বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত টেকসই উন্নয়নের পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংলি। গতকাল বৃহস্পতিবার টিম গ্রুপের একটি সবুজ কারখানা (গ্রিন ফ্যাক্টরি) পরিদর্শনের সময় তিনি এ মন্তব্য করেন। রাষ্ট্রদূত খাতটিতে কর্মপরিবেশ, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা এবং নিয়মতান্ত্রিকতা (কমপ্লায়েন্স) প্রশংসা করেছেন এবং শিল্প সংশ্লিষ্টদের এসব বিষয়কে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রথমত, এটি অত্যন্ত আধুনিক একটি প্রতিষ্ঠান এবং যা দেখেছি তাতে আমি সত্যিই মুগ্ধ। দ্বিতীয়ত, এই কারখানা সুইস ব্র্যান্ডের জন্য উৎপাদন করছে এবং সুইস রাষ্ট্রদূত হিসেবে এটি জানা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে সুইস বাজারের জন্য উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর কর্মপরিস্থিতি কেমন।’ এ সময় তিনি ২০৩০ সালের জন্য কোম্পানির উচ্চাকাক্সক্ষী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যও প্রশংসা করেন এবং এটি ব্যবসায়িক সাফল্য ও টেকসই উন্নয়ন একসঙ্গে সম্ভব করার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
পরিদর্শনের সময় তিনি বিভিন্ন উৎপাদন ইউনিট ঘুরে দেখেন, শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সরঞ্জাম ও সুবিধা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন। সুইস দূতাবাসের সিনিয়র রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রেস কর্মকর্তা খালেদ চৌধুরী তার সঙ্গে ছিলেন। কোম্পানির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল নাকিব এবং অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আবদুল্লা হিল নাকিব বলেন, এই পরিদর্শনের মূল লক্ষ্য ছিল বিদেশে বাংলাদেশের পোশাক খাতের বিরুদ্ধে ছড়িয়ে পড়া নেতিবাচক ধারণা ও ভুল তথ্য দূর করা। তিনি বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রদূতকে খাতের বাস্তব চিত্র দেখাতে চেয়েছি কর্মপরিবেশ থেকে শুরু করে শ্রমিকদের কল্যাণ এবং পণ্যের মান পর্যন্ত। তিনি যা দেখেছেন তাতে খুশি হয়েছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার অনুমতি চেয়েছেন, ‘যা দেশের ব্র্যান্ড ইমেজ উন্নত করতে সাহায্য করবে।’
কারখানা সংশ্লিষ্টরা জানান, ফোর এ ইয়ান ডাইয়িং হলো ইউএসজবসি সনদপ্রাপ্ত লিড প্লাটিনাম গ্রিন ফ্যাক্টরি, যা উচ্চমূল্যের জ্যাকেট উৎপাদন করে। প্রতি জ্যাকেটের এফওবি মূল্য প্রায় একশ মার্কিন ডলার, যা ইউরোপ ও মার্কিন বাজারে ৭০০ থেকে ৮০০ মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়। টিম গ্রুপ বর্তমানে ২০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের জন্য উৎপাদন ও সরবরাহ করছে।
নাকিব বলেন, কোম্পানির মোট ৮২টি উৎপাদন লাইন রয়েছে এবং এ বছর টার্নওভার ৭০ মিলিয়ন ডলার অতিক্রম করার আশা রয়েছে। ‘কয়েকটি ভ্যালু অ্যাডেড বায়ারের সঙ্গে চলমান আলোচনা সফল হলে ২০২৬ সালে টার্নওভার ১০০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। আমাদের গ্রুপের বার্ষিক বৃদ্ধি হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ।’
বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতি নিয়ে নাকিব বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের চীনা আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির ফলে চীনা সরবরাহকারীরা ইউরোপীয় বাজারের দিকে মনোযোগ বাড়াতে পারে। এটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, তবে অতিক্রমযোগ্য নয়। ইউরোপীয় ক্রেতারা ধীরে ধীরে চীনা সরবরাহকারীদের থেকে বিচ্যুত হচ্ছে, যা আমাদের জন্য সুযোগ তৈরি করছে।’
তিনি দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের গুরুত্বও উল্লেখ করেন, “আমাদের কোনো গ্রাহক আমাদের পরিষেবা, ডেলিভারি বা মানের কারণে ছেড়ে যায়নি। সময়মতো মানসম্মত পণ্য সরবরাহ করাই আমাদের শক্তি। বর্তমানে প্রায় ১০ শতাংশ উৎপাদন তাদের নিজস্ব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের ভিত্তিতে হচ্ছে।’ সূত্র: দেশরুপান্তর ও স্টার নিউজ