শিরোনাম
◈ জুলাই অভ্যুত্থানের সেই ঐক্য কোথায়? ◈ ব্রিটিশদের ‘নাকানিচুবানি’ দিতে ইরানের এক দশকের ‘ছায়া যুদ্ধ’: যেভাবে চলছে যুক্তরাজ্যের ভেতরে গোপন তৎপরতা ◈ চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার জাকির হোসেন বরখাস্ত, আরও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ◈ এবার অঝোরে কাঁদলেন মিসাইল ম্যান কিম জং উন (ভিডিও) ◈ জুলাই নিয়ে ‘আপত্তিকর’ ফেসবুক পোস্ট: পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রদের অবরোধ-বিক্ষোভ ◈ নতুন উচ্চতায় রেমিট্যান্স: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের সর্বোচ্চ প্রবাহ ◈ ডলারের দরপতনে রেকর্ড, ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় পতনে বিশ্ববাজারে আস্থার সংকট ◈ “৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই চব্বিশের যোদ্ধাদেরও জাতি ভুলবে না” — তারেক রহমান ◈ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান খালেদা জিয়ার ◈ শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে বুধবার  সি‌রি‌জের প্রথম ওয়ানডে ম‌্যা‌চে  মু‌খোমু‌খি  বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ২৫ জানুয়ারী, ২০২২, ০২:৩৬ রাত
আপডেট : ২৫ জানুয়ারী, ২০২২, ০২:৩৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেন কাদের সিদ্দিকী

অনলাইন ডেস্ক: ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি। টাঙ্গাইল তথা স্বাধীন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দিনেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট অস্ত্র জমা দেন মুক্তিযুদ্ধে কাদেরীয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। বিন্দুবাসিনী স্কুল মাঠে বাহিনীর পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র তুলে দেন তিনি।

কাদের সিদ্দিকী তাঁর লেখা স্বাধীনতা ৭১ গ্রন্থের ৬০৬ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘অস্ত্র হস্তান্তর’ শিরোনামে সেদিনের বিষয়াবলী লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি লিখেছেন ঘড়ির কাঁটা ১১টা ৩০ মিনিটের ঘরে। বঙ্গবন্ধুকে বিন্দুবাসিনী স্কুল মাঠে অস্ত্র জমা দেওয়ার মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হলো। অস্ত্র জমা দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা হিসাবে নানা ধরনের হাজার দশেক হাতিয়ার বিন্দুবাসিনী স্কুল মাঠে সারি করে দাঁড় করা ছিল। তিন হাজার সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সামনে মাঠের একপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ও আমি মঞ্চে উঠতেই প্যারেড কমান্ডার মেজর আব্দুল হাকিম মাঠে দাঁড়ানো মুক্তিযোদ্ধাদের সতর্ক করল এবং সশস্ত্র অভিবাদন জানাল। পরে আনুষ্ঠানিকতা সেরে হাঁটু গেড়ে বহুদিনের বহু লড়াইয়ের স্মৃতিবিজড়িত স্টেনগানটি বঙ্গবন্ধুর পায়ের সামনে রাখলাম। ২৪ জানুয়ারির ঐতিহাসিক দিনের চিত্রগুলো মুক্তিযোদ্ধাগণ আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক পুত্র কাদের সিদ্দিকী ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুহাম্মদ আবদুল আলী সিদ্দিকী ও মাতার নাম লতিফা সিদ্দিকী। পৈত্রিক নিবাস টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ী ইউনিয়নের ছাতিহাটী গ্রামে।

ছোটবেলা থেকেই কাদের সিদ্দিকী প্রতিবাদী, সাহসী ও অন্যায়ের সঙ্গে আপসহীন। তাঁর ডাক নাম বজ্র। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় তিনি ‘বাঘা সিদ্দিকী’ হিসেবেও খ্যাতিমান।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইল তথা দেশকে স্বাধীন করার দৃঢ় প্রত্যয়ে প্রায় ১৭ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও বিপুলসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকের সমন্বয়ে কাদের সিদ্দিকী গঠন করেন একটি গেরিলা বাহিনী। কাদের সিদ্দিকী বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হওয়ায় বাহিনীটি ‘কাদেরীয়া বাহিনী’ নামে সুপরিচিত। কাদেরীয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা ১১নং সেক্টরে কমপক্ষে তিন শতাধিক ভয়াবহ সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং প্রায় ৩০০০ হানাদার সদস্য হত্যা করেন। কাদের সিদ্দিকী নিজে ৩০টিরও বেশি সম্মুখযুদ্ধে সরাসরি নেতৃত্ব দেন। ফলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীসহ আলবদর, আলশামস, রাজাকারদের নিকট আতংকের নাম ছিল কাদেরীয়া বাহিনী। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর কাদেরীয়া বাহিনীর সহায়তায় কালিহাতী উপজেলার পৌলীতে ভারতীয় ছত্রীসেনা অবতরণ করে। ১১ ডিসেম্বর কাদেরীয়া বাহিনীর নেতৃত্বে টাঙ্গাইল হানাদারমুক্ত হয়। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য কাদের সিদ্দিকীকে বঙ্গবন্ধুর সরকার বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত করে। খেতাব নং-৬৮ (গণবাহিনী), সেক্টর নং- ১১।

কাদের সিদ্দিকী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা সপরিবারে নিহত হওয়ার পর তিনি হত্যার প্রতিবাদে সশস্ত্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। এজন্য তৎকালীন সরকারের রোষানলে পড়ে তিনি দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। দীর্ঘদিন ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন। বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমকে বঙ্গবন্ধু বাকশাল সরকারের টাঙ্গাইলের গভর্নর নিযুক্ত করেন। ১৯৯৬, ২০০১ সালে তিনি টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখিপুর) আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ থেকে বেড়িয়ে গিয়ে কাদের সিদ্দিকী নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন রাজনৈতিক দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা প্রতীক)। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি সর্বদাই নিবেদিত।

রাজনীতিবিদের পাশাপাশি তিনি একজন সুলেখক। বিভিন্ন পটভূমিতে তাঁর লেখাগুলো পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ করেছেন তিনি। তার রচিত ‘স্বাধীনতা ৭১’ গ্রন্থটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং কাদেরীয়া বাহিনীর প্রামাণ্য দলিল।

কাদের সিদ্দিকী পারিবারিক জীবনে নাসরিন সিদ্দিকীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর এক ছেলে দ্বীপ সিদ্দিকী এবং দুই মেয়ে কুড়ি সিদ্দিকী ও কুশি সিদ্দিকী। তার বড় ভাই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী খন্দকার মোখলেছুর রহমান (মণি খন্দকার) বলেন ২৪ জানুয়ারি সত্যি আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। কেননা আমরা যে মহান নেতার ডাকে প্রিয় মাতৃভুমিকে স্বাধীন করতে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলাম, আবার সেই নেতার পদতলে আমাদের সবার পক্ষে কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম অস্ত্র জমা দেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন দেশে ফিরেন। এরপরেই রাজধানী ঢাকার বাইরে প্রথম টাঙ্গাইলে আসেন। দিনটি বিভিন্ন আঙ্গিকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আর সেদিনের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এ দিনটিকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি এবং পালন করার দাবি করছি। যাতে নতুন প্রজন্ম জানতে পারে।

মুক্তিযোদ্ধাগণ বলেন, বাংলাদেশ নামের একটি ভূখন্ড যতদিন পৃথিবীর মানচিত্রে থাকবে ততদিন দেশে-বিদেশে স্বর্ণাক্ষরে জ্বলজ্বল করবে কাদেরীয়া বাহিনীর নাম ও ২৪ জানুয়ারির অস্ত্র সমর্পণের ইতিহাস।

সূত্র: কালের কণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়