শিরোনাম
◈ ২৯ জুলাই বাংলাদেশকে চূড়ান্ত শুল্ক আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের ◈ বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধদের চিকিৎসা দিতে চীনা মেডিকেল টিম ঢাকায় ◈ ৩৭তম বিয়ে করতে এসে ধরা পড়লেন এক প্রতারক, তারপর যা ঘটল ◈ সায় ছিলো না ভারতের, বাতিল হলো দিল্লিতে পলাতক আওয়ামী নেতাদের সংবাদ সম্মেলন! ◈ এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে কম্বোডিয়ায় হামলা চালাল থাইল্যান্ড ◈ দুদককে চ্যালেঞ্জ দিয়ে জয় বললেন: মিথ্যা অভিযোগে ভয় পাই না, আইনিভাবে মোকাবিলা করব ◈ ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ ◈ জাতিসংঘ কার্যালয় স্বার্থ বিবেচনায় স্থাপন, চীনের প্রকল্পে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ক স্বাভাবিক: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ বাংলা‌দেশ-পা‌কিস্তান তৃতীয় ম‌্যা‌চের টিকিট বিক্রির টাকা বিমান দূর্ঘটনায় আহতদের দিচ্ছে বিসিবি ◈ বাংলা‌দে‌শের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ধ্বস, হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ালো পাকিস্তান

প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০২:২৬ দুপুর
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০২:২৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অবশেষে দেড়শো বছর পর সংরক্ষিত হলো ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ'র মা-বাবার কবর

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ'র মা-বাবার কবর

এএইচ রাফি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ১৮৬২ সালের ৮ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে এক সঙ্গীত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। তার পিতা সবদর হোসেন খাঁ ওরফে সদু খাঁও ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ। মাতার নাম সুন্দরী বেগম। কিশোর বয়সে তিনি কলকাতার প্রখ্যাত সংগীত সাধক গোপালকৃষ্ণ ভট্রাচার্যের শিষ্যত্বে ৭বছর সরগম সাধন করে যন্ত্রসংগীত সাধনায় নিযুক্ত হন। মূলত এরপর থেকেই তিনি ভারতে বসবাস শুরু করেন। তবে তার পিতা-মাতা বাংলাদেশেই থেকে যান। প্রায় দেড়শত বছর আগে সুর সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ'র পিতা-মাতা মৃত্যু বরণ করেন। তাদের শিবপুরে নিজ বাড়ির পাশেই কবর দেওয়া হয়। বিগত দেড়শত বছর যাবত অরক্ষিত ও অবহেলায় ছিল ওস্তাদ আলাউদ্দিন খা'র পিতা-মাতার কবর। সেখানে কুকুর ঘুমানোর ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এনিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। অবশেষে দেড়শত বছর পর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলাউদ্দিন খাঁ'র পিতা-মাতার কবর সংরক্ষণ করা হয়েছে। ৬ সেপ্টেম্বর আলাউদ্দিন খাঁ'র ৫০ তম মৃত্যু বার্ষিকীর আগে তার মা-বাবা'র কবর সংস্কার শেষ করা হয়েছে।

ইতিহাসে বিভিন্ন গ্রন্থ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ বাঙালির এমন এক সুরসাধক যিনি সর্বপ্রথম পাশ্চাত্যে এই উপমহাদেশের রাগসঙ্গীতকে পরিচিত ও প্রচার ও সমাদৃত করেন। তার সঙ্গীতগুরু ছিলেন আগরতলা রাজদরবারের সভাসঙ্গীতজ্ঞ তানসেনের কন্যাবংশীয় রবাবী ওস্তাদ কাশিম আলী খাঁ। তিনি সঙ্গীতজগতে এক নতুন ঘরানার প্রবর্তন করেন, যা ‘আলাউদ্দিন ঘরানা’ বা ‘মাইহার ঘরানা’ নামে পরিচিতি লাভ করে। যোগ্য শিষ্য তৈরি তার এক বিশাল কীর্তি। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর তালিমের গুণে তার পুত্র সরোদশিল্পী ওস্তাদ আলী আকবর খান বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন। ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’ ও ‘পদ্মবিভূষণ’ এবং তাঁর জামাতা সেতারশিল্পী পণ্ডিত রবিশঙ্কর বিশ্বখ্যাত হয়েছেন এবং ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’, ‘পদ্মবিভূষণ, ও ‘ভারতরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের মধ্যপ্রদেশের মাইহারেরই ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জীবনাবসান ঘটে। সেখানে তার কবর রয়েছে। তবে

শিবপুরে এখনো রয়েছে তার মা-বাবার কবর। কবরটি অযত্ন ও অবহেলায় পড়েছিল। তাদের কবরের সাথে রয়েছে আলাউদ্দিন খাঁ'র এক বোনের কবরও। তাদের মৃত্যুর প্রায় দেড়শত বছর পর কবরটি সংস্কার করে দৃষ্টি নন্দন ভাবে গড়ে তুলা হয়েছে। তার নামে গড়ে উঠেছে শিবপুর ওস্তাদ আলাউদ্দি খাঁ কলেজ। সেই কলেজে তার ইতিহাস সম্বলিত মোড়াল স্থাপিত করা হয়েছে। এছাড়াও ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ'র নিজ অর্থ একটি পুকুর খনন করে এক পাড়ে একটি মসজিদ তৈরি করে গিয়েছিলেন। মসজিদটিও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সংস্কার করা হয়েছে।

মসজিদটি তত্ত্বাবধান করেন আলাউদ্দিন খাঁ'র বংশের নাতি খুরশেদ আলম খাঁ বলেন, আমার দাদার মা-বাবা'র কবর প্রায় দেড়শত বছর অরক্ষিত-অবহেলায় ছিল। সংস্কার করার পর কবরটি খুব সুন্দর লাগবে। মসজিদটি দেখা শোনা আমি করি, এটিও সংস্কার করা হয়েছে৷

স্থানীয় সাংবাদিক হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ'র অনেক সম্পদ বেদখল হয়ে পড়েছে। এগুলো উচ্ছেদ করে কমপ্লেক্স নির্মাণের দাবি জানাই।

সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ স্মৃতি সংসদের সভাপতি রানা শামীম রতন বলেন, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ মারা যাওয়ার পর এই স্থানটির করুন পরিণতি ছিল। ইউএনও একরামুল সিদ্দিকীর একান্ত প্রচেষ্টায় ম্যুরাল তৈরি ও কবরটি সংস্কার করা সম্ভব হয়েছে। আমার দাবি এখানে তার নামে স্মৃতি কমপ্লেক্স গড়ে তোলা। তার যাবতীয় জিনিস ভারতে সংরক্ষিত আছে। আমরা চাই সেই সব জিনিস ফিরিয়ে এনে একটি যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হোক।

নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একরামুল সিদ্দিকী বলেন, আমি যোগদানের পর শিবপুরে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ'র বাড়িতে যাই। গিয়ে দেখি তার পিতা-মাতার কবর পুকুরে হেলে পড়ে আছে। আর কুকুর ঘুমিয়ে আছে। তেমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। এরপর আমি ম্যুরাল তৈরি ও কবরস্থানটি সংস্কারে উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমাদের আরও অনেক পরিকল্পনা আছে। পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করা হবে। সম্পাদনা: হ্যাপী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়