শিরোনাম
◈ দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে ফের ‘মার্চ টু ঢাকা’: নাহিদ ইসলাম ◈ আজ রা‌তে পাকিস্তান থে‌কে বিশেষ বিমানে দুবাইয়ে যাবেন ‌ক্রিকেটার নাহিদ, রিশাদ ও বাংলাদেশি দুই সাংবাদিক ◈ শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে সিরিজ জিতে দেশে ফিরলো বাংলা‌দে‌শের যুবারা ◈ উত্তরায় মহাসড়ক অবরোধ করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি ছাত্র-জনতার, ঘণ্টাব্যাপী যানজট ◈ বিভাজন নয় ঐক্য, প্রতিশোধ নয় ভালোবাসা—গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের ◈ আইপিএল আয়োজনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে আরব আমিরাত ◈ ভারত আসবে না বাংলাদেশ সফরে, হবে না এশিয়া কাপও ◈ এপ্রিলে  ১০১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করেছে বিজিবি ◈ ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়: সারজিস আলম ◈ জনআকাঙ্খা ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের বিষয়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জনতা পার্টি বাংলাদেশের

প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৪:২১ দুপুর
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৪:২১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যত্ন নেই ঘোড়ার, বিবেচনা কেবল জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবেই 

অপূর্ব চৌধুরী: [২] আধুনিকতার মাঝে এখনো টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী টমটম গাড়ি। বংশ পরিক্রমায় অনেকেই টমটম চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও ন্যুনতম যত্ন নেওয়া হয়না ঘোড়ার৷ একমাত্র জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবেই বিবেচিত হওয়ায় অমানবিক আচরণ করা হয় প্রাণীটির ওপর৷ 

[৩] সঠিক পরিচর্যার ব্যবস্থা না থাকায় ধীরে ধীরে অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে ঘোড়া৷ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই কারোই। ১৮৩০ সালে পুরান ঢাকায় সর্বপ্রথম ঘোড়ার গাড়ি অর্থাৎ টমটমের প্রচলন শুরু হয় বলে জানা যায়। জমিদারি বাহনের পাশাপাশি এটি সেসময় আর্মেনীয়দের ব্যবসার মাল টানার কাজেও ব্যবহৃত হত। নবাবি শাসনামলেও ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন থাকে। এরপর ধীরে বাড়তে থাকে ঘোড়ার গাড়ির জনপ্রিয়তা। বর্তমানে নবাবি বা জমিদার শাসন না থাকলেও পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের সাথেই মিশে আছে এই যানবাহনটি৷ 

[৪] তবে বাড়েনি এই প্রাণিটির প্রতি যত্ন। বরং বেড়েছে অবহেলা। চলন্ত ঘোড়ার পিঠে বার বার চাবুক দিয়ে আঘাত করা হয়। স্বাভাবিকের চেয়ে অত্যাধিক পরিমাণে ভারি জিনিস বহন করানো, চলার সময় মাঝেমধ্যে যান্ত্রিক যানবাহনের ধাক্কা খাওয়া এবং নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার না দেওয়া সহ বিভিন্নভাবে অযত্ন করা হচ্ছে ঘোড়াগুলোর। 

[৫] পুরান ঢাকার সদরঘাট থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত যাত্রী বহন করা হয় টমটম গাড়ি দিয়ে। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলাবাজার ওভারব্রিজের নিচ থেকে গুলিস্তানের  যাত্রী ডাকছেন কোচোয়ানরা। কোচোয়ান ও হেল্পার গাড়ি থেকে নেমে যাত্রী ডাকলেও ঘোড়ার গাড়ি রেখেছেন প্রচন্ড রোদের মধ্যে। ১৫ জন যাত্রীর আসন থাকলেও অধিকাংশ গাড়িতেই উঠানো হয়েছে ১৮-২০ জন যাত্রী। এর সাথে আবার ব্যাগও আছে। সদরঘাট থেকে গুলিস্তান আসা যাওয়ার সময় ঘোড়াগুলো গতি কমালে বা দাঁড়িয়ে গেলে চাবুক দিয়ে জোরে জোরে আঘাত করা হচ্ছে৷ বেশ কিছু ঘোড়ার পিঠে ক্ষতস্থান লক্ষ্য করা গেছে।

[৬] ঘোড়ার বিশ্রামের জন্য সময়ও নির্ধারণ করা হয়না সারাদিনে। আসা-যাওয়ার বিরতিতেই নামমাত্র খাওয়ানো হয় প্রাণীগুলোকে। তবে পুষ্টি বা প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য পরিমিত কিনা সেদিকে কোন খেয়ালই নেই সংশ্লিষ্টদের।

[৭] সদরঘাট থেকে গুলিস্তান যাওয়ার জন্য ঘোড়ার গাড়িতে উঠেছেন সজীব হোসেন। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে শখের বশে টমটমে উঠি। সবসময়ই দেখি ঘোড়াগুলোর নাজেহাল অবস্থা। সঠিকভাবে যত্ন নেয়া হয়না তা দেখলেই বুঝতে পারি। আবার মাত্রাতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয় তাদের ওপর। এসব আচরণ দেখে মনে হয় যেন ঘোড়াগুলো ইঞ্জিনচালিত যানবাহন।

[৮] মমিন উদ্দিন নামের এক কোচওয়ান বলেন, মালিককে প্রতিদিন জমার টাকা দিতে হয়। আমরা প্রথমত টার্গেটে থাকি কিভাবে বেশি বেশি যাত্রী পাওয়া যায় ও ট্রিপ দেওয়া যায়৷ তারপরও ঘোড়ার যত্ন নেওয়ার চেষ্টা থাকে আমাদের৷ তবে পরিস্থিতির জন্য এত সময় বা সুযোগ হয় না৷ 

[৯] এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. দোলন রায় বলেন, একটি ঘোড়া প্রতিদিন আট ঘণ্টার জন্য একটি গাড়িতে তার ওজনের ছয়গুন পর্যন্ত নিরাপদে টানতে পারে। কিন্তু সে জায়গায় ঘোড়াকে দিয়ে গাড়ির মত বড় বড় বোঝা টানানো হয়। যা অত্যন্ত নিষ্ঠুর কাজ। সকল আবহাওয়ায় ঘোড়াগুলোকে চলতে বাধ্য করা হয়। যার ফলে এদের শরীরবৃত্তীয় সমস্যা হয়। রাস্তায় চলাচলের সময় বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিষ্কাশিত ধোঁয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ায় ঘোড়ার শ্বসনতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

[১০] তিনি আরও বলেন, সারাদিন শক্ত পৃষ্ঠের উপর হাঁটার ফলে পায়ের দুর্বলতাজনিত সমস্যায়ও ভোগে এই প্রাণী। তাছাড়া অনেক সময় ঘোড়া না নড়লে এটিকে বেত্রাঘাত করা হয়। আসলে ঘোড়া নড়াচড়া করেনা কারণ তার নিউরন থেকে সিগন্যাল দিতে থাকে যে তার নির্দিষ্ট পরিমাণ বলের চেয়ে গাড়ির বল বেশি। ঘোড়াকে পরিচর্যা করতে হলে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে এবং এর শরীর পরিষ্কার রাখতে হবে। খুরগুলোর দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কোনভাবেই মাত্রাতিরিক্তভাবে খাটানো যাবেনা।

প্রতিনিধি/একে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়