শিরোনাম
◈ প্রবাসীকে বাদ দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন কীভাবে হয়, প্রশ্ন ইসি সানাউল্লাহর ◈ দেশে আবারও বাড়ল সোনার দাম, ভরি কত? ◈ হঠাৎ যেভাবে ধানমন্ডির ভোটার হলেন আসিফ মাহমুদ ◈ নভেম্বরের ৯ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহে ৪৮.৭ শতাংশ বৃদ্ধি ◈ জুলাই সনদ ও গণভোটের সমাধান কোন পথে? ◈ ড.ইউনুসের গ্রামীণ নামে যা যা বানাইছেন সবকিছুর বিপদ আছে: কাদের সিদ্দিকী ◈ একাদশ গ্রেডে বেতনের আশ্বাস, আন্দোলন স্থগিত প্রাথমিক শিক্ষকদের ◈ ফুটবল ফেডা‌রেশন বিসিবির কাছে প‌রিচালক আসিফের বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়েছে  ◈ বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের গ্যালারির টিকিট ৬ মি‌নি‌টেই শেষ ◈ দিল্লি বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে হরিয়ানায় ৩ টন বিস্ফোরক উদ্ধার

প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ০৩:৩০ দুপুর
আপডেট : ১১ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সরকারই ভরসা পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকদের

সরকারি ঘোষণা হওয়ার পর সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের শাখাগুলোতে ‘গ্রাহকরা টাকা পাবেন’-এমন স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। এতদিন ব্যাংক শাখা থেকে বা গ্রাহক কেউই বলতে পারছিলেন না কে, কবে এবং কীভাবে টাকা দেবে। একীভূত করার প্রক্রিয়ায় থাকা এসব ব্যাংকের দায়িত্ব সরকার নেওয়ার ফলে গ্রাহকের আমানত ফেরত পাওয়ার আশা তৈরি হয়েছে।

সোমবার (১০ নভেম্বর) অকার্যকর ঘোষণা করা সাবেক ইসলামী পাঁচ ব্যাংকের রাজধানীর বিভিন্ন শাখায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শাখাগুলোতে দেখা যায় প্রতিদিনের মতোই কর্মকর্তারা অলস সময় কাটাচ্ছেন। লেনদেনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ব্যাংককর্মী ও গ্রাহক-সবার মধ্যেই একধরনের নির্লিপ্ত ভাব। দু-একজন গ্রাহক এলেও তারা জানতে চান কবে থেকে টাকা পাওয়া যাবে। কেউ কেউ মেয়াদোত্তীর্ণ ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা না পেয়ে নতুন করে আবারও ফিক্সড ডিপোজিট করছেন। কেউ কেউ শুধু পাসবই বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিতে এসেছেন। তারা জানান, এতদিন টাকা পাওয়া যেত না-কখনো দুই হাজার, কখনো পাঁচ হাজার টাকা-কিন্তু বলা যেত না কবে আরও টাকা দেওয়া হবে। সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তত এটুকু জানা যাচ্ছে—জমা রাখা টাকা পাওয়া যাবে।

সাবেক ইউনিয়ন ব্যাংকের বেগম রোকেয়া শাখায় টাকা তুলতে আসা মিস ফারহানা জানান, এই শাখায় তার কিছু টাকা আছে। সপ্তাহে তিন হাজার টাকা পান, সেই টাকা তুলতে এসেছেন। পাশাপাশি চেকবইও নিতে এসেছেন। 

ফারহানা বলেন, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে জানতাম না কবে টাকা পাব, এখন অন্তত জানা যাচ্ছে সরকার এই ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছে, সরকার টাকা দেবে-এটা ভালো খবর। কথা মতো যেন টাকা পাওয়া যায়। 

এসব ব্যাংকের কর্মীরাও নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। সারাব্যাংকজুড়ে হতাশা বিরাজ করছে। বেতন স্ব স্ব অ্যাকাউন্টে গেলেও পাঁচ-দশ হাজার টাকার বেশি তোলা যায় না। যেমন গ্রাহকদের দেওয়া হয়, তারাও তেমনই সীমিত টাকা পান।

মো. রেজা, ইউনিয়ন ব্যাংকের এক কর্মকর্তা, জানান, হেড অফিস থেকে প্রতিদিন এক লাখ করে টাকা দেয়। সেই টাকা থেকে কাউকে দুই হাজার, কাউকে তিন হাজার করে দেওয়া হয়। এ টাকা থেকেই আমরা নিজেরাও বেতন থেকে কিছু নেই। 

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) মতিঝিল শাখায় দেখা যায়, টাকা জমা বা নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য কোনো গ্রাহক নেই। শুধু টাকা তোলার জন্য কয়েকজন কাউন্টারের সামনে বা ম্যানেজারের টেবিলের সামনে বসে আছেন। অনেকে অপেক্ষা চেয়ারে বসে আছেন। সবাই টাকা তোলার অপেক্ষায়। কিন্তু কাউকেই টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। তারপরও গ্রাহকরা বসে থাকেন, যদি কিছু টাকা দেওয়া হয় এই আশায়।

এসআইবিএলের গ্রাহক সোহরাব হোসেন শাহীন বলেন, এক সপ্তাহ পরপর কিছু টাকা পাচ্ছি। টাকার খুব দরকার তাই বসে আছি-যদি আজকে পাই। ব্যাংকের অন্য শাখার স্টাফ রাকিব খানও টাকা তুলতে এসেছেন। কিন্তু এই শাখা থেকেও জানানো হয়েছে, টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। তারপরও তিনি অপেক্ষা করছেন। 

তিনি বলেন, ব্যাংকের কী হবে, এটা নিয়ে অন্ধকারে ছিলাম। সরকার দায়িত্ব নিয়েছে-এতে ভরসা তৈরি হয়েছে। এখন সেই ভরসাতেই আছি। 

এক্সিম ব্যাংকের ডিআইটি শাখা পুরো ফাঁকা। এটি এডি শাখা-প্রধানত ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয় এখানে। ব্যাংকটি এখন এলসি খুলতে পারছে না, লোকজনও নেই। দু-একজন গ্রাহক যারা এসেছেন, সবাই টাকা নেওয়ার জন্য। আব্দুর রহমান নামে একজন ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিতে এসেছেন।

ব্যাংকটির ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের ব্যাংকে তো কোনো সমস্যা ছিল না। এখন গ্রাহকদের বললে কাল থেকেই এলসি শুরু করা যাবে। সমস্যা হলো-আমাদের অন্য চার ব্যাংকের মধ্যে ঢুকিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে। এখন বসে থাকা ছাড়া কোনো কাজ নেই। 

তিনি আরও জানান, ব্যাংকের অফিসারদের বেশ চাহিদা আছে-অনেকে ইতোমধ্যে অন্য ব্যাংকে চলে গেছেন। করপোরেট গ্রাহকরাও সরে গেছেন।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মতিঝিল প্রধান শাখায় কিছুটা প্রাণচাঞ্চল্য দেখা গেছে। কর্মকর্তারা ব্যস্ত, গ্রাহকরাও কিছু টাকা তুলছেন, আবার নতুন করে জমাও দিচ্ছেন।

ব্যাংকটির ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মনসুর আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, এটি আমাদের প্রধান শাখা। এখান থেকে আগেও টাকা দেওয়া হয়েছে, এখনও রিকভারি ভিত্তিতে কিছু টাকা দেওয়া হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর এখানে তেমন সমস্যা হয়নি। নানা সমস্যার মধ্যেও দিন শেষে তিন-চার কোটি টাকা থাকতো। কিন্তু ব্যাংক থেকে টাকা লুট হয়েছে-এমন ঘোষণার পর থেকেই সংকট তৈরি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা এনে গ্রাহকদের টাকা দিতে হয়েছে। এখন আগের মতো চাপ নেই, তবে রিকভারি কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রাহকরা হতাশায় পড়ে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই এফডিআরের টাকা তুলে নিয়েছেন। এতে গ্রাহক যেমন মুনাফা পাননি, ব্যাংকও সবাইকে একসঙ্গে টাকা দিতে পারেনি। এখন সরকারি হওয়ায় সময়মতো টাকা পাওয়া যাবে। যারা তাড়াহুড়ো করে টাকা তুলেছেন, তারাই লোকসানে পড়েছেন। 

৫ নভেম্বর গভর্নর সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ ইসলামী ব্যাংককে অকার্যকর ঘোষণা করে সরকারি মালিকানায় কিন্তু বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ গঠনের ঘোষণা দেন। এসব ব্যাংকের গ্রাহকের সকল আমানতের দায়িত্ব সরকারের।

কোনো কর্মীও ছাঁটাই হবেন না। গভর্নরের এমন ঘোষণায় গত এক বছরের বেশি সময় হতাশায় থাকা কর্মীদের মধ্যে নতুন করে ভরসা তৈরি হয়েছে। গভর্নরের এমন আশ্বাসে ইউনিয়ন ব্যাংকের দারোয়ান আব্দুর রহিমও অনুপ্রাণিত হয়েছেন। চোখেমুখে ফিরেছে সজীবতা। উৎস: বাংলানিউজ২৪
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়