এম. এমরান পাটোয়ারী, ফেনী: [২] বড় ভাই ও চাচাতো বোনকে মারধর করে আলিম প্রথম বর্ষের এক মাদরাসা ছাত্রীকে (১৭) অপহরণের অভিযোগে ফেনীর সোনাগাজী থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় আবদুল খালেক (২৮) নামে সিএনজি অটোরিকশা চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে ফেনী সদর উপজেলার দৌলতপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
[৩] এর আগে সোমবার বিকেলে পরীক্ষা শেষে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার একটি এলাকা থেকে ওই ছাত্রীকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
[৪] এ ঘটনায় রাতে ছাত্রীর বাবা হাফেজ উল্যাহ বাদী হয়ে উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের নাজিরপুর এলাকার ফয়েজ আহাম্মদের ছেলে স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী মো. ইয়াছিন, তার সহযোগী সিএনজি চালক আবদুল খালেকের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমণ আইনে অপহরণ মামলা দায়ের করেছেন।
[৫] ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার পর পুলিশ সিএনজি চালক আবদুল খালেক, ছাত্রলীগ কর্মী ইয়াছিনের বাবা ফয়েজ উল্যাহ, তার বন্ধু মোশারফ হোসেনসহ চারজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু রাতে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের হস্তক্ষেপে সিএনজি চালক ছাড়া বাকি তিনজনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
[৬] পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, অপহরণের শিকার ওই ছাত্রী উপজেলার স্থানীয় একটি মাদ্রাসার আলিম প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ওই ছাত্রীকে মাদরাসায় আশা-যাওয়ার পথে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে আসছিলো উপজেলার নাজিরপুর এলাকার ছাত্রলীগ কর্মী মো. ইয়াছিন নামে এক বখাটে যুবক। ছাত্রী বিষয়টি বাড়িতে তাঁর মা-বাবা ও ভাইকে জানায়। পরে তারা বিষয়টি ইয়াছিনের পরিবারকে অবহিত করেন। কিন্তু ইয়াছিনের পরিবারকে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি ছাত্রীর পরিবার।
[৭] এরপর তারা সামাজিকভাবে কয়েকজন সমাজপতির মাধ্যমে ওই যুবককে ডেকে ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতে নিষেধ করেন। এতে ইয়াছিন আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তিনি ওই ছাত্রীকে অপহরণের হুমকি দেন। এরপর থেকে ছাত্রীর ভাই নিয়মিত তাঁকে মাদ্রাসায় আনা-নেওয়া করে আসছে। পরে স্থানীয়ভাবে সালিশী বৈঠক করেও কোন লাভ হয়নি। গত কিছুদিন আগে ইয়াছিন এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ছাত্রীর পরিবারকে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় ছাত্রীর পরিবার তাতে অস্বীকৃতি জানায়।
[৮] এরপর সোমবার সকালে পরীক্ষা দিতে ওই ছাত্রী তার ভাই ও চাচাতো বোনের সঙ্গে মাদ্রাসায় যায়। পরীক্ষা শেষে সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার ডাক বাংলা ভোরবাজার সড়কের বড় পোল এলাকায় পৌঁছায়। সেখানে পূর্ব থেকে আরেকটি সিএনজিতে ওৎ পেতে থাকা ছাত্রলীগ কর্মী ইয়াছিনসহ কয়েকজন গাড়ি গতিরোধ করে। এ সময় তারা ছাত্রীর ভাই ও চাচাতো বোনকে মারধর করে জোরপূর্বক অটোরিকশা থেকে নামিয়ে ছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তখন তাদের চিৎকার শুনতে পান আশপাশের লোকজন। তবে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই ছাত্রীকে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে অচেতন করে অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায় বখাটেরা।
[৯] স্কুল ছাত্রীর বাবা বলেন, ঘটনার পর থেকে তারা মেয়েকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ইয়াছিনের বাড়িতে যান। সেখানে ইয়াছিনের পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেয়। এরপর মেয়ের কোন সন্ধান না পেয়ে থানায় মামলা করেছেন।
[১০] তিনি অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ কর্মী বখাটে ইয়াছিনের ভয়ে তার মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসায় যেতে পারেনি। এখন পরীক্ষা আসায় মেয়েকে তার ভাইয়ের সঙ্গে মাদরাসায় পাঠিয়েছেন। তিনি বখাটে ইয়াছিনসহ অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন।
[১১] সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমাম হাসান বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মূল অপহরণকারীর সহযোগী সিএনজি চালককে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে ফেনী কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ছাত্রীকে উদ্ধার, অবস্থান শনাক্তকরণ ও বখাটেসহ অন্যান্য আসামিদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
[১২] ওসি বলেন, ঘটনার পর ছেলের বাবাসহ তিনজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে মেয়ের পরিবার তাদের নামে মামলা না দেয়ায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই তিনজনকে ছেড়ে দেয়া হয়। সম্পাদনা: নাহিদ হাসান
প্রতিনিধি/এনএইচ