ডেস্ক রিপোর্ট: [২] ২৬ বছর পর ফিরে এসে স্ত্রীকে তালাক ও ভিটেবাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলায় হাসানের সঙ্গে বিরোধ লাগে সন্তানদের। এই ক্ষোভ থেকেই তারা বাবাকে হত্যা করেছেন। চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড এলাকায় বাঁশখালীর হাসান আলীকে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেখানে তারা এসব জানান বলে পিবিআই সূত্র জানায়।
[৩] ২১ সেপ্টেম্বর রাতে নগরের পতেঙ্গা থানার ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় খালের কাছ থেকে একটি লাগেজ উদ্ধার করে পুলিশ। এর ভেতরে মানুষের হাত ও পায়ের আটটি টুকরা পাওয়া যায়। উদ্ধার হওয়া আঙুলের ছাপ নিয়ে তার পরিচয় শনাক্ত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পতেঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা করে। ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে নগরের ইপিজেড থানার আকমল আলী রোড এলাকার একটি ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ হাসান আলীর স্ত্রী ও বড় ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে বাবাকে খুনের বিস্তারিত বর্ণনা দেন। পরে মা ও ছেলেকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়।
[৪] আদালত সূত্র জানায়, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মোস্তাফিজুর রহমান তার বাবাকে খুনের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, তার বর্তমান বয়স ৩২ বছর। তিনি যখন ছয় বছরের, তখন তার বাবা তাদের গ্রামের বাড়ি বাঁশখালী থেকে চলে যান। জবানবন্দিতে তিনি আরও বলেন, বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার ২৬ বছর পর তাদের বাবা দুই বছর আগে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর কিছুদিন থেকে চলে যান। আবার এক বছর আগে ফিরে আসেন। বাবা জানান, বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পর ২৬ বছর ধরে তিনি জাহাজে চাকরি করতেন। আবার কারাগারেও ছিলেন বলে জানান। বাবা বাড়িতে আসার পর তাঁরা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেন। কিন্তু বাবার মধ্যে কোনো অনুভূতি ছিল না। মাকে তালাক দেবেন। তাদের ভিটেবাড়ি বিক্রি করে দেবেন বলে জানান। বিষয়টি নিয়ে বাবার সঙ্গে তাদের মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। ২০ সেপ্টেম্বর তারা বাবাকে চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড এলাকায় ছোট ভাই শফিকুর রহমানের বাসায় ডেকে আনেন। ভিটেবাড়ি বিক্রি করে দেবেন বলায় সেদিন বাবাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে খুন করেন তিনি (মোস্তাফিজুর)। বাসায় তখন মা, ছোট ভাই ও তার স্ত্রী ছিলেন। সেদিন দুই ভাই লাশটি বস্তায় ভরে বাসার খাটের নিচে রেখে দেন। পরে টুকরা করে বস্তা ও লাগেজে ভরেন। লাগেজটি ফেলেন পতেঙ্গা ১২ নম্বর ঘাটে আর বস্তাটি বাসার পাশে একটি ডোবায় ফেলে দেন।
[৫] মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো পরিদর্শক ইলিয়াস খান সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মা, ছেলের মধ্যে পরিবারের আপনজনকে খুনের জন্য অনুতপ্ত হতে দেখা যায়নি। এই হত্যাকাণ্ডে আরও অংশ নিয়েছিলেন ছোট ছেলে ও তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের জামাই। তাঁদের ধরতে অভিযান চলছে।