ডেস্ক রিপোর্ট : কুমিল্লা সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন ডিসি, এসপি, ভিসিসহ ২৬ জনস্টাফ রিপোর্টার।। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘আত্ম রক্ষার্থে’ কুমিল্লা সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন কুমিল্লার তৎকালীন জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম ও হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি খায়রুল আলম, কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি আবদুল মঈনসহ ২৬ জন। এদের বেশির ভাগই পুলিশে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের নেতা ও সাবেক এমপি বাহারের ঘনিষ্ঠ মীর্জা মো: কোরাইশী কুমিল্লা সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) বিভ্রান্তি দূর করতে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের যে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে তাদের নাম রয়েছে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গতবছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘আত্ম রক্ষার্থে’ সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৬২৬ জন। বিষয়টি নিয়ে ‘দুঃখজনকভাবে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর সংবাদ’ ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তালিকা প্রকাশ করে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) । প্রকাশিত তালিকায় কুমিল্লা সেনানিবাসে যারা আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের নাম রয়েছে। তার হলেন- কুমিল্লার তৎকালীন জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম ও হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি খায়রুল আলম, কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি আবদুল মঈন, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের নেতা ও সাবেক এমপি বাহারের ঘনিষ্ঠ মীর্জা মো: কোরাইশী, পুলিশের ইন্সপেক্টর আসিফ, কনস্টেবল দিদারুল, মাসুদ, আরিফ, রিপন, জাহিদ, কাইয়ূম, ফেরদৌস, কা হায় মং, মেহেদী, ইব্রাহিম, আমির, নায়েক ইদ্রিস, এএসআই সুদিপ্তা, এএসআই সুশ্ময়, এএসআই আবুল কাওসার, এএসআই লিটন চাকমা, কনস্টেবল সুজন, এএসআই আজিজ ও ওসি সঞ্জয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে বিগত সরকারের পতনের পর কিছু কুচক্রী মহলের তৎপরতায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। এর ফলে সরকারি দফতর, থানাগুলোতে হামলা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর আক্রমণ ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মব জাস্টিস, চুরি, ডাকাতিসহ বিবিধ বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এ ধরনের সংবেদনশীল ও নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিকদের মনে নিরাপত্তাহীনতার জন্ম নেয়।’
এসময় ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব সেনানিবাসে প্রাণ রক্ষার্থে কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিক আশ্রয় চেয়েছিলেন বলে জানায় আইএসপিআর। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ভূত আকস্মিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সেনানিবাসে আশ্রয়প্রার্থীদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করার চাইতে তাদের জীবন রক্ষা করা প্রাধান্য পেয়েছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে, ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, পাঁচ জন বিচারক, ১৯ জন অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ৫১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ বিবিধ ১২ জন এবং তাদের পরিবারের ৫১ জন (নারী ও শিশু) সদস্যসহ মোট ৬২৬ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল।
সেসময় শুধু ‘মানবিক দায়বদ্ধতার কারণেই আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ থেকে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন রক্ষা করাই মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল বলেও জানিয়েছে আইএসপিআর। সংস্থাটি বলছে, পরিস্থিতি উন্নয়ন সাপেক্ষে, আশ্রয় নেওয়াদের বেশিরভাগই এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই সেনানিবাস ত্যাগ করেন এবং এর মধ্যে পাঁচ জনকে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আইএসপিআর বলছে, সেনানিবাসে অবস্থানকারী ও আশ্রয় প্রার্থীদের ব্যাপারে ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট আইএসপিআরের আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এবং একই দিনে ১৯৩ জন ব্যক্তির একটি তালিকা (৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও একজন এনএসআই সদস্য ছাড়া) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়, যা ছিল একটি মীমাংসিত বিষয়। সেনানিবাসে আশ্রয়প্রার্থী এসব ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা ও জীবন রক্ষার্থে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাময়িক আশ্রয় প্রদান করা হয়েছিল।
তৎকালীন বিরাজমান নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন ‘বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা’ ছিল বলে মনে করে আইএসপিআর। তারপরও ‘দুঃখজনকভাবে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়িয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সেনানিবাসে প্রাণ রক্ষার্থে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জন ব্যক্তির একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা (৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও এক জন এনএসআই সদস্যসহ) দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সবাইকে এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে আইএসপিআর। বিজ্ঞপ্তিতে সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি পেশাদারত্ব, নিষ্ঠা ও আস্থার সঙ্গে জাতির পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
সুত্র : কুমিল্লার কাগজ