সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ: কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের আর্তনাদ থামছে না। একদিকে চিকিৎসার চিন্তা, অন্যদিকে চুরির ভয়ে আতঙ্ক, এমন পরিস্থিতিতে অসুস্থ মানুষগুলো এখন দ্বিগুণ ভোগান্তিতে। সামান্য অসাবধান হলেই লিফট বা ওয়ার্ডের ভিড়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা, এমনকি ব্যাগও। এমন ঘটনা যেন দিন দিন বেড়েই চলছে।
শনিবার (৪ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর ব্যাগ থেকে নগদ টাকা উধাও হয়ে। যায়। হতভাগা রোগী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "আমার আর এক টাকাও নাই, সব নিয়ে গেছে।" তাঁর এই অসহায় চিৎকার শুনে পাশে থাকা অন্য রোগী ও স্বজনরাও ভীত হয়ে পড়েন। কেউ ব্যাগ বুকে জড়িয়ে ধরেন, কেউবা তাড়াতাড়ি মোবাইল ফোন লুকিয়ে ফেলেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিনই এমন চুরির অভিযোগ পাওয়া যাচেছ। হাসপাতালের ভেতরে চোরচক্র এখন নিত্য অতিথি। তারা রোগীর বেশে বা ফাইল হাতে কর্মচারীর কিংবা রোগীর স্বজনের ছদ্মবেশে ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ে।
মুহূর্তের সুযোগে মানিব্যাগ, মোবাইল বা টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। অনেক সময় রোগীর গতকাল লিফটে চুরি হওয়া নিয়ে হট্টগোল করতে দেখা যায় রোগী-স্বজনদের বিছানার পাশে রাখা ব্যাগ নিয়েও উধাও হয় চোরেরা।
রোগী ও স্বজনরা বলছেন, হাসপাতালে চিকিৎসার পাশাপাশি এখন নিরাপত্তার ভয়ে থাকতে হচ্ছে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র বাইরে রেখে আসছেন, তবুও নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। রোগী দেখতে আসা এক স্বজন এই প্রতিবেদককে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রোগী দেখতেও ভয় লাগে। কখন কে পাশে এসে ব্যাগ নিয়ে পালাবে কে জানে। এত বড় হাসপাতালে নিরাপত্তার কী অবস্থা বুঝতেই পারছেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকেই দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা। হাসপাতালের ভেতরে সিসি ক্যামেরা থাকলেও সেগুলোকে ফাঁকি দিয়েই সক্রিয় চোর চক্র। অনেক সময় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানালেও ফল মেলে না বলেও জানান স্বজনরা।
এ বিষয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন, হাসপাতালের ভেতরে মাঝে মাঝে এমন ঘটনা ঘটছে। আমাদের আনসার সদস্যরা প্রায়ই সন্দেহভাজনদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। তবুও কেউ অভিযোগ দিলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, দরকার দৃশ্যমান পদক্ষেপ। তারা আশা করছেন, হাসপাতাল প্রশাসন দ্রুত কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেবে যাতে চিকিৎসার পাশাপাশি অন্তত চুরির ভয় থেকে মুক্তি পান রোগী ও স্বজনরা।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একসময় ছিল মানুষের সেবার নিরাপদ আশ্রয়। এখন সেখানে ভর করেছে ভয়ের ছায়া। চিকিৎসার আশা নিয়ে আসা মানুষগুলো যেন প্রতিনিয়ত আতঙ্কের সঙ্গেই লড়ছেন।