আর্থিক সংকট মোকাবিলায় বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে সরকার। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মোকাবিলায় দেশীয় উৎসের তুলনায় বিদেশি উৎস থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে অর্থ বিভাগ। সাধারণত প্রতিবছর বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের আশপাশে রাখা হলেও আগামী অর্থবছরে তা কমিয়ে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এই ঘাটতি পূরণে সরকার অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে যাচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২৫ শতাংশ কমিয়ে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ ঋণের বাকি অংশ নন-ব্যাংক খাত থেকে সংগ্রহ করা হবে। এই উৎস থেকে ২১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে
১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা
এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
অন্যদিকে বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে সরকারের লক্ষ্য এক লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ, যার মধ্যে এক লাখ কোটি টাকা ঋণ এবং পাঁচ
হাজার কোটি টাকা অনুদান হিসেবে সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত দেশের মোট দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ২০ হাজার ২০৫ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। চার বছর আগেও বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এ সময়ের মধ্যে বিদেশি ঋণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের জন্য ঋণপ্রাপ্তি বাধাগ্রস্ত হয়। আবার বিদেশি ঋণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হলে ভবিষ্যতে পরিশোধের চাপ বাড়ে। তাই সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা করতে দেশি ও বিদেশি উৎসের মধ্যে সুষম সমন্বয় প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, বিদেশি ঋণ পরিশোধের বর্তমান চাপকে ঝুঁকিপূর্ণ বলাই যায়। উৎস: দৈনিক আমাদের সময়।