কায়সার হামিদ, কক্সবাজার: [২] উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসার শীর্ষ তিন কমান্ডারকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। যাদের মধ্যে রয়েছে আরসার স্লিপার সেল ও ওলামা বডির শীর্ষ কমান্ডার, অর্থ সমন্বয়ক, এবং আরসার ইন্টেলিজেন্স সেলের কমান্ডার। ১৯ নভেম্বর ১৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
[৩] সোমবার (২০ নভেম্বর) র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবু সালাম চৌধুরী এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
[৪] তিনি আরও জানান, মধ্যরাতে র্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগীতার ভিত্তিতে কক্সবাজারের উখিয়া থানাধীন ১৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা হতে আরসা’র স্লীপার সেল ও শীর্ষ কমান্ডার হামিদ হোসেন প্রকাশ ডাক্তার হামিদ, অর্থ সমন্বয়ক আবু তৈয়ব প্রকাশ সোনা মিয়া প্রকাশ সোনালী এবং ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশন এলাকা হতে আরসা’র ইন্টেলিজেন্স সেলের কমান্ডার ওসমান গনি’কে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, অস্ত্র ও এ্যামুনিশনসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
[৫] মৌলভী হামিদ হোসেন প্রকাশ ডাঃ হামিদ ২০১৭ সালে পরিবারসহ মিয়ানমারের বুচিডং হতে কচুবুনিয়া হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং বালুখালী ক্যাম্প-৮ই, ব্লক-বি-৮০৬ এ বসবাস শুরু করে। বাংলাদেশে আগমনের পূর্বে মৌলভী হামিদ হোসেন ২০১৭ সালের প্রথমে মায়ানমারে আরসা’র কমান্ডার মৌলভী তোহা এর মাধ্যমে আরসা’য় যোগদান করে। হামিদ গ্রাম্য ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত ছিলেন এবং তার বাবাও একজন গ্রাম্য ডাক্তার ছিলেন। ফলে স্থানীয় রোহিঙ্গাদের মাঝে তার পরিবারের ব্যাপক প্রভাব ছিল। এই সুবাদে সে দ্রুত আরসা’র নেতৃত্ব পর্যায়ে পৌছে যায়। প্রথমে সে ক্যাম্প-৮ই, ব্লক-বি এর জিম্মাদর পরে ক্যাম্প-৮ই এর প্রধান জিম্মাদারের দায়িত্ব পালন করে। শিক্ষিত এবং স্থানীয় রোহিঙ্গাদের মাঝে প্রভাব থাকায় সে দ্রুত গ্রেপ্তারকৃত ওলামা বডির প্রধান সালমান মুরব্বীর অন্যতম সহযোগী হয়ে উঠেন এবং ওলামা বডির কার্যকরী সদস্য হোন। এই সময় সে আরসা’র নতুন সদস্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথেও জড়িত ছিলেন।
[৬] সালমান মুরব্বী গ্রেপ্তার হওয়ার পর হামিদ তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে ওলামা বডির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং তার নেতৃত্বে তিনি স্লীপার সেল গঠন করে। সে ক্যাম্পে অবস্থানরত যুবক বয়সী ও শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে আরসা’য় যোগদানের জন্য কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচিত কর্মীদের বিভিন্ন তথ্যাদি যাচাই বাছাই শেষে যোগ্য ব্যক্তিদেরকে আরসা’য় অন্তর্ভুক্ত করে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য তাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রেরণ করতো। প্রশিক্ষণকালীন প্রশিক্ষণরত আরসা’র সদস্যদের পরিবারের ভরণপোষনের জন্য আবু তৈয়বের নিকট হতে উত্তোলিত অর্থ গ্রহণ করে হামিদ হোসেন ৪-৫ হাজার টাকা করে ক্যাম্প-১৬, ব্লক-সি/২ তে থাকা মৌলভী ওয়ারিছ, ক্যাম্প-২০ই তে অবস্থানকারী সাদ্দাম হোসেন ও আরব আলী’র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণে গমনকারী আরসা’র নতুন সদস্যদের পরিবারের ভরণপোষনের জন্য সরবরাহ করতো। হামিদ এর ভাষ্যমতে এ পর্যন্ত সে ৬০ জন নতুন সদস্যকে প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ করে বলে জানা যায়।
[৭] গ্রেপ্তারকৃত আরসা’র প্রধান অর্থ সমন্বয়ক আবু তৈয়ব প্রকাশ সোনা মিয়া প্রকাশ সোনালী ২০১৬ সালে আরসায় যোগদান করে এবং ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং প্রথমে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-০৭ ও পরবর্তীতে ক্যাম্প-৮ এ বসবাস শুরু করে। সে ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ০৫, ০৬, ০৭ এর কমান্ডার আব্দুল হালিমের মাধ্যমে আরসা’র সক্রিয় সদস্য হয়ে উঠে।
[৮] ওসমান গনি আরসা’র একজন সক্রিয় সদস্য। তথ্য-প্রযুক্তি এবং ইংরেজী ভাষায় তার বেশ দক্ষতা থাকায় সে আরসা’র তথ্য-প্রযুক্তির বিষয় দেখভাল করতো। এই সুযোগে সে ক্যাম্পে পরিচালিত এনজিও ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তথ্য আরসা’র শীর্ষ নেতাদের সরবরাহ করতো। পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতির খবরাখবর পৌছাতো। তাছাড়া বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ক্যাম্পে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধি লক্ষ রাখতো। কোন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করলে গ্রুপের সদস্যরা গ্রুপে মেসেজ দিয়ে সকলকে সতর্ক করে দিতো।
[৯] গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। সম্পাদনা: এ আর শাকিল
প্রতিনিধি/এআরএস
আপনার মতামত লিখুন :