকিস্থানী ককমুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বিভিন্ন প্রকার শাকশবজি প্রকার ভেদে ৫-৩০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। গরু ও খাসীর মাংস আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
বাসা বাড়িতে কাজ করেন গফরগাও এর নিলুফা। পাশাপাশি তিনি রাজধানীর আদাবরের ফুটপাতে বিক্রি করেন মুরগির গিলা-কলিজা, পা ও ছাটকাট। নিলুফা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যেনো কমতেই চাইছে না। তিনি বলেন, বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। চাল, ডাল, সবজি দাম বাড়ায় কষ্ট রেড়েছে গরীবদের। তিনি বলেন, মেহমান এলেও ডিম ভর্তা, ডাল ভাত দিয়েই খেয়ে নিতাম, এখন সেটারও উপায় নেই।
একই এলাকার বাসিন্দা নূরভানু বলেন, অনাহারে অর্ধাহারে দিন পার করছি। আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়েছে, বুয়ার কাজ করে কতো আর আয় হয় বলেন।
এদিকে, দেশের অধিকাংশই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা ঢাকায় বিভিন্ন ম্যাচে থেকে পড়াশোনা করেন। তারা পড়াশোনা এবং নিজ খরচ চালাতে টিউশনি কিংবা পার্ট টাইম চাকুরি করে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে তাদের এই সীমিত আয়ের সাথে ব্যয়ের কোন মিল নেই। কারণ বর্তমানে দ্রব্য মূল্যের যে অবস্থা তাতে ঢাকায় থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া তাদেও জন্য দূষ্কর হয়ে পড়েছে। যারা টিকে আছেন তাদের অনেকেই এখন অর্ধাহারে-অনাহারে দিন পার করছেন।
জগন্নাথ বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিথী সাহা বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। দেশে কোন পণ্যের দাম একবার বেড়ে গেলে তা আর কমার নজির নেই। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে পেট্রোল, এলপি গ্যাস ও ভোজ্য তেলের বেড়েছে একাধিক বার। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে কমার খবর প্রকাশ হলেও দেশের বাজারে তা কমার কোনো খবর নেই। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ জনগণ প্রতিদিনের খাদ্য সামগ্রী কিনতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত।
রাজধানীসহ সারা দেশে ৮-১০ বছর আগেও টিসিবির পণ্য কিনতে ১০-১৫ জনের বেশি লোক দেখা যেতো না। আর এখন সর্বত্র টিসিবির পণ্য কিনতে শত-শত লোক দীর্ঘ লাইন ধরছেন। শিথি সাহা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ খুজলে দেখা যাবে, দেশের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সমতার অভাব রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের যোগান পর্যাপ্ত নয়।
শিক্ষার্থী শিথি আরো বলেন, দেশে বিদ্যমান দুর্নীতি, ঘুষ চাঁদাবাজির কারনেই পণ্যর মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কি ? তিনি আরো বলেন, সিন্ডিকেটের সঙ্গে যারা জড়িত তারা শাস্তি পায় না। এ জন্য বেসামাল নিত্যপণ্যের দাম। সম্পাদনা: মাজহারুল ইসলাম