সনতচক্রবর্ত্তী, ফরিদপুর: ফরিদপুরের জেলায় এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু সময় মতো জাগ দেওয়ার পানি না থাকায় পাটের দাম কিছুটা কম। কিন্তু এখন পাট ধুয়ে শুকিয়ে সোনালি আঁশ এখন ঘরে তুলছেন কৃষক। তবে শুধু আঁশ নয়, পাটকাঠিতেও তাঁরা দেখছেন আশা। কেন না পাটের সঙ্গে কদর বেড়েছে পাটকাঠিরও। বাড়ির সামনে, পাকা সড়ক কিংবা মাঠ-ঘাট যেখানে চোখ যায় সেখানেই চোখে পড়ে পাটকাঠি শুকানো ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ।
পাটের উপজাত এই পাটখড়ি বা পাটকাঠি এখন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এটি বিশেষ চুল্লিতে পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে কার্বন বা চারকোল, যা চীনসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়। কার্বন পেপার, কম্পিউটার, ফটোকপির কালি, আতশবাজি, ফেসওয়াশের উপকরণ, প্রসাধনী পণ্য, মোবাইলের ব্যাটারি, দাঁত মাজার ওষুধ, খেতের সারসহ নানা কাজে এই কার্বন ব্যবহার করা হচ্ছে।
বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, মধুখালি, সালথা নগরকান্দাসহ কয়েকটি উপজেলা খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষক পাট ও পাটকাঠি শুকিয়ে ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত। তাঁরা এখন পাটকাঠি বেশ যত্নের সঙ্গে মজুত করে রাখছেন। ১শ’ আঁটি পাটকাঠি ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, আগে পাটকাঠির ব্যবহার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছিল শুধু জ্বালানি হিসেবে। আর কিছু ভালো মানের পাটকাঠি পানের বরজের আর ঘরের বেড়া তৈরিতে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন আর মূল্যহীনভাবে পড়ে থাকে না পাটকাঠি। বিশ্ববাজারে পাটকাঠির চাহিদা বাড়ায় আঁশের পাশাপাশি কাঠির দামও ভালো পাওয়া যায়। অনেক কৃষক পাটের দাম খুব একটা না পেলেও পাটকাঠির দাম দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
বোয়ালমারীর পাটচাষি আলিম শেখ বলেন, ইতোমধ্যেই পাটকাঠি ক্রয়ের জন্য ব্যবসায়ীরা আমাকে আগাম টাকা দিয়েছে এখন তারা তাগাদা দিতে শুরু করেছেন। অনেকে পাট চাষি ব্যবসায়িকদের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে পাটকাঠি ব্যবসায়িকদেরর কাছে পাটকাঠি বিক্রি করে দিয়েছেন।’
সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের রঘুয়ারকান্দী গ্রামের পাট চাষী হারুন মিয়া ও হাফেজ মোল্যা বলেন, পানির সমস্যার কারণের এবার পাট নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি। মাটি খুঁড়ে আর নোংরা জলাশায় পাট জাগ দিয়ে পাটের রং নষ্ট হওয়ায় দাম প্রতিমণে ৪ থেকে ৫শ’ টাকা কম পেতে হচ্ছে। তবে পাটকাঠির রঙের তেমন পরিবর্তন হয়নি। আবার পাটকাঠির দামও চড়া। তাই পাটপাঠির উপর গুরুত্ব দিয়ে যত্ন নিতে শুরু করেছি। কারণ এক বিঘা জমিতে ১৮ থেকে ২০ মণের মত পাট ফলন হয় আর তা থেকে প্রায় ২ হাজার আঁটি কাপকাঠি বের হয়। প্রতিআঁটি পাটিকাঠি ৫ টাকা দরে বিক্রি করছি। এতে প্রতিবিঘা জমিতে প্রায় ১০ হাজার টাকার পাটকাঠি বিক্রি করতে পারবো। তবে বিগত বছরগুলোতে সময়ের অভাবে পাটকাঠির উপর তেমন গুরুত্ব ছিল না আমাদের।এখন পাটকাঠি বিক্রি করে পুষিয়ে নিতে চাই।
মাগুরা জেলা থেকে আসা পাটকাঠি ব্যবসায়ী রুবেল বলেন, পাঁচ-ছয় বছর ধরে আমি পাটকাঠি কিনে পাইকারি দামে বিক্রি করি। বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ী আমাদের এলাকার পাটকাঠি কিনে ট্রাক, করিমন, ভ্যানগাড়িতে করে নিয়ে যায়। আমার মতো অনেকেই এখন পাটকাঠির ব্যবসা করছে।
মধুখালি উপজেলা থেকে ‘আমাদের অর্থনিতি’ প্রতিনিধি গৌতম বিশ্বাস জানান, বিভিন্ন দেশে পাটকাঠির ছাই কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপি মেশিনের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী পণ্য, এয়ারকুলার, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও ক্ষেতের সার উৎপাদনের কাঁচা মাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত পাটকাঠির চাহিদা দেশের পাশাপাশি বাড়ছে বিশ্ব বাজারেও। সম্পাদনা: হ্যাপী