ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বাংলাদেশের জন্য একাধিক স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ল্যানসেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে একবছরে বাংলাদেশের হয়েছে ২৪ বিলিয়ন ডলার।
ল্যানসেট কাউন্টডাউন প্রতিবছর ৫০+ পিয়ার-রিভিউ সূচকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংযোগগুলো পর্যালোচনা করা হয়।
ল্যানসেট কাউন্টডাউনের ২০২৫ গ্লোবাল রিপোর্ট বলছে- ২০২৪ সালে গরমের ফলে বাংলাদেশে ২৯ বিলিয়ন সম্ভাব্য শ্রম ঘণ্টার ক্ষতি হয়েছে, যা ১৯৯০-৯৯ সালের চেয়ে ৯২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ৬৪ শতাংশই কৃষিখাতে । চরম তাপমাত্রার কারণে শ্রম ক্ষমতা হ্রাসের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ সম্ভাব্য আয় ২০২৪ সালে ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা জিডিপির ৫ শতাংশের সমান। কৃষিখাত এই ক্ষতির ভার বহন করেছে, যা ২০২৪ সালে মোট হারানো আয়ের ৫৫ শতাংশ।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিশ্বব্যাপি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ক্রমবর্ধমানভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে, জীবন কেড়ে নিচ্ছে এবং জীবিকা এবং অর্থনীতির ক্ষতি করছে। গতবছর বাংলাদেশের মানুষ গড়ে প্রায় ২৯ দিন তাপপ্রবাহের সংস্পর্শে এসেছে। ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের গড় ৬৯ শতাংশ ভূমি কমপক্ষে এক মাস চরম খরার মধ্যে পড়েছে, যা ১৯৫১-১৯৬০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক প্রায় ৪ গুণ বেশি।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ১৯৬০ সালের তুলনায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
২০১৬ সাল এবং ২০২২ সালের মধ্যে মধ্যে, বাংলাদেশে জীবাশ্ম জ্বালানি দহন থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের হিসাবে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি মোট বিদ্যুৎ সরবরাহের শূন্য দশমিক ১ শতাংশ এবং মোট বিদ্যুতের শূন্য দশমিক ৮৫ শতাংশ উৎপাদন করে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০২২ সালে নৃতাত্ত্বিক বায়ুদূষণের কারণে ২ লাখ ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা ২০১০ সালের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। জীবাশ্ম জ্বালানি ২০২২ সালে সমস্ত বায়ু দূষণের মৃত্যুর ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ ভূমিকা রেখেছে। কয়লা পোড়ানোর কারণে জীবাশ্ম জ্বালানী দূষণজনিত মৃত্যুর ৩২ শতাংশের জন্য দায়ী, যা প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
এতে আরও বলা হয়, ২০২২ সালে, বাংলাদেশে দূষণকারী জ্বালানি ব্যবহারের কারণে গৃহস্থালী বায়ুদূষণ প্রতি ১ লাখে ৭৪ জনের মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত। গৃহস্থালী বায়ু দূষণের সঙ্গে সম্পর্কিত মৃত্যুর হার শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বেশি । এছাড়াও বাংলাদেশ ২০২৩ সালে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল হারিয়েছে যা ২০২১ সালের তুলনায় ১ শতাংশ বেশি বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন