যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান শুল্ক কমাতে আলোচনায় বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করার কৌশল নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে পাঠানো তিনটি শুল্ক প্রস্তাব পর্যালোচনা শেষে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা। এই পদক্ষেপ দেশের রপ্তানি খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
মূল বিষয়গুলো:
সরকারের নতুন পরিকল্পনা: বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) কর্তৃক পাঠানো প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি সমন্বিত অবস্থান নিতে আগামী শনিবার একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, "আমরা শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব।"
গোপনীয়তা চুক্তি: উভয় পক্ষের মধ্যে একটি নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট (এনডিএ) স্বাক্ষরিত হওয়ায় শুল্ক প্রস্তাবের বিস্তারিত বিষয়বস্তু বা শুল্ক বহির্ভূত অন্যান্য আলোচনা সম্পর্কে কোনো পক্ষই মুখ খুলছে না।
রপ্তানিকারকদের শঙ্কা: ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সম্ভাবনায় অর্থনীতিবিদ এবং রপ্তানিকারকরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সামগ্রিকভাবে দেশটিতে পোশাক আমদানি গত বছরের প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে এ বছর ৬৫ থেকে ৭০ বিলিয়ন ডলারে নামতে পারে।
প্রতিযোগিতার বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান: বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বাজারে ৯.২ শতাংশ শেয়ার নিয়ে বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। গত বছর দেশটিতে প্রায় ৮.২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। নতুন শুল্ক কার্যকর হলে ভিয়েতনাম, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মতো প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে পারে, কারণ ওই দেশগুলোতে শুল্কের হার কম।
ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ: স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম জানিয়েছেন, চূড়ান্ত শুল্কহার নির্ধারণ না হলেও মার্কিন ক্রেতারা এর মধ্যেই দাম কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন। কম শুল্কের কারণে ক্রেতারা ভারতে চলে যাওয়ার হুমকি দেওয়ায় তাকে কম দামে কার্যাদেশ নিতে হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "ব্যবসায়ী ও মার্কিন বাজারে অন্যতম বৃহৎ রপ্তানিকারক হিসেবে আমি চরম অসহায় বোধ করছি।"
বেসরকারি খাতের প্রতিক্রিয়া: বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান জানিয়েছেন, আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি, তবে তিনি আশা করছেন শিগগিরই যোগাযোগ করা হবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ:
আগামী ১ আগস্টের আগে ওয়াশিংটনে তৃতীয় দফার আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। শনিবারের বৈঠকে বাংলাদেশের অবস্থান চূড়ান্ত হওয়ার পর আলোচনার নতুন তারিখ নির্ধারণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানানো হবে। উৎস: ডেইলি স্টার।