মুরাদনগরে চুরির অপবাদে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
এন এ মুরাদ, মুরাদনগর : কুমিল্লার মুরাদনগরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে চোর আখ্যা দিয়ে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে এটিকে পরিকল্পিত হত্যা উল্লেখ করে এর বিচার দাবী করেছে এলাকাবাসী। ইতিমধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত কালারাইয়া গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে মোস্তফা (৪৩), সেলিম (২৮) ও নজরুল ইসলামের ছেলে রাব্বি আহমেদ (২১) কে আটক করে আদালতে সোপর্দ করে বাঙ্গরা থানা পুলিশ। নিহত সাদ্দাম হোসেন (৩২) ১নং শ্রীকাইল ইউনিয়নের রোয়াচালা গ্রামের ইরন মিয়ার ছেলে।
জানা যায়, গত শুক্রবার ( ৯ মে) রাতে কালারাইয়া লাডুম শাহ মাজারের খাদেম কাউছার মোল্লা সাদ্দাম হোসেনকে ফোনে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে কাউছার মোল্লার নেতৃত্বে চুরির অভিযোগে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গত বুধবার বিকেলে রোয়াচালা গ্রামের কয়েক শ' গ্রামবাসী শ্রীকাইল - নবীপুর সড়কের ধনপতিখোলায় মানববন্ধন করেন। রোয়াচালা গ্রামবাসীসহ আশে পাশের গ্রামের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ উক্ত মানববন্ধনে অংশ নেন ।
মানববন্ধনে গ্রামবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন," কাউছার মোল্লা রোয়াচালা গ্রামের বাসিন্দা সে সাদ্দামকে রাতে ফোন করে ডেকে নেন পরে চোর বলে মব সৃষ্টি করে গাছে সাথে বেঁধে কালারাইয়া গ্রামের সেলিম, মোস্তফা, রাব্বিসহ আরও কয়েকজন মিলে সাদ্দামকে পিটিয়ে হত্যা করে।
মানববন্ধনে নিহতের পিতা-মাতা ও স্ত্রী সন্তানেরা দাবি করেন সাদ্দামকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরে চোর বলে মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে দেয় । নিহতের শিশুপুত্র সাব্বির (১০) ও মেয়ে তমা (৮) পিতৃহত্যার বিচার দাবি করেন। তারা বলেন, আমার " আব্বুকে ফিরিয়ে দেন। না হলে যারা মেরেছে তাদের ফাঁসি দেন। "
স্হানীয়রা বলেন, কাউছার মোল্লা লাডুম শাহ মাজারের খাদেম। মাজারটি কালারাইয়া গ্রামের নিরিবিলি পরিবেশে বাউন্ডারি বেষ্টিত হওয়ায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন কাউছার মোল্লা মাজারে নানা অপকর্ম করে আসছেন। তাঁরা দাবি করেন এ হত্যাকান্ড কাউছার মোল্লার কারণে ঘটেছে।
মামলা ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, সাদ্দাম হোসেন চট্টগ্রামে খাতুনগঞ্জের মসলা দোকানে শ্রমিকের কাজ করতো, তার স্ত্রী মিনু আক্তার গার্মেন্টস কর্মী। নিহত সাদ্দাম দুই শিশু সন্তানের জনক।
চট্টগ্রাম থেকে মা-বাবাকে দেখতে ছোট মেয়ে তৈয়বা আক্তার তমাকে (৮) নিয়ে ৩ মে গ্রামের বাড়ি রোয়াচালা আসেন। ৯ মে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে রোয়াচালা বাজারের উদ্দেশ্য বেরিয়ে যান। রাতে ঘরে না ফেরায় পরদিন সকালে ( ১০ মে) জানতে পারেন পাশের গ্রাম কালারাইয়া সেলিম মিয়ার বাড়িতে গাছের সাথে বেঁধে চুরির মিথ্যা অভিযোগ এনে রাতভর নির্যাতন করে সাদ্দামকে হত্যা করা হয়েছে ।
এঘটনায় নিহতের পিতা ইরন মিয়া বাদী হয়ে ৩ জনকে নামীয় আরও অজ্ঞাতসহ আসামী করে বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এবিষয়ে বাঙ্গরা বাজার থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, সাদ্দাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এজাহারভুক্ত ৩ জনকে আটক করে কুমিল্লা আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে। আসামী রাব্বি আহম্মেদ কোর্টে ১৬৪ ধায়ায় জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যার মূল কারণ উদ্ঘাটন করতে তদন্ত অব্যাহত।