ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় টাকার জন্য গাভী নিয়ে ফেরত দিয়েও পদ হারিয়েছেন বিএনপি নেতা মো. বেলাল খান। তিনি উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের ১নং ঘিগড়া ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) রাতে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রতন দেবনাথ ও সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম খান রিয়াজ তাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সব পদ ও দল থেকে বহিষ্কার করেন।
বহিষ্কারাদেশে উল্লেখ করা হয়, শুক্তাগড় গ্রামের জনৈক আবু বকরের স্ত্রীর গোয়াল থেকে গাভী নিয়েছেন। বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধমে প্রচারিত হয়েছে, যা দলীয় শৃঙ্খলার চরম পরিপন্থি।
জানা যায়, বুধবার (১৪ মে) সকালে শুক্তাগড় গ্রামের আবু বকরের স্ত্রী নারগিস আক্তারের গোয়াল থেকে দুধের গাভী নিয়ে যান মো. বেলাল খান। অনেক অনুরোধ ও অনুনয় বিনয় করেও তা ফেরত নিতে পারেনি গৃহবধূ নারগিস। কয়েকজনের কাছে বলেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় বাছুর কোলে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে হাজির হন তিনি। ওই নারী বিচার চাইতে আদালতে গেলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। দুগ্ধপোষ্য বাছুর মায়ের দুধ না খেতে পেরে ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়লে আদালত প্রাঙ্গনেই ফিটারে দুধ খাওয়ান মালিক নারগিস। ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে বসে বোতলে করেই বাছুরটিকে দুধ খাওয়াতে দেখা যায় নারগিসকে। তবে এ ঘটনায় আদালতে কোনো মামলা হয়নি। পরে স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় বাছুরটিকে মা গরুর দুধ খাওয়ানোর জন্য শর্তে ফিরে এবং দুধ খাওয়ানোর জন্য বেলাল খানের বাড়িতে রওনা হন গৃহবধূ নারগিস। সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের টনক নড়লে গাভীটি ফেরত দেন বেলাল খান।
স্থানীয়রা জানান, তার স্বামী আবু বকর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি এলাকাছাড়া। স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে রেখে নিরুদ্দেশ হওয়ায় কোনো ধরনের খরচ বহন করছেন না আবু বকর।
গৃহবধূ নারগিস আক্তার জানান, গত কয়েক মাস ধরে স্বামী তার খোঁজখবর রাখছেন না। গার্মেন্টসে চাকরি করে তিল তিল করে কিছু অর্থ জমিয়ে সম্প্রতি একটি দুধের গাভী কিনেছেন নারগিস। তার এক মাসের একটি বাছুরও আছে। কিন্তু নারগিসের স্বামীর কাছে ২০ হাজার টাকা পাওনা অজুহাত দেখিয়ে চাঁদা দাবি করে মো. বেলাল খান বুধবার সকালে দুধের গরুটি নিয়ে যান। মা গরুটিকে নিয়ে যাওয়ায় দুধ না খেতে পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বাছুরটি।
অভিযুক্ত মো. বেলাল খান বলেন, ‘৯ বছর আগে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে নার্গিসের স্বামী আবু বকরকে ২০ হাজার টাকা তুলে দিই, যা এখন সুদে-আসলে ৩০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। আমার টাকা না দেয়ার কারণে আমি গরু নিয়েছি।’
তবে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের শুক্তাগড় গ্রামের মাঠকর্মী আল আমিন বলেন, যখন প্রত্যন্ত এলাকায় প্রকল্প থেকে ঋণ সহায়তা দেয়া হয়েছিল তখন কোনো জামিন বা জিম্মাদার নেয়া হয়নি। আমার তালিকায় আবু বকরের নাম নেই। আমরা তাকে চিনিও না। অযথাই আমাদের প্রকল্পকে জড়িত করা হয়েছে। উৎস: সময়নিউজটিভি।