রাজধানীর শ্যামলীতে ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল থেকে আটক কয়েকজনকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া মতিঝিল এলাকায় বের করা ঝটিকা মিছিল থেকে আরও ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শ্যামলীর শিশু মেলার মোড় থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে আগারগাঁওয়ের দিকে যাওয়া শুরু করলে পুলিশ সেখান থেকে ৫ জনকে আটক করে। এরপর পেছন থেকে আওয়ামী লীগের আরেকটি দল ২৫-৩০টি মোটরসাইকেলে করে এসে কয়েকটি ককটেল ফাটিয়ে পুলিশের কাছ থেকে আটকদের টেনে-হিঁচড়ে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমাউল হক বলেন, শ্যামলী শিশু মেলার মোড়ে আমাদের বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের লোকজন মিছিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় ৫-৬ জনকে আটক করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে ২৫-৩০টি বাইক দিয়ে ব্যাকআপ টিম হিসেবে কিছু লোকজন আসে। সে সময় ওই ব্যাকআপ টিম থেকে একটি মোটরসাইকেলসহ ৬ জনকে আটক করা হয়।
এ বিষয়ে ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, শ্যামলী শিশু মেলার মোড়ে প্রথমে কিছু নেতাকর্মী জড়ো হয়। পরবর্তীতে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫ জনকে তাৎক্ষণিক আটক করে। পরবর্তীতে মোটরসাইকেলযোগে আরও নেতাকর্মীরা আসে। পরে পুলিশ সদস্যরা গিয়ে তাদের ধাওয়া দিলে একটি মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, আটককৃত নেতাকর্মীদের ছিনিয়ে নিতে পারেনি, তবে অনেক চেষ্টা করেছিল।
মতিঝিলে আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে গ্রেপ্তার ৩: এদিকে সোমবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলের দিলকুশা এলাকায় আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয় বিএনপিকর্মীরা। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে মতিঝিল শাপলা চত্বরে ফের মিছিল করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার শাহরিয়ার আলী বলেন, শাপলা চত্বর এলাকায় মিছিলের প্রস্তুতি নেয়ার সময় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাবেক মেয়রসহ আওয়ামী লীগের আরও ১২ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার: এদিকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের আরও ১২ নেতাকর্মীকে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আছেন গফরগাঁও পৌরসভার সাবেক মেয়রও। সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে ডিবি। মঙ্গলবার ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এই তথ্য জানান।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার ৫ নং বুড়া মজুমদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ইউনুছ আলী ওরফে ইলিয়াস, গাজীপুর মহানগরের আওয়ামী যুবলীগ নেতা শামীম ওসমান, ২৬ নং ওয়ার্ড ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুল ইউনিট ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদ দেওয়ান শিপু, ২৬ নং ওয়ার্ড ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুল ইউনিট ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক জামিল হোসেন, আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এবং ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও পৌরসভার সাবেক মেয়র এডভোকেট কায়সার আহম্মদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৫৩ নং ওয়ার্ড কৃষক লীগের সহ-সভাপতি মো. সোলেমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ৬৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ইকরামুল হাসান রুবেল, টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, বাসাইল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং বাসাইল উপজেলার চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম, ক্যান্টনমেন্ট থানার বারনটেক ইউনিটের শ্রমিক লীগের সভাপতি ও সম্পাদক মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম ওরফে জুয়েল খাঁ, ঢাকা মহানগর ৩৫ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সজিব খান, ঢাকা মহানগর দারুসসালাম থানা ৬ নং ইউনিট ও ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান ও কালিয়াকৈর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হিরু মিয়া।
ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, গফরগাঁও পৌরসভার সাবেক মেয়রসহ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের আরও ১২ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।