ঢাকার পাশের চার নদী তুরাগ, টঙ্গীখাল, বালু এবং শীতলক্ষ্যা ঘিরে নতুন পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে নদীগুলোর গতিপথ পুনরুদ্ধার করে পানির গুণগতমান বাড়ানো এবং নদীপথের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি নদী প্রবাহের সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশগত অবস্থার উন্নয়ন এবং টেকসই নগর ও ভূমি ব্যবস্থাপনা করা হবে। এজন্য একটি পরিকল্পনা ও প্রকল্প তৈরি করতে প্রস্তুতিমূলক সমীক্ষা করবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এমন লক্ষ্য সামনে রেখে ‘প্রজেক্ট প্রিপারেটরি স্টাডি ফর মেট্রো ঢাকা ওয়াটার সিকিউরিটি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে তিন কোটি ৫৩ লাখ এবং বৈদেশিক অনুদান থেকে ১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। গত ২১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেখানে চারটি বিষয়ে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, একটি বড় প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের জন্য প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। পিইসি সভায় গুরুত্বের দিক বিবেচনা করে এটি এডিপির অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় যুক্ত করার পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সভার সিদ্ধান্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে অনুমোদনের সুপারিশ দেওয়া হয়। এই সমীক্ষা অনুসারে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি বড় প্রকল্প নেওয়া হবে। এরপর ফেইজভিত্তিক মেগা প্রকল্প হবে। অর্থাৎ নদীগুলো পুনর্জীবিত করতে যা যা করা দরকার সবই করা হবে। প্রস্তুতিমূলক এ প্রকল্পটি ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, পিইসি সভায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ড. রবিন কুমার বিশ্বাস প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, টঙ্গী খাল, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে ঘেরা। ঐতিহাসিকভাবে এসব নদী শহরের বাণিজ্য পরিবহণ, সেচ ও অন্যান্য কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই নদীগুলো নগরীর প্রাণকেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হয়ে এলেও বর্তমান বিভিন্ন উৎস থেকে সৃষ্ট ভারী দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত। এসব নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় টেক্সটাইল ও ডায়িং মিলসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব শিল্পের অপরিশোধিত ও ভারী ধাতু এবং রাসায়নিক বর্জ্য সরাসরি নদীতে মিশে যাচ্ছে। পাশাপাশি ঢাকা শহরের আবাসিক ও পৌর বর্জ্য, জাহাজ ভাঙার বর্জ্য, দখল ও মাটিসহ নানা কারণে নদীর প্রবাহ নষ্ট করছে। এছাড়া নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন, বিওডি, সিওডি, টোটাল এ্যালকালিনিটি এবং টারবিডিটি ইত্যাদি প্যারামিটার ইনভারমেন্টাল কনজারভেশন রুলস-২০২৩ এর মান থেকে অনেক বেশি। বর্ষায় পানির মান কিছুটা উন্নত হলেও শুষ্ক মৌসুমে পানির পরিমাণ কম থাকায় দূষণের মাত্রা অনেক বেশি বেড়ে যায়। ফলে নদীগুলো পুনরুদ্ধার করে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। বহুমুখী ও সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রাণপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সেচ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব মহা. এনামুল হক বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে পরামর্শকদের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় এক্সপোজার ভিজিটের জন্য সাত লাখ ২০ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া উইকে ভ্রমণের জন্য রাখা হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টাকা। কিন্তু এসব ব্যয় পরামর্শক খাত থেকে বাদ দিয়ে পৃথক অঙ্গ হিসাবে ইস্টিমেট কস্ট হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে এসব ভিজিটে কোন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা সংস্থার প্রতিনিধি অংশ নেবেন তার বিস্তারিত বিবরণ টিএপিপিতে (টেকনিক্যাল প্রজেক্ট প্রপোজাল) ছক আকারে সংযুক্ত করতে হবে।
পিইসি সভায় দেওয়া চারটি সুপারিশ হলো-প্রথমত, প্রকল্পটির নাম কিছুটা পরিবর্তন করে চারটি নদীর (তুরাগ, টঙ্গী খাল, বালু এবং শীতলক্ষ্যা) নাম যুক্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত,পরামর্শকদের জন্য ভ্রমণ ব্যয় আলাদা করে দেখাতে হবে। তৃতীয়ত, প্রস্তাবিত প্রকল্পে পরামর্শকদের জন্য দুটি গাড়ি ভাড়া বাবদ ৭২ লাখ টাকা পরামর্শক খাত থেকে বাদ দিয়ে গাড়ি ভাড়ার জন্য পৃথক অঙ্গ যুক্ত করতে হবে। চতুর্থত, পরামর্শকদের দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বিশেষজ্ঞদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সুনির্দিষ্ট করতে হবে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করে সংশোধিত টেকনিক্যাল প্রকল্প প্রস্তাব দ্রুত পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে বলা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে। সূত্র: যুগান্তর