সনতচক্রবর্ত্তী, ফরিদপুর: ফরিদপুর জেলায় বাঁশ বাগানের পরিমাণ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। বাঁশের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য কুঠির শিল্প।
গ্রামীণ জনপদে একসময় বাঁশঝাড় ছিল না এমনটা কল্পনাও করা যেতো না। বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়ের ঐতিহ্য গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপ। বিশ্বে প্রায় ১৫০০ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে। বাংলাদেশে জংলি ও আবাদি প্রকৃতির ২৬ প্রজাতির বাঁশ জন্মে। কিন্তু বনাঞ্চলের বাইরেও এখন যেভাবে গ্রামীণ বৃক্ষরাজি উজাড় হচ্ছে তাতে হারিয়ে যাচ্ছে এ বাঁশঝাড়।
এ দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নিকট বাঁশের গুরুত্ব অপরিসীম। গৃহ নির্মাণ, মঞ্চ নির্মাণ, মই, মাদুর, ঝুড়ি, ফাঁদ, হস্তশিল্পসহ নিত্যদিনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরির কাজে বাঁশের রয়েছে বহুল ব্যবহার।
বাঁশ জাতীয় উদ্ভিদ মাটি এবং পানি থেকে ধাতু এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ নিজের শিকড়ের মধ্যে শোষনের মাধ্যমে বিশুদ্ধায়নের বিষয়ে খুব কার্যকরী বলে প্রমাণিত। বাঁশের ঝোপঝাড় সমপরিমাণ বনাঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে শুষে নেয় কার্বন গ্যাস।বিভিন্ন প্রকার ওষুধি কাজে প্রয়োগসহ ‘ব্যামবো ম্যাসেস’ এখন জনপ্রিয় থেরাপি।
প্রকৃতি ও জীবন রক্ষায় বাঁশ চাষ, তার সম্প্রসারণ ও বিকাশের জন্য গড়ে তুলতে হবে বাঁশ নার্সারি। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উন্নতমানের দ্রুত বর্ধনশীল বাঁশের আবাদ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে বাঁশের সবুজ বেস্টনি যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। রক্ষা পেতে পারে আমাদের জীববৈচিত্র।
বাঁশ বাগানের মালিকরা বলেন, আগে আমাদের বাঁশ ঝাড় অনেক বড় ছিলো। এখন এর প্রতি গুরুত্ব না দেয়ায় অনেক কমে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঝাড় কমে যাওয়ায় এখন বাঁশ আর সহজলভ্য নয়। এ কারণেই দিনে দিনে বাড়ছে বাঁশের দাম। কিছুদিন আগেও একটি বাঁশের দাম ছিলো ১০০ টাকা। এখন বেড়ে দাড়িয়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রকৃতির পরম বন্ধু এই বাঁশঝাড় কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এই বাঁশঝাড় টিকিয়ে রাখার তাগিদ দিচ্ছেন পরিবেশবিদ ও প্রকৃতি প্রেমীরা।
পরিবেশ সুরক্ষা ও কৃষি সহায়ক উপাদান হিসেবে বাণিজ্যিক ভাবে বাঁশ চাষের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। ফরিদপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাদের উদ্বুদ্ধ করছে। এই বাঁশের ঝাড় পুনরায় স্থাপন করতে কি প্রযুক্তি লাগবে সেগুলো আমরা দিচ্ছি। এর মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। স্বল্প পরিসরে হলেও বাড়ির আশেপাশে বাঁশ বাগান সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়ার উপর জোড় দিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। সম্পাদনা: অনিক কর্মকার
প্রতিনিধি/একে/জেএ
